ঢাকা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

dhaka boardকর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে। ঢাকা বোর্ডের বিভিন্ন কাজে কর্মচারী নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দুর্নীতির কারণে উৎকণ্ঠায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কর্মচারী নেতাদের চাপে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ২৩ কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে (১৩ জন বিগত চেয়ারম্যানের আমলে নিয়োগ পাওয়া) পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রীর চাপে তা বাতিল করে বেকায়দায় পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে তিনটি পরীক্ষা স্থগিত করে সংকটে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেন, ‘ঢাকা বোর্ডের কর্মচারী নেতারা জোরপূর্বক কর্মচারী নিয়োগ দিতে চেয়েছিল, আমি বিষয়টি জেনে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের নির্দেশ দিয়েছি। আর কারিগরি বোর্ডের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক পাচ্ছি না। তবে দুর্নীতি, কাজে গাফিলতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে কেউ রেহাই পাবে না।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

সরকারি নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে দেয়া ১০ কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নির্দেশের পর ওইদিন বিকালেই নিয়োগ বাতিল করেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু বক্কার সিদ্দিক। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া দশ কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল হতে পারে- এমন ধারণা করে তার আগেই ৪৯টি পদে নতুন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়া দশ কর্মচারীর নিয়োগ জায়েজ করতেই এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কর্মচারী নেতারা ২৩ জন কর্মচারীর নিয়োগ বহাল রাখতে চাই। এজন্য তারা চেয়ারম্যানের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। এটা মেনে নেয়া যায় না।’

জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ূন কবির ও সাধারণ সম্পাদক লোকমান মুন্সির চাপে বোর্ড চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক গণমাধ্যমে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই দশজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে ওই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধ ওই নিয়োগ বাতিল চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ঢাকা বোর্ডের ১৫১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষা বোর্ডের কাছে এ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র তলব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কর্মচারীদের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২৫ জুন বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়া দশ কর্মচারীর মধ্যে তিনজন কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লোকমান মুন্সির ভাই। আর সভাপতি হুমায়ূন কবিরের তিনজন আত্মীয় রয়েছেন। বাকি চারজনও তাদের সুপারিশেই নিয়োগ পায়।

এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘কর্মচারী নেতাদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগেরই কারণেই অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের আমলে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাদের নিয়োগটা ছিল, ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে। বেতন ছিল মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা মাসিক। এখানে অনিয়ম বা বাণিজ্যের কিছু নেই।’

শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়, কর্মচারী নেতারা কোন কাজ করে না, সারাক্ষণ তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর ২৩ কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল হওয়ায় নেতারা বৃহস্পতিবার মারামারিতে লিপ্ত হয়। দিনব্যাপী বোর্ডে চলে উত্তেজনা। দাফতরিক কাজ চলে ঢিমেতেতালায়। একপর্যায়ে বোর্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওইদিন আমি সেনানিবাসে একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলাম। কর্মচারীদের মারামারির কোন খবর আমার জানা নেই।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে শিক্ষা বোর্ডে পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মচারী রয়েছেন। নতুন নিয়োগের প্রয়োজন নেই। আর ময়মনসিংহ বিভাগ গঠন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন শীঘ্রই ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হবে। নতুন বোর্ড গঠন হলে ঢাকা বোর্ডের কাজ এমনিতেই অর্ধেক কমে যাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ন কবির বলেন, ‘নিয়োগটি বৈধ ছিল। এরপরও কী কারণে বাতিল করা হয়েছে, তার জন্য আদালতে যাব আমরা।’

কারিগরি বোর্ডে বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস

বারবার প্রশ্ন ফাঁসে বেকায়দায় পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলমান ডিপ্লোমা পরীক্ষা। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোম ইন টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সকল পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বা হচ্ছে। এতে সরকারি পলিটেকনিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। পরীক্ষা শুরুর পর গত সপ্তাহে ৫ দিনেই স্থগিত করা হয়েছে চারটি পরীক্ষা।

প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়াতে পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ম্যনুয়ালি (হাতে লেখা) প্রশ্ন তৈরি করে একাধিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করে কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে।

কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে থাকলে পুরো পরীক্ষাই প্রশ্নের মুখে পড়বে।’ তিনি এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

জানা গেছে, সারাদেশে গত ৭ জানুয়ারি পরীক্ষা শুরু হয়। ওইদিনের সকাল ও বিকালের সকল পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। এর দু’তিন দিন আগে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রথমে বোর্ডের কর্মকর্তারা আমলে নেয়নি। কিন্তু ৬ জানুয়ারি সর্বত্র প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পরলে পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়া হয়।

৭ জানুয়ারি ডিপ্লোম ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, অষ্টম পর্বের নিয়মিত, পঞ্চম, সপ্তম পর্বের অকৃতকার্য বিষয়ের এবং অষ্টম পর্বের অনিয়মিত পরীক্ষা ছিল। আর ওইদিন ডিপ্লোম ইন টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম পর্ব নিয়মিত এবং পঞ্চম, সপ্তম পর্বের অকৃতকার্য বিষয়ের এবং অষ্টম পর্ব অনিয়মিত বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। প্রথম দিনের সকল পরীক্ষারই প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। এ পরীক্ষা আগামী ২২ জানুয়ারি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বোর্ড।

এরপর গত ১১ জানুয়ারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায়। পরে পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে নির্ধারিত প্রশ্ন বাতিল করে ম্যানুয়ালি প্রশ্ন তৈরি করে নেয়া হয় পরীক্ষা। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে- এমন অভিযোগে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদের মুখে ১৩ জানুয়ারি বিকালের পরীক্ষাও পিছিয়ে দেয়া হয়, যা ২৫ জানুয়ারি নেয়া হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসে বোর্ড সিন্ডিকেট

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে বোর্ডের একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে বোর্ডের এক শ্রেণির কর্মকর্তা এবং কয়েকটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ জড়িত বলে মন্ত্রণালয় ও কারিগরি বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কয়েকজন কর্মকর্তা বোর্ড চাকরির পাশাপাশি গোপনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নিয়ে ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছেন। এদের কেউ কেউ স্ত্রী, ভাই ও নিকট আত্মীয়স্বজনের নামে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে শিক্ষা ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। এসব অসাধু কর্মকর্তা নিজের প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের মেধা তালিকার শীর্ষে আনতে এবং বেশি শিক্ষার্থী ভাগে আনতেই প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064680576324463