বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগকর্মীরা। সোমবার কলেজের গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনার প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রীর স্বামীকে কলেজের হিসাব শাখায় আটকে রেখে নির্যাতন করে তারা। পরে ওই ছাত্রী ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেয় পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিএম কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সবুজের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কতিপয় নেতাকর্মী ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। কিছুদিন আগে ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। আর বিষয়টি তিনি তাঁর স্বামীকে জানান। গতকাল ওই ছাত্রী স্বামীকে নিয়ে কলেজে জরুরি কাজে আসেন। এ সময় গ্রন্থাগারের সামনে ছাত্রলীগকর্মী মানিক, নোয়েলসহ আরো কয়েকজন ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মারধর করে। একপর্যায়ে তাঁর সেলফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর সহপাঠীদের সহযোগিতায় কলেজের কমনরুমে আশ্রয় নেন ওই ছাত্রী। এ সময় ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁর স্বামীকেও ধাওয়া করে কলেজের হিসাব শাখায় আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে কলেজে কর্তব্যরত গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ওই ছাত্রী ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
লাঞ্ছনার শিকার ওই ছাত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা উজ্জল রাজনৈতিকভাবে ভয় দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করার চেষ্টা করছিল। আর এ জন্য আমাকে মানিক ও নোয়েলকে দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। আমি বিবাহিত বলার পরও বিরক্ত করত উজ্জলের দুই সহযোগী মানিক ও নোয়াল। পরে বিষয়টি আমার স্বামীকে জানাই। ভয়ে আমি কলেজে আসা বন্ধ করে দিই। কিন্তু সোমবার কলেজে জরুরি কাজ ছিল। তাই স্বামীকে নিয়ে কলেজে আসি। এ সময় দুজনকেই মারধর করে তারা।’
এ বিষয়ে ওই ছাত্রীর স্বামী জানান, ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তাঁকেও ধাওয়া করে ছাত্রলীগকর্মীরা। পরে তিনি কলেজের হিসাব শাখায় আশ্রয় নিলে মানিক ও নোয়েল সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করে। তিনি বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষকে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগকর্মী মানিক বলেন, ‘ওই ছাত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা উজ্জল ভাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ওই ছাত্রী উজ্জল ভাইকে এড়িয়ে চলা শুরু করেছে। উজ্জল ভাই তার কাছে বেশ কিছু টাকাও পান। আমরা ওই ছাত্রীকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু কথা না শোনায় ওই ছাত্রীকে ধমকানো হয়। কিন্তু তার সঙ্গে যে ছেলে এসেছিল তাকে বহিরাগত ভেবে আমরা মেরেছি।’
এ ব্যাপারে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার বলেন, ‘মানিক ছাত্রলীগের নব্য কর্মী। সমপ্রতি সে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের ছবি দিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যানার সাঁটিয়েছে। এই ঘটনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধ্যক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
কলেজে কর্তব্যরত গোয়েন্দা শাখার সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা উভয়কে উদ্ধার করেছি। এরপর মোটরসাইকেলে করে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি।’
কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক স ম ইমানুল হাকিম বলেন, ‘হিসাব শাখায় ডাকচিত্কার শুনে আমি সেখানে গিয়েছি। তখন এক যুবককে হিসাব শাখার কক্ষে কয়েক যুবক আটকে রেখেছিল। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তারা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’