স্কুল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত সবচাইতে নিরাপদ বলিয়া বিবেচিত হইলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। অদক্ষ চালক, ভারসাম্যহীন বাহন, জবাবদিহিতার অভাবে প্রায়ই বাচ্চারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বিষয়টি এখানেই শেষ নহে, ক্ষেত্রবিশেষে বাচ্চাদের সড়ক দুর্ঘটনার শিকারও হইতে হয়। যানজটের কারণে ঝুঁকি লইয়া উল্টাপথে চলা, বাচ্চাদের যত্রতত্র ছাড়িয়া যাওয়াসহ মেয়েশিশুদের সহিত ভ্যানচালকদের যৌন নিপীড়নের মতো জঘন্য কার্যকলাপের অভিযোগ বিষয়টিকে আরো অধিক দুশ্চিন্তার কারণ হিসাবে দাঁড় করাইয়াছে।
নগরীর অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের সহিত ভ্যানমালিকদের যোগাযোগহীনতা বাচ্চাদের নিরাপত্তা সংকটকে আরো প্রকট করিয়া তুলিয়াছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার প্রদত্ত তথ্যানুসারে জানা যায়, ঢাকার যানজট নিরসনে ১৯৮৬-৮৭ অর্থবত্সরের পর হইতে নূতন করিয়া আর কোনো অযান্ত্রিক যানকে নিবন্ধন প্রদান করা হয় নাই। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াতের সঙ্গে জড়িত বলিয়া এইসব অবৈধ ভ্যানগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়।
পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশেই স্কুল পরিবহনব্যবস্থাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকাইলে আমরা একদিকে যেমন তাহাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়নের চিত্র দেখি, অপরদিকে শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূরক বিষয়সমূহের অগ্রগতিও বেশ লক্ষণীয়। সেখানকার অধিকাংশ স্কুলেই কর্তৃপক্ষের অধীনে কিংবা তাহাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাচ্চাদের জন্য আরামদায়ক এবং নিরাপদ বাহনের ব্যবস্থা আছে। সর্বোপরি সরকারিভাবেও ন্যূনতম খরচে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা আছে। বাংলাদেশেও অনেক ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নিরাপদ ও আরামদায়ক চার চাকার বাহন ব্যবহূত হয়।
কিন্তু তাহা সর্বসাধারণের সাধ্যের বাহিরে। অধিকন্তু এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অতি নগণ্য। অন্যদিকে ঢাকা শহরের বাংলা মাধ্যমের অধিকাংশ স্কুলেই সংস্কারবিহীন অতি পুরাতন ভ্যানেই বাচ্চাদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান ভরসা। ছয় জন বড় বাচ্চার জন্য এই ধরনের ভ্যানে বসিয়া স্কুলে যাতায়াত যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের নিকট ভ্যান মালিক বা চালকের কোনো তথ্য না থাকা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘আজকের শিশু আগামীদিনের নাগরিক’ এই ভবিষ্যত্ কর্ণধারদের ভবিষ্যেক সুন্দর ও নিরাপদ করিতে প্রয়োজন কিছু যুগোপযোগী কার্যকর উদ্যোগ। উল্লেখ্য ২০১১ সালে সরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া ‘স্কুল বাস সার্ভিস’ এর আওতায় পরিবহনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করিতে হইবে, সিটি করপোরেশনের নিবন্ধনহীন ভ্যানগুলিকে দ্রুত নিবন্ধনের আওতাভুক্ত করিয়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করিতে হইবে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভ্যানমালিকদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণসহ শিক্ষার্থীদের জন্য আরামদায়ক বাহনের ব্যাপারে সতর্ক থাকিতে হইবে। প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভ্যানমালিকদের কিছু আবশ্যকীয় নিয়মাবলী পালনেও বাধ্য করিতে হইবে। সর্বোপরি অভিভাবকদের সচেতনতাও বাচ্চাদের নিরাপদ স্কুল গমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করিবে।