নওগাঁর টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত ৮ মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ তারা বেতন পাবেন সেটার কোন নিশ্চিয়তাও নেই। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অর্থের অভাবে অনেকেই তাদের সন্তানদের লেখা-পড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু নওগাঁর এই ভোকেশনাইলই নয়, দেশের মধ্যে এরকম আরো ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এতে করে একদিকে যেমন তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে দ্রুত বেতন ভাতা পরিশোধ ও প্রকল্পটিকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার দাবি জানিয়ে নওগাঁ টেক্সটাইল ভোকেশনালের শিক্ষক-কর্মচারীরা যৌথ স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে বস্ত্র খাতে দক্ষ জনবল তৈরী করার লক্ষ্যে ২০০৬ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন বস্ত্র পরিদপ্তর কর্তৃক আড়াই বছর মেয়াদে ১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট স্থাপন প্রকল্প নামে দেশের ১০ জেলাতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সুপারিন্টেন্ডেন্ট, ইন্সট্রাকটর, শিক্ষকসহ ১৫টি পদে জনবলসহ ইতোমধ্যে স্থায়ী অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রে সমৃদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জেলা পর্যায়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। একই প্রকল্পের আওতায় আবার ২০১৭ সাল থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ১২০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ন হয়ে বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট ,পলিটেকনিক, মেরিন, নার্সিং ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করছে। অনেকেই টেক্সটাইল মিলে চাকুরির সুযোগ পেয়ে আসছে। আবার অনেকেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেরাই আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৪ সালের জুন মাসে এসে শেষ হয় প্রকল্পের মেয়াদ।
এরপর বিদ্যমান জনবল দ্বারাই প্রকল্পের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং ৬ থেকে ৮ মাস পর পর থোক বরাদ্ধ থেকে তিন মাস করে বেতন ভাতা দেয়া হয়। প্রকল্প শুরুর পর থেকেই প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসলেও কার্যতঃ কোন কাজ হয়নি। এই অবস্থায় সর্বশেষ গত ২০১৬ সালের জুন মাসে তাদের বেতন ভাতা দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে তারা ঈদ উল আজহার উৎসবভাতাসহ আর কোন বেতন এখন পর্যন্ত ভাগ্যে জোটেনি তাদের। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন। নওগাঁ টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটে কর্মরত অফিস সহকারী নাজনীন আখতার বলেন, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছি। ঋন করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালাচ্ছি। দ্রুত বেতন না পেলে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধসহ না খেযে থাকতে হবে। একই প্রতিষ্ঠানের নৈশ প্রহরী গাজী সালাউদ্দিন বলেন, যে সব দোকানে বাকি করে চলছিলাম তারা বাকি বন্ধ করে দিয়েছে। সুদের ওপর টাকা নিয়ে কোন ভাবে সংসার চালাচ্ছি। বেতন না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ থাকবে না। ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১১ জন স্টাফের একই অবস্থা বিরাজ করছে।
এব্যাপারে বস্ত্র পরিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।