জঙ্গীবাদ হারাম : লাখো আলেমের ফতোয়া জারি আজ - দৈনিকশিক্ষা

জঙ্গীবাদ হারাম : লাখো আলেমের ফতোয়া জারি আজ

বিভাষ বাড়ৈ |

ধর্মের অপব্যখ্যা দিয়ে চলা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশে প্রথমবারের মতো লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া জারি হতে যাচ্ছে আজ। বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘একলাখ মুফতি, উলামা ও আইম্মার দস্তখতসংবলিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতোয়া’ প্রকাশ করবেন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগার ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

ফতোয়ায় সর্বসম্মতভাবে এক লাখ আলেম ও মুফতি ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও আত্মঘাতী হামলাকে হারাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সন্ত্রাসী, জঙ্গী কর্মকাণ্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না। লাখো আলেমের সম্মিলিত ফতোয়ায় ধর্মের সঙ্গে জঙ্গীবাদের যে সম্পর্ক নেই তা স্পষ্ট হবে। এতে সন্ত্রাস বহুলাংশে হ্রাস পাবে এবং মদদদাতারা হতোদ্যম হবে।

এদিকে ফতোয়া জারির পর তা পাঠানো হবে জাতিসংঘে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্র এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা ওআইসিতেও ফতোয়ার কপি আগামী ৩০ খণ্ডে প্রকাশ করে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত লাখো আলেমের ফতোয়ায় অংশ নিয়েছেন দেশের নারী আলেমরাও। প্রায় ১০ হাজার নারী আলেম স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার ব্যবস্থাপনায় গৃহীত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শান্তির ফতওয়ায়।

পুরুষ ও নারী মিলিয়ে মোট এক লাখ এক হাজার ৮৫০ জন আলেম ও মুফতির স্বাক্ষর সংবলিত ফতোয়ার ৩০ খণ্ডে বাইন্ডিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৯২ হাজার ৫৩০ পুরুষ আলেম-মুফতি এবং নয় হাজার ৩২০ জন নারী আলেম-মুফতি। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দেওবন্দ মাদ্রাসা ও দেশের অন্যতম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতীগণ।

উল্লেখযোগ্য আলেমদের মধ্যে রয়েছেন, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী, মুফতি আবদুল হালিম বোখারী, মুফতি মনসুরুল হক, আল্লামা সুলান জওক নদভী, আল্লামা আবদুর রহমান হাফেজ্জী। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর নামে ভাগ করে ২৬টি এবং শুধু নারী আলেমদের স্বাক্ষরে ৪টি খণ্ডে তৈরি হয়েছে। সব খণ্ডেই জঙ্গীবাদ নিয়ে মূল ফতোয়ার সঙ্গে দারুল উলুম দেওবন্দ, মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া, শায়খ জাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার ও জামিয়াতুল আসআদ মাদ্রাসার ফতোয়াও সংযুক্ত করা হয়েছে।

সংযুক্ত প্রত্যেকটি ফতোয়াতেই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে হারাম বলা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের নেতৃত্বাধীন ‘একলক্ষ আলিম, মুফতি, ইমামের ফতোয়া ও দস্তখত সংগ্রহ কমিট’র উদ্যোগে গত ৩ জানুয়ারি থেকে এই ফতোয়া স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু হয়। শেষ হয় ৩১ মে।

১১ সদস্যের কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, আবদুর রহিম কাসেমী, সদরুদ্দীন মাকুনুন, আল্লামা আলীম উদ্দীন দুর্লভপুরী, হোসাইন আহমদ, দেলোয়ার হোসাইন সাঈফী, ইমদাদুল্লাহ কাসেমী, আইয়ুব আনসারী, ইবরাহিম শিলাস্থানী, আবদুল কাইয়ুম খান, যাকারিয়া নোমান ফয়জী। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বিশাল এ কর্মযজ্ঞের বিষয়ে এর অন্যতম সংগঠন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেছেন, ফতোয়া জারি হলে দেশের কোন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জঙ্গীবাদের পক্ষে নেয়ার পথও বন্ধ হবে। ফতোয়া জারির পর এটি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হবে।

ফতোয়া জারিতে রাষ্ট্রীয় অনুমোদনের প্রয়োজন না হলেও প্রয়োগের জন্য রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের প্রয়োজন আছে। ফতোয়া জারির কাজের সঙ্গে জড়িত আলেমরা জানিয়েছেন, গত ২ জানুয়ারি তিন শতাধিক আলেমের একটি সম্মেলনে সারাদেশে আলাদা আলাদা দলের মাধ্যমে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেমের কাছে গিয়ে ফতোয়া জারির বিষয়বস্তু উত্থাপন করে তাদের সমর্থনে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। লাখো আলেমের স্বাক্ষর সংগ্রহের পর বাকি কাজও এখন শেষ জানিয়ে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দেওবন্দ মাদ্রাসা ও দেশের অন্যতম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতিগণ।

জঙ্গীবাদের কবল থেকে দেশ ও সত্যিকারের ইসলামকে রক্ষা করতে হবে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আলেমদের নিয়ে দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করা হবে। মসজিদ-মাদ্রাসা, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়া হবে। আলেমদের নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী মানববন্ধন, মহাসমাবেশের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ফতোয়ার প্রেক্ষাপট ও ১০ প্রশ্ন ॥ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া আলেমরা তাদের কাজের বিষয়ে বলছেন, গতবছর নবেম্বরে আইএস ও জঙ্গীবাদবিরোধী যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ভারতের এক হাজার ইমাম, মুফতি এবং ইসলামি চিন্তাবিদদের স্বাক্ষর করা একটি ফতোয়া প্রকাশ করা হয়। ওই ফতোয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছেও পাঠিয়েছিলেন তারা। ওই ফতোয়ায় বলা হয, ‘ইসলাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আর আইএস সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে। বিভিন্ন মুসলিম দেশেও ১৫ খণ্ডের ফতোয়াটি পাঠানো হয়েছিল। অন্য দেশের আলেমদেরও এভাবে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে আহ্বানও করা হয়েছিল তখন।

জানা গেছে, গত বছর ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গীবাদ : বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশের আলেমদের ফতোয়া দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই শুরু হয়েছিল জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়ায় স্বাক্ষর সংগ্রহ কার্যক্রম। ওই সভায় পুলিশের মহাপরির্দশক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়ায় এক লাখ মুফতি ও উলামায়ে কেরামের ফতোয়ার জন্য ১১টি প্রশ্ন নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করে একটি অভিন্ন ফতোয়ায় স্বাক্ষর নেয়া হয় আলেমদের।

সারাদেশ থেকে ফতোয়ায় আলেমদের স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়। এ কমিটিতে আছেন মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা এমদাদুল কাসেমী, মাওলানা সদরুদ্দিন মাকনূন। এছাড়া প্রতি জেলায় ‘দায়িত্বশীল’ নিয়োগ করা হয়। তারা কাজের প্রয়োজনে কমিটিতে নতুন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করেন। ফতোয়ায় স্বাক্ষরের জন্য ১০টি প্রশ্নের জবাবে উলামায়ে কেরাম তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। একমত পোষণ করে ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেন। সন্ত্রাস ঠেকাতে কোরান ও হাদিসের বিভিন্ন বক্তব্যের আলোকেই ফতোয়াগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ছিল- শান্তির ধর্ম ইসলাম কি সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদের কর্মকান্ডকে সমর্থন করে? নবী ও রাসূল বিশেষ করে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলাম কায়েম করার পথ কি হিংস্রতা ও বর্বর নির্মমতার অবস্থান ছিল? ইসলামে জিহাদ ও সন্ত্রাস কি একই বিষয়? জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের পথ কি বেহেশতের পথ না জাহান্নামের পথ? আত্মঘাতী মৃত্যু কি শহীদি মৃত্যু বলে গণ্য হবে?

আত্মহত্যা ও আত্মঘাতের বিষয়ে ইসলামের মত কী? গণহত্যা কি ইসলামে বৈধ? শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিচারে হত্যা কি ইসলাম সমর্থন করে? ইবাদতরত মানুষ হত্যা করা কি ধরনের অপরাধ। এই ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে কর্তব্য কি না? সবশেষে আছে- গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা ইত্যাদি অমুসলিম উপাসনালয়ে হামলা জায়েজ কি না?

কী আছে ফতোয়ায় ॥ লক্ষাধিক আলেম-উলেমার স্বাক্ষরিত ফতোয়ার মধ্যে সূচি, সহযোগী আলেমদের নামসহ ফতোয়া যুক্ত করা হয়েছে। ‘ইস্তিফতা ও এর উত্তর’শীর্ষক অধ্যায় দিয়ে ফতোয়াটি দেয়া হয়েছে। সূরা তওবার কয়েকটি আয়াত এবং বোখারী ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি হাদিসকে প্রেক্ষিত ধরে ফতোয়ায় ১০টি প্রশ্ন যুক্ত করা হয়েছে। ওই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই ইসলামের ব্যাখ্যাসংবলিত মূল ফতোয়াটি বর্ণিত হয়েছে। এরপর কোরান শরিফ ও হাদিস শরিফের দলিলের ভিত্তিতে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ‘জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ, পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হলো হারাম ও অবৈধ।’৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ‘আত্মহত্যা ও আত্মঘাত ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।’৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, ‘ইসলামে নিরপরাধ মানুষদের গণহারে হত্যা বৈধ নয়। এমনকি সন্দেহের বশবর্তী হয়েও কাউকে হত্যা করা নিষেধ।’

৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে বলা আছে, ‘মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অমুসলিমদের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির প্রভৃতি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ধারাবাহিকভাবেই এভাবে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে কোরান শরিফের আয়াত ও হাদিস দিয়ে।

আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই লাখো অস্ত্রের চেয়েও ফতোয়া অনেক শক্তিশালী, অনেক ধারালো। সঠিক ফতোয়া মনোজাগতিক চেতনাকে শুদ্ধ করে, আলোড়িত করে এবং মানবতাবাদী বানায়। ৩২ পৃষ্ঠার ফতোয়াটির ‘প্রসঙ্গকথায়’ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ লিখেছেন, ‘মানবকল্যাণ ও শান্তির ফতোয়ার এই বারতা সন্ত্রাস পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও এতে যে বহুলাংশে হ্রাস পাবে তাতে সন্দেহ নেই। সন্ত্রাসের মদদদাতারা এতে হতোদ্যম হবে দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়।’ শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম বলছিলেন, ‘যারা ধর্মের নামে হত্যা এবং বিভিন্ন সন্ত্রাস করছেন তারা সঠিক কাজ করছেন না। ইসলাম ধর্মে হত্যাকে কোনভাবে সমর্থন করে না।

জঙ্গীবিরোধী ফতোয়ায় বাধা জামায়াত-শিবিরই ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়ায় আলেমদের স্বাক্ষও গ্রহণে তিন ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। এর মধ্যে ‘জামায়াত-শিবির-জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী’অন্যতম বাধা বলে অভিযোগ করেছে কমিটি। এছাড়া বাকি দুই শ্রেণী হচ্ছে, জঙ্গীবাদী হামলার আশঙ্কায় দস্তখত করতে চাননি যারা এবং হিংসুকের দল। জানা গেছে, জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়া গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের বাধা সামনে ছিল কমিটির।

এক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসার আলেমরাও অনেকে উদ্যোক্তাদের সরকারপন্থী বিবেচিত করে ফতোয়ায় স্বাক্ষর প্রদান থেকে দূরে থাকেন। যদিও পরবর্তীতে হেফাজতের শরিক আলেমরাও স্বাক্ষরে এগিয়ে আসেন। মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ লিখেছেন, ‘কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন যে হতে হয়নি, তা নয়। তিন শ্রেণী থেকে আমাদের বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে।

জামায়াত, শিবির ও জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী, আমরা জিহাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি এই অপবাদ তুলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। আরেকদল এমন যারা বিষয়টি সমর্থন করেছে কিন্তু জঙ্গীবাদের হামলার শিকার হওয়ার আতঙ্কে দস্তখত করতে চাননি। আর এই আতঙ্ক তারা প্রচার করেছেন। উদ্যোক্তা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনূন বলেন, বরাবরই বাংলাদেশে ইসলামের খেদমতের অন্যতম বাধা জামায়াত। বিশেষ করে ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়ে ইসলামী রাজনীতিকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেছে। ফলে, জঙ্গীবাদবিরোধী কার্যক্রমে তারা বাধা হবে, এটিই স্বাভাবিক।

ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন ১০ হাজার নারী আলেম ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত লাখো আলেমের ফতোয়ায় অংশ নিয়েছেন দেশের নারী আলেমরাও। দেশের ৯ হাজার ৩২০ নারী আলেম স্বাক্ষর করেছেন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মানবকল্যাণে শাস্তির ফতোয়ায়। সারাদেশের নারী আলেমরাও জঙ্গীবাদবিরোধী ফতোয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের মহিলা মাদ্রাসাগুলোয় এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়। মহিলা মাদ্রাসার মধ্যে রামপুরা জাতীয় মহিলা মাদ্রাসা, দুর্লভপুর দারুল হাদিস মহিলা মাদ্রাসা সিলেট, বারুতখানা দারুল হাদিস মহিলা মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য।

স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রামপুরা জাতীয় মহিলা মাদ্রাসার আলেমা তানজিলা আফরিন, উম্মে হাফছা, আমেনা, কুলসুম রিমা, খাদিজাতুল কুবরা, তানজিম তাসফিয়া দিনা, আনিকা আহাদ, ফাতেমা খাতুনসহ অনেকের নাম রয়েছে।

এই মাদ্রাসাটির প্রিন্সিপাল চরমোনাই পীরের ভাই মাওলানা মুসতাক আহমদ। নরসিংদী জেলার কয়েকটি মহিলা মাদ্রাসার নারী আলেমের মধ্যে রয়েছেন আলেমা মোসা তৈয়্যবা, উম্মে সালমা, আমিনা, সুরাইয়া, মাকসূদা, তাসফিয়া, মুশফিকাসহ অনেকের স্বাক্ষর। ফতোয়ার ‘প্রসঙ্গকথা’য় মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ লিখেছেন, সুখের বিষয় হলো, আমাদের মহিলাগণের মাঝেও বিপুলসংখ্যক আলিম ও মুফতির আবির্ভাব ঘটেছে। এই ফতোয়ায় মহিলা আলিম ও মুফতিগণেরও দস্তখত নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে। বর্তমান বিশ্বে এটা একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নয়া সংযোজন।

ইসলামী চিন্তাবিদ আলহাজ মাওলানা ড. আ ন ম মাহবুবুর রহমান বলছিলেন, কিছু লোক বিদেশী টাকায় ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছেন। মিলাদ মাহফিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোরান-হাসিদের আলোকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে। জিহাদ ও জঙ্গীবাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা তুলে ধরতে হবে।

মাওলানা শাহ সূফি সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ বলেন, ইসলাম শান্তি, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে ধর্ম। একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করছেন। তারাই ইসলামের শত্রু। ‘যারা পল্টনে বলেছেন, বাংলা হবে আফগান আমরা হব তালেবান’তারাই হচ্ছেন অরিজিনাল জঙ্গী।

চাঁদপুর গাবতলা দরবার শরিফের পীর মাওলানা খাজা আরিফুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জঙ্গী ও খারেজিদের চরিত্র। এ জন্য মসজিদে জুমার খুতবায় জঙ্গীবাদবিরোধী বক্তব্য দিতে হবে। জঙ্গীবাদ দমন করতে হলে এ সংক্রান্ত কর্মসূচীর সঙ্গে আলেমদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

মাওলানা কামাল উদ্দিন আজহারী বলেন, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে কখনও হত্যা করতে পারেন না। এটা কুফরি কাজ। বোমা মারা, গুলি করা, মুসলমান হয়ে আরেক মুসলমানকে হত্যা করা, ইসলাম ধর্মের মূল চেতনার পরিপন্থী।

অন্য ধর্মের লোকদেরও হত্যা করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামে এগুলো জঘন্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে মুফতি হালিম সিরাজি বলছিলেন, যারা বিদেশী, মসজিদ ও উপসনালয়ে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছেন, তারা কোরান-হাদিস থেকে অনেক দূরের বাসিন্দা। তারা কখনও নিজেদের প্রকৃত মুসলমান হিসেবে দাবি করতে পারেন না।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040380954742432