জঙ্গী আস্তানার ব্যয়ভার বহন করতো রেটিনা কোচিং - Dainikshiksha

জঙ্গী আস্তানার ব্যয়ভার বহন করতো রেটিনা কোচিং

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

1469833964_Led (1)স্থানীয়ভাবে কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হতো রেটিনা কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে। ছাত্রশিবিরের নিজস্ব এই প্রতিষ্ঠানটির অনেকেই কল্যাণপুরের ওই আস্তানাটিতে ঘন ঘন যাতায়াত করত। আস্তানার পেছনে ব্যয় হওয়া পুরো অর্থই এককভাবে কোচিং সেন্টারটি বহন করত কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। বড় ধরনের নাশকতা চালাতে গড়ে তোলা আস্তানার জন্য ব্যয় হওয়া অর্থের কিছু অংশ বিদেশ থেকে আসত বলে তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। কোচিং সেন্টারের ছাত্র পরিচয়ে ব্যাগে করেই ওই আস্তানায় আস্তে আস্তে অস্ত্র গোলাবারুদসহ জঙ্গী কার্যক্রমে ব্যবহৃত সরঞ্জাম মজুদ করা হয়েছিল। জঙ্গীরা দুপুরের দিকে নিরিবিলি সময়ে অস্ত্র গোলাবারুদ আস্তানায় মজুদ করত। কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানা আবিষ্কৃত হওয়ার পর সারাদেশেই নতুন করে অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে আটক বা গ্রেফতারের কোন পরিসংখ্যান জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর ছয়তলা জাহাজ বিল্ডিংয়ে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযানে নয় জঙ্গী নিহত হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণপুরের অভিযানে আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় রাকিবুল হাসান রিগ্যান। সে শিবিরের কর্মী ছিল। বগুড়ার রাকিবুল হাসান রিগ্যান শিবির নিয়ন্ত্রিত রেটিনা কোচিং সেন্টারের বগুড়া শাখার ছাত্র ছিল। এমন খবরের পর ঘটনার পর পরই স্থানীয়রা শিবির নিয়ন্ত্রিত বগুড়ার রেটিনা ও ফোকাস কোচিং সেন্টারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।

রিগ্যানের বরাত দিয়ে সূত্রগুলো বলছে, নিহত জোবায়ের হোসেনও ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করত। সে নোয়াখালী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের ছাত্র ছিল। জুবায়ের তার চাচাত ভাই জামায়াত নেতা বাহাদুরের হাত ধরে একসঙ্গে নিখোঁজ হয়। নিহত সাব্বির চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিল। শিবিরের রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তির পর সে জঙ্গী হয়ে ওঠে। নিহত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সেজাদ রউফ অর্কও বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ পড়ার সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির হাত ধরে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরে যোগ দিয়েছিল। নিহত রায়হান কবির ওরফে তারেক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিল। গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গীদের গাইবান্ধার চরে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল তারেক। সে মাদ্রাসায় পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করত। পরবর্তীতে সে জঙ্গী খাতায় নাম লেখায়।

নিহত আকিফুজ্জামান খান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গবর্নর কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাতি। তাজ উল হক রাশিকও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় শিবিরের হাত ধরে হিযবুত তাহরীরে যোগ দিয়েছিল। গত জানুয়ারি মাস থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। নিহত সাব্বিরুল হক চট্টগ্রামের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র থাকাকালে শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। সেই সূত্র ধরেই ভর্তি হয় শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারে। নিহত আব্দুল্লাহ মাদ্রাসায় পড়ার সময় শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে জঙ্গী হয়। আবু হাকিম নাইমও মাদ্রাসায় পড়াকালীন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরে জঙ্গী হয়ে ওঠে। নিহত মতিয়ার রহমান অভাব অনটনের সময় ছাত্র শিবিরের সহায়তা পায়। এরপর আস্তে আস্তে জঙ্গী খাতায় নাম লেখায়। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী ইকবালও শিবিরের রাজনীতির সূত্র ধরে পরবর্তীতে জঙ্গী হয়।

তদন্তকারীরা বলছেন, নিহত ও পালিয়ে যাওয়া ইকবালের সঙ্গে আহত জঙ্গী হাসানের ঢাকায় শিবির নিয়ন্ত্রিত রেটিনাসহ একাধিক কোচিং সেন্টারে দেখা সাক্ষাত হয়েছে। সেখান থেকেই তাদের সখ্য। কোচিং সেন্টারটিকে কল্যাণপুরের জঙ্গীরা একটি অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করত। মূলত সেটি ছিল একটি মিলনস্থল। জঙ্গীরা কোচিং করানোর নামে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করত। দুপুরে তারা ব্যাগ নিয়ে এমনভাবে আস্তানায় ফিরত, যেন তারা কোচিং সেন্টার থেকে ফিরছে। তারা একেক দিন একেক জায়গা থেকে ফিরত। তবে মাঝে মধ্যেই তারা রেটিনা কোচিং সেন্টারে যাতায়াত করত। কোচিং সেন্টারের অনেকেই আস্তানাটিতে যাতায়াত করত। দুপুরে নিরিবিলি সময়ে জঙ্গীরা কোচিং সেন্টারের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ করেই অস্ত্র গোলাবারুদ আস্তে আস্তে সেই আস্তানায় জমা করত।

সূত্র বলছে, অনেক সময়ই কোচিং সেন্টারের তরফ থেকে জঙ্গীদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হতো। বিশেষ করে বাড়িভাড়ার সিংহভাগ টাকাই কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে যোগান দেয়া হতো বলে জানা গেছে। তবে কোচিং সেন্টার নিজস্ব অর্থ দিয়ে আস্তানাটি চালাত কিনা তা নিশ্চিত নয়। স্থানীয়ভাবে রেটিনা কোচিং সেন্টার আস্তানাটির অর্থের যোগান দিয়ে আসছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আস্তানার সিংহভাগ টাকা বিদেশ থেকে আসত। বিদেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা রয়েছে। তারা নানাভাবে বাংলাদেশে জঙ্গীদের অর্থায়ন করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বিদেশ থেকে আসা টাকার একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারে জমা হতো বলে জানা গেছে। অর্থায়নের বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে চিকিৎসাধীন হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হাসান অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আস্তানায় থাকা জঙ্গীরা এমনভাবে বাসায় ফিরত দেখে যে কেউ মনে করবে, তারা কোচিং সেন্টার থেকে বাসায় ফিরছে। খুবই সাধারণভাবে বাসায় যাতায়াত করত। ফলে কারও সন্দেহ হত না।

সূত্র বলছে, বিষয়টি দুই দিনের করে রিমান্ডে থাকা বাড়িওয়ালা মমতাজ বেগম, তার ছেলে ব্যারিস্টার জুয়েল, মমতাজ বেগমের মেয়ের জামাই মাহফুজুল আনফাল, বাড়ির ম্যানেজার ভাগ্নে মমিন উদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাকির হোসেন জেনে থাকতে পারে। কারণ রিমান্ডে থাকা পাঁচজনই জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী। বাড়ির মালিক মমতাজ বেগমের স্বামী সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা হাজী আতাহার উদ্দিন আহমেদও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রেটিনা কোচিং সেন্টারটি শিবির নিয়ন্ত্রিত। তাই স্বাভাবিক কারণেই জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তির বাড়িতে কোচিং সেন্টারটির ছাত্ররা জায়গা পাবে এটাই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের আস্তানা গড়ে তোলার জন্যও আস্তানার জঙ্গীরা, তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসীদের বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে।

ধারণা করা হচ্ছে, বাড়ির মালিকসহ রিমান্ডে থাকা পাঁচজনই পাঁচতলা ও ছয়তলায় বসবাসকারীরা রেটিনা কোচিং সেন্টারের ছাত্র হওয়ায় তাদের সম্পর্কে কোন প্রকার তথ্য রাখার প্রয়োজনই মনে করেননি। কারণ তারা নিজেদের সংগঠনের সদস্য। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধাও পেয়েছে। ইতোপূর্বে জামায়াত-শিবিরের আদর্শে বিশ্বাসী একদল ভাড়াটিয়া ২০ হাজার টাকা ভাড়া না দিয়েই চলে গেছেন। একই আদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় বাড়ির মালিক ২০ হাজার টাকার জন্য ভাড়াটিয়াদের কোন কিছুই বলেননি। এমনকি কোন উচ্চবাচ্য পর্যন্ত করেননি। চলে যাওয়া ওই ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বাড়ি মালিকের টাকা না দেয়ার কারণে ন্যূনতম কোন উচ্চবাচ্য পর্যন্ত হয়নি।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত রিগ্যান রাজধানীর মিরপুরে জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গীদের একজন। কল্যাণপুরের অভিযানে নিহতদের অনেকেই মিরপুরের জেএমবির আস্তানায় ট্রেনিং করেছে। নিহতদের মধ্যে অর্কও মিরপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ইতোপূর্বে মোহাম্মদপুরের শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলার ঘটনায় আটক শিহাবও মিরপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে ছিল। এরা সবাই উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক জেএমবির সঙ্গে জড়িত।

প্রসঙ্গত, রেটিনাসহ শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারগুলো ‘এসো নবীন দলে দলে, ছাত্রশিবিরের পতাকাতলে’, কিংবা ‘দাবার চালে ভুল করিলে রাজা খতম, সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তির জন্য সঠিক কোচিং না চিনিলে আপনি খতম’ এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল ভর্তির অন্তত ১২ কোচিং থেকে শিবির বছরে আয় করছে শত কোটি টাকা। এসব টাকার সিংহভাগ জঙ্গী তৎপরতায় খরচ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টারগুলো।

এদিকে কল্যাণপুরের ঘটনার পর সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় বৃহস্পতিবার গভীররাতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁওয়ের রাজাবাজার এলাকায় মেসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটকদের জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতেই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে কাউকে আটক বা গ্রেফতার তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, জঙ্গীদের গ্রেফতার করতেই অভিযান চলছে। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার নির্দেশে ঢাকার প্রতিটি থানা এলাকায় ব্লকরেইড পদ্ধতিতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীসহ সব ধরনের অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080080032348633