জাতীয়করণের সরকারি আদেশ চাই - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণের সরকারি আদেশ চাই

জহুরুল ইসলাম |

জাতীয়করণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি স্কুল কলেজ বিহীন উপজেলাসমূহে একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। ২৮৫টি কলেজের অধিকাংশ কলেজ দানপত্র দলিল সম্পন্ন করে দিয়েছে।এখন উক্ত ২৮৫ টি কলেজ জাতীয়করণের সরকারি আদেশ (জিও)জারির অপেক্ষায় প্রহর গুনচ্ছে। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে আত্তীকরণ বিধি নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন। এবিষয়ে দৈনিক শিক্ষা অনলাইন পত্রিকায় পর্বে পর্বে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল এই যে লেখা যারা লিখছেন তারা আসলে কারা? তারা কি আসলে সরকারের সূজন? এদেরকে কি সরকার আত্তীকরণ বিধি প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছে? এ্সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে মতামত প্রকাশের জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে।

উভয় পক্ষ যেভাবেই আত্তীকরণকে দেখতে চায়, এ দেখার যেমন তাদের অধিকার আছে ঠিক তেমনি  আত্তীয়করণ করা যাঁর এখতিয়ার তাঁর তেমনি দায়িত্বও রয়েছে।এই দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংগালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে কলেজ জাতীয়করণ করেছেন এবং যুগোপযোগী শিক্ষকবান্ধব আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি করেছেন। এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা জানাই।  এই কমিটি নিরলস ভাবে যখন কাজ করে যাচ্ছেন ঠিক তখনই অতি উৎসাহি কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার গঠিত কমিটির কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি যেন বিলম্বিত হয়, সরকারের সফলতা যেন প্রশ্নের সম্মুখিন হয় এ চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে।

এই অপচেষ্টায় লিপ্ত শিক্ষকগণ দৈনিক শিক্ষাডটকম পত্রিকায় লিখেছেন ‘জাতীয়করণ তালিকাভূক্ত শিক্ষকরা যেমন চায়’ আর শেষে লিখল জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতি। এটা কি ধরনের আচরণ তা আমার এবং জাতীয়করণ তালিকাভূক্ত কলেজ শিক্ষকদের বোধ্যগম্য নয়। এ যেন গায়ে মানেনা আপনি মোড়ল অবস্থা।উনারা স্বঘোষিত নেতা হয়ে জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ অধ্যক্ষ সমিতি গঠণ করেছিলেন যার বর্তমান নাম জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতি। যেখানে সাধারণ শিক্ষকদের কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না তা আমার ও জাতীয়করণ তালিকাভূক্ত কলেজ শিক্ষকদের জানা নেই।তারা তাদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। তারা নিজেদেরকে সরকার গঠিত কমিটির চেয়ে অধিকতর বিজ্ঞ মনে করে জাতীয়করণ তালিকাভূক্ত কলেজ শিক্ষকদের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন।আবার তারা তাদের কলেজে বসে সাধারণ শিক্ষকদেরকে বলছেন আপনাদের জন্য প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের সরকারি আদেশ(জিও) জারি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারিকরণের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন গায়ে মানেনা আপনি মোড়লরা আর দোষ দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষকদের। এহেন আচরণ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখুন, গৃহ বিবাদ ডেকে আনবেন না, এতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। দয়া করে সাধারণ শিক্ষকদেরকে পতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবেন না।

জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির স্ব-ঘোষিত নেতাগণ মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবরে আত্তীকরণ বিধি প্রণয়ন কমিটিতে তাদের সমিতির দুইজন সদস্যকে অন্তর্ভূক্ত করার আবেদন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তাদের মতামত জানার জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয় বিধি প্রণয়ন কমিটির একটি সভায় উক্ত সমিতির দুইজন সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান। উক্ত সভায় জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির স্ব-ঘোষিত নেতাদ্বয় এর কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনারা কিভাবে নেতা হলেন। জবাবে তাঁরা উত্তর দেন যে,আমরা ছাড়া অন্য কেউ কি আপনাদের সাথে এ সমস্যা নিয়ে কি কখনও কথা বলেছে কিনা? যদি কেউ কথা না বলে থাকে তাহলে আমরাই তো এ সমস্যা নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলেছি। তাই আমরা জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা।

আমি বিনয়ের সাথে জাতীয়করণ লক্ষ্যে অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির নেত্রীবৃন্দের কাছে জানতে চাই যে আপনারা কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং কোন কোন সাধারণ শিক্ষকদেরকে সম্পৃক্ত করে আপনাদের সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি করেছেন?

জাতীয়করণ লক্ষ্যে  প্রাথমিক অনুমোদিত কলেজ শিক্ষক সমিতির স্ব-ঘোষিত নেতাগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আত্তীকরণ বিধি প্রণয়ন নির্দেশিকা প্রদানের জন্য আবেদন দিয়েছেন যা ইতিমধ্যেই দৈনিক শিক্ষা ডটকম পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।

বি সি এস শিক্ষা সমিতি ইতিমধ্যেই আত্তীকরণ প্রসঙ্গে কি চায় সে সম্পর্কে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তাদের অতি উৎসাহি আচরণ দেখে মনে হয় সরকার তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। সরকার আত্তীকরণ বিধি প্রণয়ন এর জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে।যে কমিটি নিরলসভবে কাজ করে যাচ্ছে।কিন্তু সেই কমিটি যেন যথাযথভাবে কাজ না করতে পারে প্রতিনিয়ত সে চেষ্টা করে যাচ্ছে বি সি এস শিক্ষা সমিতি।

বি সি এসশিক্ষা সমিতি নানামুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মাধ্যমে এবং অযৌক্তিক যুক্তি উপস্থাপন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ও সাহসিকতাপূণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নটরাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।অসর্মথিত সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছে যে, সরকার কর্তৃক গঠিত আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণয়ন কমিটি বিধিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।

নতুন তৈরিকৃত আত্তীকরণ বিধিমালার কি আছে এমন  তথ্য বি সি এস শিক্ষা সমিতি জানতে পেয়ে এ বিধি যাতে কার্যকরী না হয় বা বাস্তবায়িত না হয় সে চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠছে। তারা তাদের সমিতির নেতাদের মাধ্যমে শিক্ষা মনন্ত্রালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের উপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে এবং নতুন তৈরিকৃত আত্তীকরণ বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে তারা মানবেনা বলে হুমকী দিয়ে যাচ্ছে।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের হুমকীমূলক প্রতিবাদের কি কোন প্রতিকার নেই? তাছাড়া বি সি এস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নো বি সি এস নো ক্যাডার শ্লোগান দিয়ে মনোগ্রাম তৈরি করে আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে হেয় পতিপন্ন করে অশ্লীল ভাষায় পোষ্ট দিচ্ছে। দয়া করে আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে হেয় পতিপন্ন করে অশ্লীল ভাষায় পোষ্ট  দিবেন না এবং কি আত্তীকৃত শিক্ষকদেরকে  পতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাবেন না। আর মনে রাখবেন আত্তীকৃত কোন শিক্ষক আপনাদের কোন পদে আত্তীকৃত হচ্ছেনা, তারা তাঁদের সৃজনকৃত পদে আত্তীকৃত হচ্ছে। বরং এসব পদে যাঁরা নিয়োগ পাচ্ছে তাঁরা অবসরে গেলে বা যেকোন কারণে পদটি শূন্য হলে সেপদে আপনারাই নিয়োগ পাবেন। যে সব পদ আত্তীকৃত হচ্ছে সেসব পদের অধিকাংশই প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে শূন্য হয়ে যাবে। আর এখনই ২৮৫টি অধ্যক্ষ ও প্রায় সমান সংখ্যক উপাধ্যক্ষ পদে আপনারাই নিয়োগ পাচ্ছেন। যাঁরা আত্তীকরণ হচ্ছে তারা আপনাদের ক্যাডারে আত্তীকৃত আর আপনারা তাঁদের পদে আত্তীকৃত। তাই পরশ্রীকাতর না হয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।

সকল পক্ষেরই মনে রাখা উচিত যে, দেশে এই প্রথম বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হচ্ছে না এর আগেও হয়েছে। পূর্বে যেভাবে জাতীয়করণ হয়েছে এখনও সেভাবেই জাতীয়করণ হবে।

আসুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা ও  ভরসা রাখি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনভাবেই সাধারণ শিক্ষক সমাজকে বঞ্চিত করবেন না কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ২৮৫টি কলেজ সরকারিকরণের ঐতিহাসিক ও সাহসিকতাপূণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ  ঐতিহাসিক ও সাহসিকতাপূণ সিদ্ধান্তের জন্য বাংগালি জাতি চির কৃতজ্ঞ।

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে যে, Justice delay justice denied. তাই অনতিবিলম্বে প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জহুরুল ইসলাম: মধুপুর, টাংগাইল।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075578689575195