জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-২) - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান (পর্ব-২)

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন চায় জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের একাংশ।

নতুন বিধিমালা প্রণয়নে নয়টি প্রস্তাবসহ শিক্ষক-কর্মচারি আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০ কেন বিতর্কিত তার ব্যাখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন তারা।

চিঠিটি দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল। আজ পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব-

 

আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০এর বিতর্কিত ধারা-উপধারাঃ

০১। ধারাঃ ২ (গ) (কার্যকর চাকুরীকাল)

০২। ধারাঃ ২ (ছ) (শিক্ষাগত যোগ্যতা)

০৩। ধারাঃ ০৩ (১,২) (এডহক নিয়োগ)

০৪। ধারাঃ ০৬ (৪,৫) (চাকুরী নিয়মিতকরণ)

০৫। ধারাঃ ০৭ (১,২,৩) (জেষ্ঠতা ও পদোন্নতি)

ধারা: ২ (গ) (কার্যকরকাল চাকুরীকাল) কেন বিতর্কিত?

(ক) এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের কার্যকর চাকুরীকাল ৫০% গণনা করার বিধান সম্পূর্ন অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক ও অমানবিক। কারণ এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের চাকুরী ১৯৮৮ সাল থেকে অধিকতর আইনী কাঠামো দ্বারা সুরক্ষিত যা পূর্বে ছিলনা। এমপিওভূক্ত শিক্ষকগন এখন জাতীয় রাজস্ব বাজেট, জাতীয় বেতনস্কেল, জাতীয় বেতন কোডের কোডের অধীনে এমপিও শীট ও সরকার প্রদত্ত সার্ভিস ইনডেক্স নং এর মাধ্যমে ১০০% Government-salaried employees মর্যাদার অধিকারী এবং শিক্ষামন্ত্রনালয়ের বিধি-বিধান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান, কল্যান ট্রাস্ট আইন-১৯৯০, কল্যান ট্রাস্ট প্রবিধানমালা-১৯৯৯, অবসর সুবিধা আইন-২০০২, অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা-২০০৫ ইত্যাদি দ্বারা তাঁদের চাকুরী নিয়ন্ত্রিত এবং সর্বোপরি, এমপিও শীট এবং ডিজিতে বা ব্যানবেইসে রক্ষিত শিক্ষকতথ্য সার্ভার দ্বারা তাঁদের কার্যকর চাকুরীকাল এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমানযোগ্য।

(খ) উল্লেখ্য যে- ১৯৮০ সালের পূর্বে বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের জন্য কোনো সার্ভিস রুলস্, জাতীয় বেতনস্কেল, ইনডেক্স নং, এমপিও ইত্যাদি ছিলনা। সেকারনে প্রথম আত্মীকরন বিধিমালা-১৯৮১ প্রনয়নকালীন সরকারের হাতে বেসরকারি শিক্ষকদের কার্যকর চাকুরীকাল প্রমানের কোন নির্ভরযোগ্য প্রমানপত্র না থাকার কারনে ১৯৭৮ সাল থেকে আত্মীকৃত শিক্ষকদের ৫০% কার্যকর চাকুরীকাল কেটে বাকী ৫০% গণনা করে আত্মীকরন করা হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৫০% চাকুরীকাল কর্তন করা হলে আইনগত জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।

(গ) রেফারেন্স হিসেবে অবসর সুবিধা আইন-২০০২ এর অধীনে প্রনীত এসআরও নং ০৬/আইন/২০০৫ তাং ০৮/০১/২০০৫ এর উপবিধি ২(চ-তে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের কার্যকর চাকুরীকালের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে – ‘‘কার্যকর চাকুরীকাল অর্থ মোট চাকুরীকাল হইতে অসাধারন ছুটি, কর্তব্যকাল হিসাবে গণ্য হয় নাই এমন সাময়িক বরখাস্তকাল, এমপিও বর্হিভূত চাকুরীকাল, অননুমোদিত অনুপস্থিতি ও চাকুরীর বিরতি ব্যতীত অবশিষ্ট চাকুরীকাল।’’ (সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং- ২৩-২৮)

এখানে ৫০% চাকুরীকাল কর্তনের কোন কথা নেই। যেটুকু কর্তনের কথা বলা হয়েছে সেটুকু যেকোন সরকারি চাকুরির বেলায়ও প্রযোজ্য। একই শিক্ষা মন্ত্রণনালয়ের জারিকৃত দুই SRO-তে দুই ধরনের কার্যকর চাকুরীকালের সংজ্ঞা প্রদান অযৌক্তিক ও সাংঘর্ষিক।

(ঘ) সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্বখাতে স্থানান্তরের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনার বিধান রয়েছে। তাহলে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের বেলায় কেন বৈষম্য? (সংযুক্ত পৃষ্ঠা নং-২৯-৩১)

 বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের বেতন এখন আয়কর প্রদানের আওতায় আনা হয়েছে। আয়কর নেওয়ার সময় ১২ মাস হিসাব করে তথা বাৎসরিক হিসেবে নেওয়া হয়। কিন্তু চাকুরীকাল গণনা করার ক্ষেত্রে ৫০% গণনা করার প্রবিধান প্রহসনমূলক।

(ঙ) বেসরকারি কলেজে ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনা করেই ডিজি কর্তৃক বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের প্রমোশন তথা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারি অধ্যাপক, সিনিয়র প্রভাষক পদে পদোন্নতি ও বেতন স্কেল প্রদান করে থাকে। তাই ৫০% কার্যকর চাকুরীকাল কর্তন অযৌক্তিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক ও আইনবর্হিভূত।

(চ) সরকারি ও এফিলিয়েটিং বিশ^বিদ্যালয়ের বিধিমালা তথা সরকারি আইনের অধীনে যে চাকুরীর দালিলিক নিয়োগ, যোগদান, সরকারি বেতন, পদোন্নতি, অবসর, পেনশন, শাস্তি ইত্যাদি আছে সেই চাকুরীর পূর্ণ স্বীকৃতি বা ১০০% গণনাযোগ্য হবেনা- এটি চরম বৈষম্যমূলক। শুধুমাত্র বেসরকারি কলেজ হওয়ার কারনে তথা বিশেষ গোষ্ঠী বিবেচনায় বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের চাকুরীকাল ১০০% গণনা না করার বিধান মৌলিক অধিকার পরিপন্থি।

(ছ) সরকারি ও বেসরকারি কলেজ শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। আর তা হলো ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান। দেশের প্রায় ৯০% শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। পাবলিক পরীক্ষায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পারফরমেন্স বরাবরই সরকারি কলেজের তুলনায় ভাল। তাহলে বেসরকারি কলেজের চাকুরি কেন ১০০% গণনা করা হবে না তা বোধগম্য নয়।

(জ) বর্তমানে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকগন সরকারি কলেজের শিক্ষকদের ন্যায় পূর্নকালীন শিক্ষক হিসেবে একই ডিজি, একই মন্ত্রনালয়, একই কারিকুলাম, একই সিলেবাস, একই টেকস্ট বই, একই শিক্ষানীতি, একই পাবলিক পরীক্ষা, একই কর্মঘন্টা, একই ছুটি পঞ্জিকার অধীনে চাকুরী করছেন। তাই এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনা না করা বৈষম্যমূলক হবে।

(ঝ)আত্মীকরন বিধিমালা-২০০০ অনুযায়ী শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট জাতীয়করণকৃত কলেজের চাকুরীকাল গণনা করা হয়।পূর্ববর্তী এক বা একাধিক কলেজের বৈধ নিরবিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা বা চাকুরীকাল গণনার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সরকারি ও বেসরকারি উভয় কলেজের ক্ষেত্রেই একটি স্বাভাবিক স্বীকৃত প্রক্রিয়া। সরকারি কলেজে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয় ট্রান্সফার বা প্রমোশনের কারনে এবং বেসরকারি কলেজে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয় পুনঃ নিয়োগের মাধ্যমে। তাই পূর্ববর্তী এক বা একাধিক কলেজের অভিজ্ঞতা তথা কার্যকর চাকুরীকাল গণনা না করা হলে অনেক শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

(ঞ)আবার সংশ্লিষ্ট জাতীয়করণকৃত কলেজের ০৪ বছরের কম চাকুরীকাল গণনা না করার বিধান সম্পূর্ন অন্যায্য। কারণ, এ বিধি আরোপ হলে  সংশ্লিষ্ট জাতীয়করনকৃত কলেজে জাতীয়করনের অব্যবহিত পূর্বে যোগদানকারী অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বিশেষকরে অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের যারা একাধিক কলেজে চাকুরী করেছেন তাঁদের কার্যকর চাকুরীকাল শূণ্য হবে। সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক কি অন্য সরকারি কলেজে যোগদান করলে পূর্ব অভিজ্ঞতা বাদ যাবে?

(ট) বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদটি একটি সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক পদ। অন্যান্য শিক্ষকদের ন্যায় অধ্যক্ষগন রোজার ছুটি, শীতকালীন ছুটি গ্রীস্মের ছুটি ইত্যাদি ভোগ করতে পারেন না। প্রশাসনিক কারনে সরকারি ছুটির দিনেও তাঁদেরকে কাজ করতে হয়। এ সকল কারনে আত্মীকরণ  বিধিমালা-১৯৮১ তে অধ্যক্ষদের ১০০% কার্যকর চাকুরীকাল গণনা করার  বিধান ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ২০০০ বিধিতে এটি প্রতিস্থাপিত হয়নি।

আরও পড়ুন

জাতীয়করণ: তালিকাভুক্ত শিক্ষকরা যেমন চান

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013330936431885