উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ হাটহাজারী পার্বতী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী। ষাটের দশকে নির্মিত দ্বিতল ভবনটি দীর্ঘ ১ যুগ ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বিকল্প ভবন তৈরি হচ্ছে না। ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ তালিকায় স্থান পাওয়া শতবর্ষী এ বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনটিতে রয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়, শিক্ষক মিলনায়তন, স্পোর্টস অফিস ও ডিভেটিং সোসাইটি কার্যালয়। একই ভবনে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন ক্লাস করে যাচ্ছে। ঝুঁকিমুক্ত নয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অফিসের কর্মচারীরাও। স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্পে যে কোনো মুহূর্তে শত শত প্রাণহানির আশঙ্কা করছে অভিভাবক ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। ৫.২ একর বিশিষ্ট এ বিদ্যালয়ে মোট ভবন রয়েছে ৫টি। ৪টি বাণিজ্যিক মার্কেট ও একটি নির্মাণাধীন মার্কেটও রয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ তালিকায় স্থান পাওয়ার পর গত ৭ মে স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের সম্পত্তি সরকার বরাবরে হস্তান্তর করেছে। তখন স্কুল ফান্ডে টাকা ছিল ৬০ লাখ টাকা। সম্পত্তি ও আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এ বিদ্যালয়ের ভবন সমূহে ছাত্র সংকুলান না হওয়ায় জরাজীর্ণ ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ মূল ভবনে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়টি ২০১৫-১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দু’তলা মূল ভবনটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভবনে বর্তমানে প্রায় ৩ শত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। ভবনের ছাদের বেশ কয়েক জায়গার আস্তর ঝরে গিয়ে লোহার রড দেখা যাচ্ছে। ২য় তলার বারান্দা অনেকটা দেবে গেছে। ৮টি বড় ফাটলসহ শ্রেণিকক্ষের ছাদের বেশ কয়েকটি স্থানে আস্তর ঝরে গেছে। দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে ছাদের রডগুলো। ফাটলগুলো যাতে নজরে না আসে সে জন্য মেকআপ হিসেবে দেওয়া হয়েছে রং এর ছোঁয়া।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, বিভিন্ন সময় ছাদের আস্তর অংশ বিশেষ ঝরে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক আহত হয়েছে। এসব ফাটল মূলত ৭-৮ বছর ধরে হয়েছে। নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে গেলে শিক্ষক সালাহ উদ্দীনের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় দেওয়ালের বড় বড় ফাটলের ব্যাপারে তিনি ক্লাস নিতে নিজেও শংকিত বলে জানান। এই শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা জামান ও সাঈদ মাহদিসহ শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে ক্লাস করতে নিয়মিত আতঙ্কে থাকেন বলে জানায়। শিক্ষক মোঃ ইউসুফ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ ইলিয়াছ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়া ও শিক্ষক মিলনায়তনে আতঙ্কেরে সঙ্গে অবস্থান করার কথা জানান।
এই ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে শিক্ষার্থীসহ আমরাও মারাত্মক শংকায় থাকি। গত ২০ জুলাই ভবনের বিষয়ে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসরা বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ ছাড়া নতুন একটি ভবনের জন্য গত বছর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন করেছিলাম কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাইনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার উননেছা শিউলী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।