ঢাকাতেও পদে পদে হয়রানি, দুর্নীতি - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকাতেও পদে পদে হয়রানি, দুর্নীতি

কামরান সিদ্দিকী |

রাজধানীর নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের শিক্ষক রওশন হুমায়রাতুজ্জোহরা এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন গত বছর। তিনিসহ তিনজন শিক্ষক সব শর্ত পূরণ করে আবেদন করেছিলেন এ স্কুল থেকে। অথচ বাকি দু’জনের হলেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি তিনি। এর কোনো যথাযথ কারণ দেখাতে পারেননি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক (মাধ্যমিক) গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তবে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ২৬ মার্চের (গত) মধ্যেই হয়ে যাবে। বাস্তবে তা না হওয়ায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেন রওশন। পরে রাজধানীর বাইরের একটি স্কুলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন

তিনি। শিক্ষকদের এভাবে হয়রানি করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে গৌরচন্দ্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, টাকা ছাড়া ঢাকা অঞ্চলে এমপিওভুক্তি হয় না। এ অঞ্চলে থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে ডিডি অফিস পর্যন্ত তিন ধাপে এ টাকা দিতে হয়। প্রতি ধাপে ২০-২৫ হাজার টাকা লাগে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

হয়রানির শিকার শিক্ষকরা :রাজধানীর পল্লবী ডিগ্রি কলেজে জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর নিয়োগ পান এক শিক্ষক। কলেজটিতে জীববিজ্ঞানের অন্য এক শিক্ষকের পদ খালি থাকা সাপেক্ষে সে পদে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেন তিনি। আগের শিক্ষক রেহানা বেগমের পদ কর্তনের জন্য ২০১৬ সালের ৩ মার্চ কলেজের পক্ষ থেকে ডিডি অফিস বরাবর আবেদনও করা হয়। কিন্তু আবেদনটি ঝুলিয়ে রাখে ডিডি অফিস। কলেজের পক্ষ থেকে মাউশিকে এ ব্যাপারে জানানো হয়। দীর্ঘ এক বছর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রেহানা খানের পদ কর্তন বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন ডিডি গৌরচন্দ্র। আরও তিন মাস পর গত ২৫ মে এর অনুলিপি নেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। পল্লবী ডিগ্রি কলেজের একটি সূত্র জানায়, রেহানা খানের পদত্যাগপত্র জাল প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে উপপরিচালক গত ১৪ জুলাই ফাইল কর্তনের আবেদন বাতিল করেছেন। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা কলেজটিকে গত ১৯ জুলাই জানিয়েছেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসি) পরিচালক শওকত ইকবাল শাহীন জানান, ভোলা থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে এসে তার ছেলেকে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু উপপরিচালক গৌরচন্দ্র তাকে সেখানে ভর্তির সুযোগ দেননি। পরে মাউশির মহাপরিচালকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করান তিনি।

দুর্নীতির নেপথ্যে সিন্ডিকেট :হয়রানি কমাতে অনলাইনভিত্তিক আবেদনের পদ্ধতি চালু করছে মাউশি। অথচ সেখানেও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর তেজগাঁও জোনের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এমপিওর জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। অথচ আমাদের শিক্ষকরা আবেদন করলে নেটে ঢোকে না (আপলোড হয় না)। যদিও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কিংবা ডিডি অফিসে গেলে ঠিকই আপলোড হয়। আর এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে উপরি দিতে হয়।’

এমপিওর অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হয় তিন ধাপে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে আবেদন করার পর তা যায় জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। সেখান থেকে যায় ডিডি অফিসে। এ তিন ধাপেই টাকা দিতে হয়। ঢাকা অঞ্চলেও টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ঢাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, এমপিওভুক্তির সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের স্কুলের একাধিক শিক্ষককে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে টাকা দিতে হয়েছে। ডিডি অফিসের শীর্ষ পর্যায়ের এক সূত্র জানায়, ডিডি গৌরচন্দ্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটে রয়েছেন প্রোগ্রামার সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে এ সিন্ডিকেট অনিয়ম-দুর্নীতি করছে।

উপপরিচালকের বক্তব্য :দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে উপপরিচালক গৌরচন্দ্র মণ্ডল জানান, তার অফিসে এমপিওভুক্তির জন্য এক টাকাও লাগে না। এ নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তার কাছে নেই।

একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রসঙ্গ টেনে গৌরচন্দ্র বলেন, এমপিও সংক্রান্ত ৫১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে মাউশি তদন্ত করেছে। সেখানে এসব অভিযোগ বাতিল হয়েছে। সিন্ডিকেটের অস্তিত্বও অস্বীকার করেন তিনি।

অনলাইনে হয়রানি বিষয়ে তিনি বলেন, সফটওয়্যারে এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। এতে সঠিকভাবে আবেদন জমা হচ্ছে না। এ সমস্যা ভবিষ্যতে দূর হয়ে যাবে। (শেষ)

সৌজন্যে: সমকাল

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034470558166504