রাজধানীর মিরপুরে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই কলেজছাত্রীকে পেটানোর ঘটনার ১০০ দিন পরও এ-সংক্রান্ত মামলার চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচিত ঘটনাটির সার্বিক তদন্ত শেষ, চার্জশিট দেওয়ারও প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু বখাটের পিটুনিতে আহত দুই বোনের চিকিৎসা সম্পর্কিত সনদ হাতে না পাওয়ায় চার্জশিট দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বাদীর অভিযোগ, পুলিশের গড়িমসিতেই আটকে আছে চার্জশিট।
গত বছরের ১৯ অক্টোবর মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের বিসিআইসি কলেজের সামনে প্রতিষ্ঠানটির একাদশ শ্রেণির ছাত্রী যমজ দুই বোনকে মারধর করে বখাটে বাবু। এতে ছোট বোন আসওয়াদ হাবীব জিমের বাম পা ভেঙে যায়। কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান বড় বোন ফারিহা হাবীব মীম। পরে তাদের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নির্যাতিত দুই ছাত্রীর বাবা জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) প্রশিক্ষক আহসান হাবীব বলেন, ঘটনার কয়েকদিন পরই মূল অভিযুক্ত জীবন করিম বাবুকে গ্রেফতার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে। তার পরও প্রায় সাড়ে তিন মাসে মামলার তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা মেডিকেল সার্টিফিকেট হাতে না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন। অথচ পঙ্গু হাসপাতাল থেকে সেই সার্টিফিকেট আনার ব্যাপারে পুলিশের কোনো আগ্রহ নেই। আহসান হাবীব জানান, তিনি নিজে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, তার মেয়েদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ফাইলটি গায়েব হয়ে গেছে। কারা কী উদ্দেশ্যে হাসপাতাল থেকে ফাইলটি সরিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলী থানার এসআই অনুজ কুমার সরকার বলেন, গড়িমসির অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য এ পর্যন্ত তিনবার পঙ্গু হাসপাতালে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি আহসান হাবীব নিজে নিয়ে গেছেন। ব্যস্ততার কারণে হয়তো হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা সার্টিফিকেট দিতে পারছেন না। কিন্তু সার্টিফিকেট ছাড়া চার্জশিটও দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ মামলা একটি হলেও চার্জশিট হবে দুটি। একটি উত্ত্যক্তের ঘটনায়, অন্যটি শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাত করার কারণে। দুই চার্জশিটের ভিত্তিতেই আসামির বিচার হবে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, পেশাগত নানা ব্যস্ততার কারণে তিনি মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়ার সুযোগ কম পান। এসব ক্ষেত্রে বাদীরও তৎপর ভূমিকা দরকার হয়। কিন্তু তার কাছ থেকে তেমন সহায়তা পাওয়া যায়নি।
এদিকে আহসান হাবীব দাবি করেন, সব রকমের সহায়তার জন্যই তিনি সবসময় প্রস্তুত। তার মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সঙ্গত কারণেই তিনি অপরাধীর সাজার জন্য সোচ্চার। অথচ তিনিই তদন্তে সহায়তা করবেন না, এটা হাস্যকর অভিযোগ।
তিনি আরও জানান, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার পরও তার দুই মেয়েকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়। এখন তারা আবার কলেজে যাচ্ছে। তবে বেশি হাঁটলে জিমের ভাঙা পায়ে ব্যথা হয়। কয়েকদিন আগে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ার কারণে ওষুধ খেতে হয়।
দুই বোনকে পেটানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জীবন করিম বাবুকে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় শাহ আলী বেড়িবাঁধ এলাকার নবাবেরবাগ উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার লুৎফর রহমান বাবুও জামিনে মুক্তি পান।