চাকরি হারানোর আতঙ্কে দারুল ইহসানের সনদধারী ৫০ হাজার শিক্ষক-গ্রন্থাগারিক - দৈনিকশিক্ষা

চাকরি হারানোর আতঙ্কে দারুল ইহসানের সনদধারী ৫০ হাজার শিক্ষক-গ্রন্থাগারিক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সনদ বিক্রিসহ নানা অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক ও সহকারি গ্রন্থাগারিক পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। এরা সবাই সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অশিক্ষক পদে চাকরি করছেন।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া চূড়ান্ত এ রায়ের ফলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া অন্যান্য শর্ত বহাল থাকল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে চরম বিপাকে পড়বেন দারুল ইহসান থেকে পাস করা সনদধারীরা। বিশেষ করে ২০০৬ সালের পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-সাস্টার্স, বিএড, এমএড ও লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিপ্লোমা করা প্রায় ৫০ হাজার সনদধারী পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

এর আগে মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, সনদ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে দারুল ইহসানের পক্ষে হাইকোর্টে ১২টি রিট করা হয়। এসব রিটের শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট দারুল ইহসান বন্ধের রায় দেন। রায়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০০৬ সালের পর দারুল ইহসানের সনদধারীদের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলেও মূলত এর পরিণতি ভোগ করবেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের ফলে দারুল ইহসান থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) ও লাইব্রেরি সায়েন্সের ডিপ্লোমা এবং এলএলবি সনদধারীরা সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়বেন। বিএড সনদ দিয়ে যারা চাকরিতে উচ্চতর গ্রেড পেয়েছেন, তাদের সেই গ্রেড টিকবে না। চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার হাজার লাইব্রেরিয়ান ও সহকারি লাইব্রেরিয়ান, যারা দারুল ইহসান থেকে লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিপ্লোমা নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় দেড় হাজার এমপিও পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাদের এমপিও না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। কারণ, গত সপ্তাহে লাইব্রেরিয়ান পদে ৭৩৯ জনকে এমপিও দেয়ার নির্দেশ দিলেও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাদের প্রায় সবাই বিতর্কিত দারুল ইহসান ও ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সনদে এমপিওভুক্তির আবেদন করেছেন। ঈশা খাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত শিক্ষার্থীর বাইরেও শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের একজন পরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, অনেক আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭৩৯ জনের তালিকা ধরে এমপিও দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাদের প্রায় সবাই দারুল ইহসান থেকে লাইব্রেরি সায়েন্সে ডিপ্লোমা সনদ দিয়ে আবেদন করেছেন। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে হাইকোর্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া ২০১১ সাল থেকে দারুল ইহসানের সনদধারীদের এমপিও দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এখন সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। ফলে দারুল ইহসানের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার। এ প্রক্রিয়া আবার নতুন করে শুরু করব।’

২০১৩ সালের পর থেকে দারুল ইহসানের এলএলবি সনদধারীদের বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। বার কাউন্সিল ওই সময় জানায়, দারুল ইহসানের একেকজনের সনদে একেকজনের স্বাক্ষর থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। তারা বলেন, একই বছরের সনদ, কিন্তু একেকজনের সনদে একেকজনের স্বাক্ষর, এতে তারা বিভ্রান্তিতে পড়েন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সনদ যাচাই করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। ডিআইএর সূত্রমতে, ২০১১ সালের পর দারুল ইহসানের কোনো সনদ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ওই বছরের পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু দারুল ইহসানের সাড়ে তিন হাজার সনদ বাতিল ও পাওয়া উচ্চতর গ্রেড বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। ডিআইএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরিদর্শন করতে গিয়ে এই সাড়ে তিন হাজার সনদ ধরা পড়েছে। দারুল ইহসানের সনদ নিয়ে চাকরি করছেন বা বিএড সনদ দিয়ে গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে, এমন শিক্ষক আছেন অর্ধলক্ষাধিক।

২০০৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদ বাতিলেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সনদধারীরা। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের দায় তাদের নিতে হবে কেন? হাফিজ উদ্দীন নামের সাতক্ষীরার এক লাইব্রেরিয়ান বলেন, ‘সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ইমেজ সংকটে পড়েছি। তার চেয়ে বড় সংকট চাকরি হারানোর ভয়। যেখানে যাই, সেখানেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। একই রকম বিপদে ২০০৬ সালের পর বিএড ও লাইব্রেরি সায়েন্সের ডিপ্লোমাধারীরা।’

হাফিজ বলেন, এরই মধ্যে সহকারি গ্রন্থাগারিকরা শিক্ষক-নন বলে গেজেট জারি করা হয়েছে। এই গেজেটের বিরুদ্ধে রিট করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।

অপরদিকে গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে কাগজপত্র অনলাইনে সাবমিট করার শেষদিন। নওগাঁ,  রাজবাড়ী, পাবনা, ঝালকাঠীসহ কয়েকটি জেলার শিক্ষা ও উপজেলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা ছাড়া সহকারি গ্রন্থাগারিকদের কাগজপত্র ও আবেদন জমা দিচ্ছেনা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে দারুল ইহসান কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ার পর বিএড ও লাইব্রেরি সায়েন্স ডিগ্রি নেওয়ার হিড়িক পড়ে। কারণ, সাধারণ একজন শিক্ষক বিএড ডিগ্রির সনদ জমা দেওয়ার পর তার বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়। এতে তার বেতন বাড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

ডিআইএর একজন উপপরিচালক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার সময় দারুল ইহসানের সনদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকি।  তবে, দু:খজনক হলো বিতর্কিত হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধিরা নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থেকে দারুল সনদধারীদের প্রতিবাদ করেন না। যার ফলে হাজার হাজার দারুল সনদধারী নিয়োগ পেয়েছেন গত কয়েকবছরে।

তিনি বলেন, অধিদপ্তরের এমপিওভুক্তির সভায় উপস্থিত থাকেন ডিআইএর উপ-পরিচালক মো: রাশেদুজ্জামান।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056838989257812