ছাত্রলীগের হুমকির পর রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ছেড়েছেন অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ। শুধু তাই নয়, এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে চাকরি থেকেই অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গত রোববারের (৫ই ফেব্রুয়ারি) পর থেকে তিনি আর কর্মস্থলে যাচ্ছেন না।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এক মাস ছয় দিন বন্ধ রাখার পর গত শনিবার(৪ই ফেব্রুয়ারি) খুলে দেওয়া হয় আইএইচটি। কিন্তু ছাত্রলীগের বিবাদ না মিটিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় তাদের তোপের মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষকে অতীতের সব সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়। অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি।
আইএইচটি সূত্রে জানা গেছে, এ হুমকি দেওয়ার পর দিন থেকে অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ আর তাঁর কর্মস্থলে আসেননি। গত বুধবার(৮ই ফেব্রুয়ারি) এসে শিক্ষক-কর্মচারীদের বলে গেছেন তিনি আর আসবেন না।
যোগাযোগ করা হলে গতকাল শুক্রবার(১০ই ফেব্রুয়ারি) অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, তিনি আজীবন মানুষের সেবা করে এসেছেন। তিনি যা করেছেন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যে ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয়েছে তা তিনি একা করেননি। প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কাউন্সিল করেছে। তাহলে কেন তিনি এভাবে অপমানিত হতে যাবেন। তিনি দুঃখ করে বলেন, তাঁর গায়ে হাত দেওয়ার শুধু বাকি রয়েছে। তা ছাড়া সব ধরনের অপমানই তাঁকে করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তিনি চাকরিটাই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বুধবার(৮ই ফেব্রুয়ারি) গিয়ে শিক্ষকদের ডেকে তিনি এ কথাই বলে এসেছেন। এখন কাগজপত্র তৈরি করছেন। একেবারে পিআরএলএ চলে যাবেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর আইএইচটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এক কর্মী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হয়। একাডেমিক কাউন্সিল শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নয় ছাত্রকে বহিষ্কার করে। রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বিষয়টি মীমাংসা করার কথা বলেছিলেন। তাঁর ঘোষণা অনুয়ায়ী মীমাংসা না করেই প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় তিনি গত রোববার(৫ই ফেব্রুয়ারি) আইএইচটি ক্যাম্পাসে যান। তাঁর দাবি ছিল, অতীতে এই প্রতিষ্ঠানে আরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নিয়ে শুধু একটি পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এ জন্য তিনি অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ গতকাল বলেন, অধ্যক্ষ আসছেন না এটা তিনি শোনেননি। আর সেদিনের পর তাঁরা আর ক্যাম্পাসে যাননি। এমনকি অধ্যক্ষকে ফোনও করেননি। তাঁর দাবি, এখন আর কোনো সমস্যা নেই। প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান চলবে। তাঁরা চান না প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকুক। সেদিন অধ্যক্ষকে তেমন কিছু বলা হয়নি। একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এখন অধ্যক্ষ কী মনে করে আসছেন না, তা তিনি বলতে পারবেন না।