এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকেও একই সাথে কলেজের প্রভাষক হিসেবে ৬ শিক্ষক চাকরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা সবাই কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক।এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হয়েও তারা কিভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সেটাই এখন সর্ব সাধারণের মুখে মুখে।
বর্তমানে এই শিক্ষকরা বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও সরকারি প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে একজন আবার উচ্চ শিক্ষার নাম দিয়ে বতর্মানে বিদেশে অবস্থান করছেন। ফলে তারা কোন প্রতিষ্ঠানেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
গোপন সূত্রের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের পৌরনীতি বিষয়ের প্রভাষক মহররম হোসেন একই সাথে এমপিওভুক্ত বড়গাংদিয়া কলেজের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। যার এমপিও ইনডেক্স নং-২১৫৬৮২।
এছাড়া ওই কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়ের প্রভাষক মোফাজ্জেল হক খলিশাকুন্ডি কলেজে একই বিষয়ের এমপিওভুক্ত প্রভাষক হিসেবে কর্মরতম আছেন। তার এমপিও ইনডেক্স নং- ৩০৭৪৯৩৫। ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক মো. শরিফুল ইসলাম কর্মরত আছেন নাসির উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের অফিস সহকারী হিসেবে। তার এমপিও ইনডেক্স নং-৬১১৪৮৭, পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক ইসরাফীল হোসেন গোপালগঞ্জ জেলার ইসলামী ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের সরকারি প্রকল্পে কর্মরত আছেন, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক এবং ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মফিজুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী এমপিওভুক্ত জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।
অন্যদিকে জানা গেছে ওই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির আপন ভাগ্নে কলেজের রসায়ন বিভাগের একমাত্র প্রভাষক শাহারুল হক। তবে তিনি বর্তমানে কলেজে অনুপস্থিত। নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তাকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার নামে ছুটি দেয়া হয়েছে। ফলে রসায়ন বিষয়ে শিক্ষক না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কলেজের ছাত্রীরা।
এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. তৌফিকুর রহমান দৈনিক শিক্ষাকে জানান এ বিষয়ে তিনি এখ নপর্যন্ত কিছুই জানেন না। তাছাড়া এবিষয়ে তার কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। তবে তিনি স্বীকার করেন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কোনভাবেই একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ। এসময় তিনি তাৎক্ষণিক এবিষয়ে খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশস্ত করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, কলেজ পর্যায় সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। তবে এমপিওভুক্ত কোন স্কুলের শিক্ষক বা কর্মকর্তার একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এটা করে তবে তার বিরুদ্ধে বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে জানা গেছে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মহিলা কলেজটিকে সম্প্রতি জাতীয়করণের লক্ষ্যে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এই কলেজের অন্যান্য প্রভাষকদের সাথে এই পাঁচ প্রভাষককের নামের তালিকাও প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা দুই জায়গায় বিধি বহির্ভূতভাবে চাকরি করছেন বলেও ওই অভিযোগে জানা যায়। ফলে কোন প্রতিষ্ঠানেই ওই শিক্ষকরা মান সম্মতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
অপরদিকে স্থানীয় জনসাধারণ এই বেইনী কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষিত যুব সমাজ সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি পাচ্ছে না সেখানে বিধি বহির্ভূতভাবে দুই জায়গায় চাকরি করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শামসুদ্দিন জানান, অভিযোগটি খতিয়ে দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।