অর্থের লোভ আর নেতা হওয়ার বাসনায় ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে ছাত্র সমাজ। আধিপত্য বিস্তারের এ সংস্কৃতিতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়া ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শীর্ষ নেতারাও। অনেক ক্ষেত্রে তারাও উস্কানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও। ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ, সমাজ বিজ্ঞানীরা।
চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৩১ মার্চ এম.বি.এ’র শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কে হবেন-তা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ। এক পক্ষ চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী হবেন প্রধান অতিথি। অন্য পক্ষ চেয়েছে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে প্রধান অতিথি করতে। এমনিতেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে এ দু’আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে গত কিছু দিন ধরে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চলে আসছিলো।
তাদের অনুসারী ছাত্রদের মধ্যেও ছিলো ক্যাম্পাস দখলের চেষ্টা। কারণ এ ক্যাম্পাস দখলে রাখলে প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ, গোলপাহাড় মোড়সহ আশ-পাশের এলাকা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকবে তাদের নিয়ন্ত্রণে।প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, ‘একবার ক্ষমতায় এলেই বিত্ত আসে। সে যোগ্য হোক আর অযোগ্য হোক। কেবলমাত্র গায়ের জোরে নেতা হতে পারলেই হলো।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার করতে পারলেই কোন না কোন ধরণের অনৈতিক সুযোগ সুবিধা তারা পেয়ে থাকে বা পেয়ে আসছে।’
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের অসহিষ্ণু মনোভাবে শিক্ষাবিদরাও অনেকটা উৎকণ্ঠিত। আর তারা মনে করেন, সামরিক শাসকেরা ছাত্রদের মধ্যে বিত্ত-বৈভব লাভের যে বীজ বুনে গেছেন এর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মকে।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আগেকার দিনে যারা রাজনীতি করতে তারা পড়াশুনা করে রাজনীতি করত। এখন পড়াশুনার রাজনীতি হয় না। এখন হয় গায়ের জোরে রাজনীতি।’
এক সময় শুধু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই শিক্ষার্থীদের সংঘাত ছিলো উল্লেখ করার মতো। কিন্তু এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সে ধারা থেকে বাদ যাচ্ছে না।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যত দিন পর্যন্ত ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হবে, ততদিন পর্যন্ত সংঘাতের এ ধারা চলবে বলে মনে করছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।