বরগুনার পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেতার হাতে ওই কলেজের দুই প্রভাষক লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক প্রভাষককে একাদশ শ্রেণির ক্লাস না নিতে এবং অন্য প্রভাষককে পরীক্ষায় ‘ডিস্টার্ব’ না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৃথকভাবে ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে এবং এর আগের দিন রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে।
ওই দুই নেতা হলেন পাথরঘাটা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। আর লাঞ্ছনার শিকার দুই প্রভাষক হলেন মো. মিলন মিয়া ও মো. সামসুল আলম।
পাথরঘাটা কলেজশিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, ‘মিলন স্যারের বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষক পরিষদের কয়েকজন সভায় বসেছিলাম। ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান শেষে ওই বিষয়টি নিয়ে আবারও বসা হবে। তবে সামসুল আলম স্যার তাঁর ঘটনাটি হজম করায় ওই বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’
পাথরঘাটা কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাষক মো. মিলন সোমবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে একাদশ শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান ক্লাস নিতে যান। ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা শেষে তিনি বোর্ডে অঙ্ক কষছিলেন। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন ওই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। শ্রেণিকক্ষের প্ল্যাটফর্মের ওপর উঠে রুহি আনান দানিয়াল ও সাদ্দাম হোসেন চোখ রাঙিয়ে প্রভাষকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি করছিলেন। একপর্যায়ে তাঁরা জানতে চান, একাদশ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন কেন? এ শ্রেণিতে ক্লাস নেবেন না বলেও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা খারাপ অঙ্গভঙ্গি করেন। পরে জোর করে ওই প্রভাষককে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে হাততালি দিয়ে তাঁরা উল্লাস করেন।
আর আগে রোববার বেলা দেড়টার দিকে কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছিল। ওই পরীক্ষায় এক ছাত্র পাশের আরেক ছাত্রের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। এতে প্রভাষক মো. সামসুল আলম ওই ছাত্রকে নিষেধ করেন। এতেও তিনি শুনছিলেন না। পরে ওই শিক্ষক তাঁকে কটু কথা বলে বকা দেন। এ বকা দেওয়ায় ওই ছাত্র উত্তেজিত হয়ে মুঠোফোনে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে ডেকে আনেন। এ সময় পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলে ওই নেতাসহ কয়েকজন ঢুকে প্রভাষকের কাছে জানতে চান তিনি কেন কটু কথাসহ ছাত্রদের ডিস্টার্ব করছেন। আর কাউকে ডিস্টার্ব করবেন না বলেও তাঁকে শাসিয়ে দেন তাঁরা।
মো. মিলন মিয়া বলেন, ‘এভাবে আমাকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ায় আমি হঠাৎ করে হতভম্ব হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে বসে থাকি। পরে স্বাভাবিক হয়ে অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঘটনা জানিয়েছি।’
তবে মো. সামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কলেজ জাতীয়করণ আন্দোলনে শিক্ষক মিলন অসহযোগিতাসহ এ কলেজের তথ্য ফাঁস করেছে। তাই তাকে ক্লাস নিতে নিষেধ করেছি।’ তবে সামসুল আলমের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহ পর আমি অবসরে যাচ্ছি তাই এ বিষয় আর মাথা ঘামাতে চাচ্ছি না। তবে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদকে বিষয়টি জানানো হবে, তিনি যা করেন।’