জাতিকে দায়মুক্তি দিতে এমপিও শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ - Dainikshiksha

জাতিকে দায়মুক্তি দিতে এমপিও শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
mujjam sir
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী

‘সাবাস বাংলাদেশ,

অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়,

জ্বলে পুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয় ।’

কবির কবিতার পংক্তিগুলো বাঙ্গালি জাতির অসীম সাহস ও অমিত তেজকেই ফুটিয়ে তোলে । প্রকৃতপক্ষে আমাদের এ জাতি বীরের উত্তরসূরী। সকল দূর্ণাম ও অপবাদ ঘুচিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এক নির্ভীক জাতি। ইতিহাস ও ঐতিহ্য স্বাতন্ত্র্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাদের । কতো অসাধ্য সাধন করেছি আমরা!

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে চিরতরে শত্রুমুক্ত করেছি। এরও প্রায় কুড়ি বছর আগে আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ত দিয়ে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আমাদের একুশ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত।

ইনডেমনিটি’ নামক এক ঘৃণ্য কালো অধ্যাদেশকে লাথি মেরে আমাদের জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করে নিজেরা অনেকটা দায়মুক্ত হয়েছি। আমাদের পবিত্র সংবিধানকে করেছি কালিমামুক্ত। জাতীয় নেতাদের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এ দেশের মাটিতেই। সর্বশেষ মহান স্বাধীনতার প্রায় চার যুগ পরে এসে হলে ও মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করে ইতিমধ্যেই অনেকের দম্ভকে চুরমার করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করে আমরা প্রমাণ করেছি , কেবল আমরাই পারি যে কোন কিছু করতে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিত্য লড়াই করে এর উত্থান রুখে দিতে আমরা ছাড়া আর কে পেরেছে?

তলাবিহীন ঝুড়ি’র দূর্ণাম ঘুচিয়ে আমরা এখন প্রায় মধ্যম আয়ের দেশ। এক সময় কেবল শহরে গেলে দু’-চারটে বিদ্যুতের লাইট চোখে পড়তো। আজ কিন্তু দূর গ্রাম-প্রান্তর ছাড়িয়ে সীমান্তের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত সন্ধ্যা হবার আগেই নানা বৈচিত্রের বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে। এই তো মাত্র বছর কয়েক আগে গ্রামে-গঞ্জে পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় কোথাও যাতায়াত করা ছাড়া ভিন্ন কোন উপায় ছিল না। এখন গ্রামে-গঞ্জে পাকা রাস্তা। গ্রামীণ জনপদে নদী-নালা, খাল-বিল আর হাওর-ঝিলে এখন কালভার্ট ও ব্রীজ। গাঁয়ের মেঠো পাকা পথ দিয়ে এখন কেবলি গাড়ী-ঘোড়ার চলাচল। আমাদের গ্রাম গুলোতে এখন আর ছনের ঘর খুব একটা চোখে পড়ে না। সারা গ্রাম জুড়ে পাকা কিংবা টিনের ঘর। কোন কোন গ্রামে এখন এক ধরণের শহুরে আবহ।

গ্রামে-গঞ্জে কিংবা বাজারে-শহরে আজ আর আগের মতো দল বেঁধে ভিক্ষুক নেই। এ দেশ থেকে ভিক্ষাবৃত্তি অনেক কমে গেছে। লোকজন আজ অনেক পরিশ্রমী। এ জাতির লোকেরা আজকাল সারা পৃথিবী চষে বেড়ায়। বৃটিশ পার্লামেন্ট পর্যন্ত কাঁপিয়ে তোলে আমাদের সন্তানেরা। আমাদের রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকীরা বৃটিশ পার্লামেন্টের একেক উজ্জ্বল তারকা। একদা যে বৃটিশ আমাদের শাসন করেছে, আজ সেই বৃটিশকে আমরা শাসিতে শুরু করেছি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও আমাদের এখন অনেক দাপট। মাননীয় স্পিকার শিরীণ শারমিন চৌধুরী ও মাননীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী আজ দু’টি আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি সংস্থার সভাপতি। জাতির জনকের তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী সফল নেতাদের প্রথম সারির একজন। শুধু কী তা-ই? সারা বিশ্বে আজ ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের জনশক্তি। বিশ্ব বাজারে এ দেশের জনশক্তির চাহিদা অনেক। রেমিটেন্সের মুদ্রায় তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। আমরা যমুনা বহুমূখি সেতু নির্মাণ করেছি আগেই। এখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দিয়েছি। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে আমাদের।

শিক্ষা দীক্ষায় ও আমাদের অর্জন কম কীসে? এক সময় সারা গ্রামে চিঠিপত্র কিংবা জমিজমার দলিল পড়বার মতো লোক মাত্র দু’-চার জন ছিল। বেশীর ভাগ লোক স্বাক্ষরের জায়গায় টিপ দিতো। আজ আর সে দূর্দিন নেই। এখন ঘরে ঘরে শিক্ষিত। পাড়ায়, গ্রামে স্কুল ঘর। কাঁচা ঘরের স্কুল আজ পাকা দালান হয়েছে। প্রাথমিক স্কুলে শতভাগ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক দেয়া হচ্ছে । স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে। শহরের অলিতে গলিতে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭৪ সনে আমাদের জাতির জনক প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছেন। এ স্তরটি মোটামুটি একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষা জাতীয়করণের প্রক্রিয়াটি আর কেউ এগিয়ে নেননি। এতো অর্জন, এতো সাফল্য এবং এতো কিছুর পর ও আমাদের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে কথা ওঠেছে আজ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার দৈন্য দশা কিছুতেই কাটছে না ।

আমাদের সন্তানেরা জ্ঞানার্জন না করে কেবলি সার্টিফিকেট অর্জন করছে। শিক্ষায় নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য মহামারীর রূপ নিচ্ছে। ম্যানিজিং কমিটি ও গভার্ণিংবডির অযাচিত হস্তক্ষেপ কেবলি বেড়ে চলেছে । শিক্ষা যেন আজ পণ্যের মতো কেনা বেচা হচ্ছে। মেধাবী প্রজন্ম সঙ্গত কারণে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা পেশায় আসতে নারাজ। কেননা, এখানে ‘বেসরকারি’ নামের এক ভয়ংকর ভাইরাস আমাদের শিক্ষাকে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে। এ ক্ষতটি দিনে দিনে কেবলি বড় হচ্ছে।

আমাদের জাতির জনকের প্রাথমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণের চল্লিশ বছর পর আজো কেউ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর জাতীয়করণ করার উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এটি আমাদের জাতীয় দায় ও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। জাতির এ দায় ও ব্যর্থতা যতদিন মোচন না হবে, ততদিন আমাদের অন্য সকল অর্জন ও সাফল্য কোন কাজে আসবে না।

আমাদের জাতিকে তাই এ দায় থেকে অবিলম্বে মুক্তি দেবার জন্য অন্ততঃএমপিও শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ করা অপরিহার্য হয়ে ওঠেছে। আশা করা যায়, শিক্ষা বান্ধব বর্তমান সরকার সত্ত্বর কাজটি করে জাতিকে তার আরেক বড় দায় থেকে মুক্তি দেবে।

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038230419158936