জাতীয়করণ নিয়ে ফুলবাড়ীয়া ট্র্যাজেডির দায় কার? - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয়করণ নিয়ে ফুলবাড়ীয়া ট্র্যাজেডির দায় কার?

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ নিহত হবার ঘটনায় সারা দেশের শিক্ষক সমাজ ব্যথিত ও মর্মাহত। কেবল শিক্ষকরাই নন , দেশের যে সব সাধারণ নাগরিক এ ঘটনাটি জেনেছেন-তারা পর্যন্ত অবাক ও বিস্মিত। তার মৃত্যু দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি দীর্ঘদিনের চরম বৈষম্য, অবহেলা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের এক নজিরবিহীন উদাহরণ। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রয়াত এ জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তান, শিক্ষার্থী-শুভার্থী ও সহকর্মীদের সান্ত্বনা দেবার ভাষা কী হতে পারে, সে আমাদের জানা নেই। তবে, যাদের অমানবিক নিপীড়ন-নির্যাতনে একজন মহান শিক্ষকের মৃত্যু ঘটেছে, তাদের জন্য সারা জীবন ঘৃণার থুথু আমরা ছিটিয়ে যেতে পারবো। দেশের কয়েক লক্ষ বেসরকারি শিক্ষক আজ বাকরুদ্ধ। তাদের একজন সহকর্মীর এ রকম বিয়োগান্ত প্রস্থান কোনদিন তাদের কাম্য ছিল না।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? সেদিন ফুলবাড়ীয়া কলেজে যে ঘটনাটি ঘটেছিল, তার প্রেক্ষাপট কী ছিল? হুট করে তো এ ঘটনাটি ঘটে নাই। ধরে নিলাম, অধ্যাপক কালাম হার্টের রোগী ছিলেন। কিন্তু, সেদিনের ঘটনা কী তার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে নাই? কারো নির্মম-নির্যাতনে কোন রোগী মারা গেলে সে কী রোগের দায়, না নির্যাতনকারীর? অবশ্যই নির্যাতনকারীর।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে- এ দেশে যে কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে যে সব তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, সে সবের তদন্ত প্রতিবেদন হয়ত আলোর মুখ দেখেনা নয়ত সে প্রতিবেদনগুলো নিরপেক্ষ না হয়ে সত্যের অপলাপ হয় মাত্র। ফুলবাড়ীয়ার ঘটনায় সম্ভবতঃ তিনটি না ক’টি যেন তদন্ত কমিটি হয়েছে। একটির প্রাথমিক তদন্তের একটু হলে ও ইঙ্গিত জনসমক্ষে এসেছে। তাতে গতানুগতিকতা পরিহারের কোন প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়নি।

ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজটি উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় কলেজ। সরকারিকরণ হবার সকল শর্ত বিদ্যমান। আরেকটি অপেক্ষাকৃত নতুন, নন এমপিও এবং জাতীয়করণ হবার বেশীর ভাগ শর্ত অনুপস্থিত। এমন কলেজ জাতীয়করণের তালিকায় আসে কী করে? প্রথম পর্যায়ে ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ তালিকাভুক্ত ও জাতীয়করণের জন্য পরিদর্শন সমাপ্ত হয়। দ্বিতীয় দফা এটি বাদ পড়ে উপজেলার অন্য কলেজটি তালিকাভুক্ত হয় কী ভাবে? স্থানীয় সংসদ সদস্য নাকি জাতীয়করণ করিয়ে দেবার নামে বহু টাকা কামিয়ে নিয়েছেন এবং আরো টাকার বিনিময়ে বহু শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তিতে তদপেক্ষা বেশী টাকার বিনিময়ে নন এমপিও কলেজটি তালিকাভুক্ত করিয়ে নেন। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এর প্রতিবাদে ফুলবাড়িয়া কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেন।

গত ২৭ নভেম্বর রবিবার একটি কেন্দ্রিয় শিক্ষক সমিতি এমপিও শিক্ষকদের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা ও জাতীয়করণের দাবীতে সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে মানববন্ধন পালনের কর্মসূচি দিয়েছিল। ফুলবাড়ীয়ায় কলেজ জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়ার ধারাবাহিক প্রতিবাদ কর্মসূচির সাথে সেদিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পৃথক মাত্রা পেয়েছিল নিশ্চয়। উত্তেজনা অন্যান্য দিনের চেয়ে হয়ত বা একটু বেশী ছিল।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ইঙ্গিতে সেদিনের ঘটনায় ফুলবাড়িয়া কলেজ ভবনে তারা ভাংচুরের আলামত দেখতে পান নাই। তাতে প্রতীয়মান হয়, কলেজে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাড়াবাড়ি করেছ পুলিশ। রাস্তায় প্রতিবাদকারীদের সমবেত হতে দেয় নাই তারা। সেটা না হয় মেনে নেয়া গেল। কিন্তু, কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর নির্মম ও পাশবিক অত্যাচারের দায় পুলিশ কী এড়াতে পারবে?

স্থানীয় সংসদ সদস্য তার দায় কী করে এড়াবেন? বিচ্ছিন্ন আকারে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণের পুরো প্রক্রিয়াটিই কী এ সব কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে নাই? জাতীয়করণ নিয়ে এ ভাবে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন জনে নানা ভাবে ফায়দা লুটবার অপচেষ্টায় লিপ্ত হবে- সে আশংকা আগে থেকেই আমরা করে আসছি। ফুলবাড়িয়ায় ঘটেছে ও তাই। ফুলবাড়ীয়ার সে দিনের নৃশংস ঘটনার জন্য দোষীদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা চাই। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিচ্ছিন্ন জাতীয়করণের পথ পরিহার করে সকল স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ না করলে ফুলবাড়িয়ার ঘটনার কেবলি পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। এতে শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকারের শিক্ষার জন্য গৃহীত সকল ভালো উদ্যোগ বিতর্কে জড়িয়ে যাবে। সে আমরা কেউ চাইনে।

এক মাসের মধ্যে ফুলবাড়ীয়া কলেজের সভাপতির পদ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কলেজের অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করে কলেজটি জাতীয়করণের যে আশ্বাস দেয়া হয়েছে-তা প্রশংসনীয় বটে। ফুলবাড়ীয়ার যে পরিস্থিতি ঘটনার জন্ম দিয়েছিল, সে আজ সারা দেশে বিদ্যমান। দেশের সকল বেসরকারি স্কুল-কলেজের জন্য এমন একটি শুভ সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে। কেবল তা হলেই অধ্যাপক আবুল কালামের বিদেহী আত্মা শান্তিতে ঘুমোতে পারবে।

লেখক: অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037429332733154