কলাপাড়ার মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পরিত্যক্ত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। ভবনের ছাদ,ভীম ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে একটু বাতাসেই। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানিতে ভরে যায় ভবনটি। ভবনে ওঠার সিড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। ভবনের বাইরের ও ভিতরের দেয়ালের পলেস্তারা একটু পরপর খসে পড়ছে। কিন্তু তারপরও ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে না। এ ঝুঁকিপূর্ন ভবনেই চলছে এখনও ক্লাস ও পরীক্ষা।
প্রায় ১৫ বছর আগে পরিত্যক্ত এই সাইক্লোন সেল্টারের নিচতলায় এখনও ক্লাস হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ন এই ভবন ঘেষে রাস্তা দিয়ে গিয়ে ক্লাস করছে প্রতিদিন হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া কলেজ মাঠে প্রতিদিনই বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলা দেখতে সাধারণ মানুষ এই ভবনের নিচে অবস্থান নেয়। এ কারনে ভবন ধ্বসের আশংকায় চরম ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের জীবন।
এই পরিত্যক্ত সাইক্লোন সেল্টার ভেঙ্গে না ফেলার কারনে ঝড় জলোচ্ছাসে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় না নিতে পারছে না কলাপাড়া পৌর শহরের তিনটি ওয়ার্ডের মানুষ। এ কারনে ঝড় হলেই চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে আন্ধারমানিক নদী সংলগ্ন ওয়াপদা রাস্তার বাইরের ও ভিতরের হাজার হাজার পরিবার।
জানাযায়, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত কলাপাড়ার মোজাহারউদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রী অনার্স কলেজে এই তিনতলা সাইক্লোন সেল্টারটি নির্মিত হয় ১৯৭৩-৭৪ সালে। কিন্তু নিম্মমানের কাজ করায় ১৯৯৮ সালের দিকে ভবনের তৃতীয় তলাটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। ২০০০ সালের পর দ্বিতীয় তলাটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হলেও নিচতলায় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস হতো। কিন্তু ২০০৭ সালের সিডরের পর নিচতলাটি ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে সংস্কার করে নিচতলা টি ক্লাসরুমের জন্য ব্যবহার উপযোগী করলেও বর্তমানে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কলেজে এইচএসসি, ডিগ্রী, উম্মুক্ত এইচএসসি ও ডিগ্রী এবং অনার্স কোর্সে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক রয়েছে ৭২ জন। কিন্তু শ্রেণি কক্ষ রয়েছে মাত্র ২৪ টি। কলেজে ছাত্র হোস্টেল, অডিটরিয়াম ও অধ্যক্ষের আবাসিক কোয়ার্টার থাকলেও বর্তমানে সব ভেঙ্গে গেছে সেই সিডর ও মহাসেনের তান্ডবে। কিন্তু আর্থিক সংকটে আর নতুন করে ভেঙ্গে যাওয়া স্থাপনাগুলো নির্মান হয়নি। এ কারনে প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ন ভবনের নিচতলায় ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আবাসিক কোয়ার্টার নির্মান না করায় অনার্স কোর্সে অধ্যায়নরত দূরের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ২০/২৫ কিলোমিটার গাড়ি ও নদী পথে এসে ক্লাস করতে হচ্ছে।
কলেজে গিয়ে দেখাযায়, পরিত্যক্ত এই ভবনটির ছাদ ও ভীম ভেঙ্গে রড বের হয়ে গেছে। সিড়িতে উটলেই কেঁপে উঠে। একটু ছোঁয়াতে ভেঙ্গে পড়ছে পলেস্তারা। দড়জা-জানালা ভেঙ্গে গেছে আরও কয়েক যুগ আগে। কিন্তু তারপরও ক্লাস রুম সংকটে এখনও ভবনের নিচতলায় ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ ছাত্রী সুস্মিতা জানায়, জোড়ে বাতাস হলে ভবন থেকে পলেস্তারা ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু তারপরও ক্লাসরুম না থাকায় মাঝে মাঝে ভবনের নিচতলায় ক্লাস ও পরীক্ষা হয়। এছাড়া ভবনের পাশ দিয়ে গেলে প্রায়ই ভবনের পলেস্তারা খসে গায়ে পড়ে।
কলেজ সংলগ্ন একাধিক পরিবার জানায়, আগে ঝড় জলোচ্ছাস হলে তাঁরা ওই সাইক্লোন সেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নিতেন। আর এখন ভবনের যে অবস্থা তাঁতে যেকোন সময় গোটা ভবনটিই ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই ঝড়ের সিগন্যাল চললেও বিকল্প সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ঘরেই বসে থাকেন। গত মহাসেন তান্ডবে কলেজ অডিটরিয়াম ভবনটি ভেঙ্গে যায়। এখন সাইক্লোন সেল্টারটিও ভেঙ্গে পড়তে পারে।
কলেজ অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন জানান, ভবনটি এতোটাই ঝুঁকিপূর্ন যে ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেঁপে ওঠে। কিন্তু ক্লাসরুমে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা দূরে থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ছাত্র-ছাত্রীরা ভবনের পাশ দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। তাঁরা ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। কিন্তু জরুরী এই ভবন ভেঙ্গে ফেলা ও নতুন ভবন নির্মানের উদ্যেগ নেয়া হচ্ছে না।