জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বেসরকারি কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের ৬ প্রভাষক। এই জালিয়াতিতে নাটের গুরু ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক গৌর চন্দ্র মন্ডল।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয় এমপিওভুক্ত না হলেও ওই ছয় শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গৌর মন্ডল তাদেরকে এমপিওভুক্ত করেছেন। গৌড়র সহযোগী ছিলেন কয়েকজন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। মূলত: বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি স্কুলের শিক্ষক গৌড়। প্রেষণে উপ-পরিচালক পদে বসেছেন।
ছয় প্রভাষকরা হলেন গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর বঙ্গরত্ন ডিগ্রি কলেজের অজিত কুমার মন্ডল ও কোটালিপাড়া নেছার উদ্দিন কলেজের নিমচাঁদ হাওলাদার, নেত্রকোনা পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজের জাফরিন সুলতানা ও পূর্বধলা হাফেজ জিয়াউর রহমান কলেজের নাদিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা তালার পাটিকেল ঘাটা এইচ আর কলেজের পলাশ ঘোষ এবং নোয়াখালী সুধারামের চরমটুয়া কলেজের মাজেদুল ইসলাম।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের দীর্ঘদিন ধরে এমপিও বঞ্চিত কিছু শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে টনক নড়ে মন্ত্রণালয়ের।
ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুসরাত জাবীন বানু স্বাক্ষরিত এক আদেশে মাউশিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। মাউশিকে এ বিষয়ে সারাদেশে ওই দুই বিষয়ে কর্মরত প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদান করতে বলেছে। একইসাথে ওই ছয় প্রভাষকের এমপিওভুক্ত করণের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছে।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ দেয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক গৌড় চন্দ্র মন্ডল এমপিওভুক্তিতে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘এমপিও বাতিলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভুলক্রমে এমপিওভুক্তি হয়েছে।’
এমপিওভুক্তির মূল দায়িত্বে থাকা মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. এলিয়াছ মনে করেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতি করার সুযোগ নেই এবং বিষয়টি তিনি কয়েকজনকে বুবিয়েছেন।
দেড় বছর আগে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক এলিয়াছ হঠাৎ করেই মাগুরার একটি সরকারি কলেজ থেকে তদবির করে মাউশির এত গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক পদে বাগিয়ে নেন। এই পদে যোগদানের আগে তিনি এমপিও শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। গত সাড়ে তিন বছরে শুধু এমপিও দুর্নীতিই হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারি তদন্তেও এমপিও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না। শিগগিরই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।