“জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকরা হবেন ক্যাডার বহির্ভূত” - দৈনিকশিক্ষা

“জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকরা হবেন ক্যাডার বহির্ভূত”

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

সম্মানিত সাংবাদিক বন্ধুরা

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আপনারা জাতির জাগ্রত বিবেক এবং সমাজ সভ্যতা বিকাশের নিয়ামক। অতীতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন  সংকটকালে আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন। বিগত দিনে ক্যাডার সার্ভিস সংক্রান্ত সকল নিয়মনীতি ভঙ্গ করে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির  ফলে সরাসরি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বর্তমান সময়ে ব্যাপকহারে বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করে ঐসব কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির প্রচেষ্টা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে, তাই আমরা আবারো আপনাদের স্মরনাপন্ন হয়েছি। শিক্ষা ক্যাডার তথ্য গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা অাপনাদের  সহযোগিতা চাই।

নিজেদেকে শিক্ষিত ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ও শিক্ষাকে মানুষের দোরগোরে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, গর্ববোধ করি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সকল উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সে সকল উপজেলায় একটি করে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে, যার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর  সদয় উদ্যোগে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জতীয়করণ করা হয়েছে, তিন শতাধিক স্কুল জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, এর সাথে ২৮৩ বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণকে ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। একদিন হয়তো দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসকল স্তরের শিক্ষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের এমন মহৎ উদ্যোগ একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষেই নেয়া সম্ভব।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের এই মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করার জন্য বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য জাতীয় শিক্ষানীতি’ ২০১০ এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি’২০১০ মহান জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর ৭ বছর কেটে গেলেও শিক্ষানীতি’২০১০ এর অধ্যায় ২৭; শিক্ষা প্রশাসন: অনুচ্ছেদ ৮ মোতাবেক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের জন্য আলাদা কোন বিধিমালা প্রনয়ণ করা হয়নি। সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও কোন বিধিমালা প্রনয়ণ ব্যতীত জাতীয়করণের আদেশ জারি ও ক্যাডারভুক্তকরণ জাতীয় শিক্ষানীতি তথা সরকারের গৃহীত নীতির পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি।

মহান জাতীয় সংসদে এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ঠভাবে জানান, জাতীয়করণের পর সংশ্লিষ্ট কলেজ শিক্ষকদের নিজ প্রতিষ্ঠানেই থাকতে হবে, অন্যত্র বদলী হতে পারবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে অনুশাসন পাঠানো হয়, কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য জাতীয় শিক্ষানীতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনকে পাশকাটিয়ে কোন নীতিমালা প্রনয়ণ ব্যতিরেকেই ৪৫টি কলেজের  সব শিক্ষককে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং জাতীয়করণের জন্য চূড়ান্ত ২৮৩ কলেজে কর্মরত ১৫ হাজার শিক্ষককে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করার চেষ্টা চলছে যা Recruitment Rules, 1981-এর পরিপন্থী।

এসব বিষয়ে আমাদের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি নেতৃবৃন্দ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব বরাবর লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, সারাদেশে সরকারি কলেজ ও শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত দপ্তরসমূহে মানববন্ধন ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সংবাদ সম্মেলন, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে

সারাদেশের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে। মাউশি অধিদপ্তর হতে খসড়া নীতিমালা প্রেরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।একারণে শিক্ষা ক্যাডার আত্তীকরণ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী উদ্বিগ্ন শিক্ষা ক্যাডেরের জুনিয়র কর্মকর্তারা আবারও আপনাদের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশে এমন একটি সুস্থ্য ও সুন্দর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে সিভিল সার্ভিসকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীতা অনুভব করেছিলেন, যারা বিশ্বমানের সক্ষমতা সৃষ্টি করবে, দক্ষতার সাথে দ্রুত সরকারি নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নব প্রতিষ্ঠিত দেশের চাহিদা পূরন করতে সক্ষম হবে। এজন্য তিনি The services (Reorganization and conditions) Ordinance. 1975 নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তীতে এটি  The services (Reorganization and conditions) Act 1975 নামে জাতীয় সংসদে পাশ হয়। এই আইনের ৪ নং অনুচ্ছেদ বলে সরকার ১৯৮০ সালে ১৪ টি ক্যাডার সৃষ্টি করে The Bangladesh Civil services (Reorganization) order 1980 জারি করে। সংশোধনীর মধ্যমে যা পরবর্তীতে ক্যাডারেরে সংখ্যা ৩০ টিতে উন্নিত করা হয়। বর্তমান এর সংখ্যা ২৭ টি। ক্যাডারেরে ধরণ, পদের ধরণ ও পদসংখ্যা নির্দিষ্ট করার জন্য প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য Composition and cadre Rules প্রনয়ণ করা হয়। এর মধ্যে বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডারেরে জন্য প্রযোজ্যটি হলো The Bangladesh Civil Service ( Education: General Education)  Composition and cadre Rules, 1980 ।  ক্যাডার বা ক্যাডার পদে জনবল নিয়োগের স্বীকৃত উপায় হলো ১। সরাসরি মাধ্যমে নিয়োগ ২। পদোন্নতি মাধ্যমে নিয়োগ ১৯৮১ সালে বিসিএস ক্যাডার  পদে নিয়মিত নিয়োগের জন্য সরকার জন্য সরকার The Bangladesh Civil Service Recruitment Rules,1981 প্রনয়ণ করে যা সকল ক্যাডারের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এই রুলস অনুযায়ীও  নিয়োগের স্বীকৃত উপায় হলো ১। সরকারি Bangladesh public service commission মাধ্যমে নিয়োগ, ২। পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ। জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকগণ পিএসসির মাধ্যমে সরকারি নিয়োগ নন, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগও নন। ফলে তাদের ক্যাডার ভুক্তির আইনগত কোন সুযোগ নেই।

ক্যাডারের জনবল নিয়োগ করে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান Bangladesh Public Service Commission (পিএসসি)। বিসিএস ক্যাডারের সরকারি নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের একমাত্র বৈধ উপায় হলো বিসিএস পরীক্ষা, যেটি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য BSC (age, Qualification & Examination for direct recruitment Rules, 1982) নামে সরকার কতৃক একটি পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা বিধিমালা প্রনীত হয়। বিভিন্ন বিভাগ / মন্ত্রনালয়ের  চাহিদার প্রেক্ষিতে জনপ্রসাশন মন্ত্রনালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা  নিয়োগের জন্য  পিএসসি বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি, প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা. মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, সাস্থ্যগত পরীক্ষা, নিরাপত্তাগত দিক যাচাই করে যোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পিএসসি।

আপনারাও অবশ্যই স্বীকার করবেন সরকারি চাকুরিতে আত্তীকরণ আর ক্যাডার সার্ভিসে আত্তীকরণ এক বিষয় নয়। সরকার যে কোন পেশার চাকুরিকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনের  নিরিখে সরকারি করণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী তিনি সরকারি চাকুরির সুযোগ সুবিধা পাবে। কিন্ত আত্তীকরণ নামে ক্যাডার ভুক্তির বিষয়টি Bangladesh Civil Service Recruitment Rules এর কোন ধারাকে সমর্থন করে না। Bangladesh Civil Service Recruitment rules, 1981অনুযায়ী ক্যাডর সার্ভিসে নিয়োগের সুস্পষ্ট বিধিমালা রয়েছে। জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের সরকারি চাকুরিতে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে বিবেচিত, জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা ১৯৮১ তে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের বিসিএস  সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কোন অনুচ্ছেদ ছিলো না। ১৯৯৮ সালে জাতীয়করকৃত কলেজ শিক্ষকদের স্বপদে আত্তীকরণের জন্য জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারি আত্তীকরণ বিধমালা ১৯৯৮ প্রণয়ন করা হয়। ২০০০ সালে আবারও জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক অশিক্ষক কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০” প্রনয়ণ করা হয়। বিতর্কিত এই বিধির ৬(৫) ধারাতে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের  নিয়মিতকরণেন তারিখ হতে শিক্ষা ক্যাডর  আত্তীকরণ সুযোগ রাখা হয় যা Bangladesh Civil Service Recruitment rules, 1981 পরিপন্থী। ক্যাডার সার্ভিসের  অধিকার ও মর্যাদা  রক্ষায় ২০০০ বিধি সহ ক্যাডারে আত্তীকরণ সংক্রান্ত সকল বিধি বাতিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং বিসিএস নিয়োগ বিধি ১৯৮১ এর ব্যত্যয় না ঘটিয়ে জাতীয়করণের  তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার  বহির্ভুত রেখে তাদের নিয়োগ পদায়ন ও পদোন্নতি সংক্রান্ত আলাদা  বিধিমালা প্রনয়ণ করা এখন সময়ের দাবী।

Bangladesh Civil Service Recruitment rules, 1981 মোতাবেক পিএসির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন ব্যতীত ক্যাডার ভুক্তির কোন সুযোগ নাই। পিএসসির মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ প্রাপ্তির সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি বিদ্যামান। ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের জন্য কর্মকমিশনের আধীনে লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর মধ্য হতে প্রাধমিক বাছাই পরিক্ষা, লিখিত পরিক্ষা,মমস্তাত্ত্বিক পরিক্ষা, স্বাস্থ্যগত পরিক্ষা, ও নিরাপত্তাগত দিক যাচাই বাছাইয়ের পর প্রকৃত মেধাবিদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগ দান শুধুমাত্র সরকারি কলেজ শিক্ষাকতা করার জন্য নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্ত(শিক্ষাভবন),মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর(আঞ্চলিক কার্যালয়), NCTB, NAEM, DIA, HTTI, MTTI, TTC, শিক্ষা বোর্ড সমূহ, আলীয়া মাদ্রাসা সমূহ,বেসরকারি শিক্ষক অবসর বোর্ড , বেসরকারি শিক্ষক কল্যান ট্রাস্ট, ইউনেস্কো শিক্ষা কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে আওতাধিন বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও প্রকল্প সমূহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মচারি দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু বেসরকারি কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া এসব পদ্ধতি অনুসরণ করে না। তারা আমাদের মতো বিসিএস পরিক্ষা দেবার জন্য সাংবিধানিক অধিকার।

সেদিকে না গিয়ে সরকারের কলেজ জাতীয়করণের সুযোগে বিসিএস পরীক্ষা ব্যতীত , কোন প্রকার বিধিবিধানের সমর্থন চাড়াই ক্যাডারভুক্ত হতে চাচ্ছেন। সাম্প্রতিকালে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কিছু কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তির অভিযোগ উঠে এসেছে, যা সত্যিই লজ্জাকর। জাল সনদধারী শিক্ষকের কাছে জাতি ধ্বংশ করা ছাড়া আর কিছু আশা করা বৃথা। কিছু কলেজে জাতীয়করণের সুযোগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে যা রীতিমতো অবাক হবার বিষয়। শতবর্ষী সরকারি কলেজেও একটি বিভাগে ৪ জনের বেশী প্রভাষক নেই অথচ সদ্য সরকারি হওয়া কলেজে ৭টি প্রভাষকের পদ সৃজন করা হয়েছে। এসবই বেআইনী পথে ক্যাডারভুক্তির আশায় করা হয়েছে বলে আমরা মনে  করি। মেধার মূল্যায়ন না করে ভিন্নপথে ক্যাডারভুক্তির এই পথ এখনই বন্ধ করা না গেলে প্রকৃত মেধাবীরা শিক্ষা ক্যাডার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। ফলে দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়তে  পারে।

জাতীয়করণকৃত কলেজের সম্মানিত শিক্ষকদের চাকুরি সরকারিকরণের মাধ্যমে পেনশন, গ্রাচুইটি, বাড়ীভাড়া ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা অমূলক নয়। আমরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার একাজে সরকারকে সহায়তা করে এগিয়ে নিতে চাই। কিন্তু আত্তীকরণের নামে বিসিএস নিয়োগ বিধিকে পাশ কাটিয়ে জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকদের সরাসরি ক্যাডারভুক্তির বিষয়টি আইন ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী, এটি সংবিধানের ১৯(ক) ও ২৭ ধারার লঙ্ঘন।

ক্যাডার সার্ভিসের সকল ক্যাডারই সমান অধিকার ও মর্যাদা লাভের দাবীদার।এটা বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের জন্য বলেছেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ পুলিশের ননক্যাডার কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণির পদে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারভুক্তির জন্য আদালতের আশ্রয় নিয়েছিলেন। মহামান্য আদালত তাদের এ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নন ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও তাদেরকে ক্যাডার বহির্ভুতই রাখা হয়। যেখানে সরকারি চাকুরির নন ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও ক্যাডারভুক্ত হতে পারেন না , সেখানে সম্পূর্ণ বেসরকারি চাকুরি থেকে সরকারি ক্যাডারভুক্তির চেষ্টা অযৌক্তিক।

বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষাথীদের সুবিধা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করছেন। অতীত অভিজ্ঞায় দেখা গেছে কলেজ সরকারিকরণের পরপরই জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষাকগণ ক্যাডারভুক্তির সুবাদে তদবির করে শহরাঞ্চলে বদলী হয়ে যান ফলে মফস্বলের কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট চরমে ওঠে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ চরমভাবে বিঘ্নিত হয় । তাই কলেজগুলো জাতীয়করণ করার সময় শিক্ষকাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী উক্ত কলেজে চাকুরি বাধ্যতামুলক করার শর্তটি যুক্ত করা দরকার। তাছাড়া এইভাবে ক্যাডারভুক্তির  ফলে প্রকৃত বিসিএস শিক্ষক কর্মকর্তাগণের পদোন্নতি চরমভাবে ব্যাহত হয়, ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন  ক্যাডারে ৭ম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তাগণ যখন সচিব হয়েছেন, এ আত্তীকরণের মাধ্যমে ক্যাডারভুক্তির অভিশাপে শিক্ষা ক্যাডারে বহু সংখ্যক কর্মকর্তা সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে গেছেন। ফলে মেধাবীরা শিক্ষা ক্যাডারে যোগদান করে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাবে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারের অঙ্গীকারকে বাধাগ্রস্থ করবে।

ক্যাডার সার্ভিসের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় এবং জাতীয়করণ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তবে, শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণ বন্ধে BCS Recruitment Rules 1981 এর ব্যত্যয় না ঘটিয়ে নতুন কোন কলেজ জাতীয়করণ আদেশের আগেই জাতীয়করণর তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভুত রেখে তাদের নিয়োগ , পদায়ন ও পদোন্নতি সংক্রান্ত আলাদা বিধিমালা করতে হবে। অর্থাৎ, জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকরা হবেন ক্যাডার বহির্ভুত। ক্যাডার সার্ভিসের নিয়োগ বিধিতে আত্তীকরণের কোন সুযোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর নির্দেশনা থাকার পরও কর্তৃপক্ষ ও গত প্রায় ৭ বছরেও বিধিমালা প্রণয়ন করেনি আমাদের এই ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই। এটি শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ত্ব, অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্ন। এবিষয়ে দ্রুত কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও আশ্বাস না পেলে শিক্ষা ক্যাডরের ১৫ হাজার সদস্যের লাগাতার কর্মবিরতিসহ নানা রকম কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা চাড়া কোন বিকল্প থাকবে না।

আমাদের দাবীসমূহ:

১। শিক্ষা ক্যাডার আত্তীকরণ বন্ধে আর কোন কলেজ জাতীয়করণ আদেশের আগেই ২০০০ বিধিসহ ক্যাডারে আত্তীকরণ সংক্রান্ত সকল বিধি বাতিল করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, জাতীয় শিক্ষানীতি’ ২০১০ এবং বিসিএস নিয়োগ বিধি ১৯৮১ এর ব্যত্যয় না ঘটিয়ে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভূত রেখে তাদের নিয়োগ, পদায়ন  ও পদোন্নতি সংক্রান্ত আলাদা বিধিমালা প্রনয়ন করতে হবে।

পরিশেষে আপনাদের নিজ নিজ সংবাদ মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য ও যৌক্তিক দাবীসমূহ কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপনের আহবান জানাচ্ছি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করছি।

এস.এম কামাল আহমেদ                               মো.শওকত হোসেন

আহবায়ক                                        সদস্য সচিব

বিসিএস সাঃ শিঃ ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি                            বিসিএস সাঃ শিঃ ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটি

৪ অক্টোবর সকাল দশটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিতব্য সংবাদ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতকৃত বক্তব্যটি হুবহু প্রকাশ করা হলো।    

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036640167236328