চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস ও এ প্লাসের সংখ্যা বাড়লেও কমেনি খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থী সংখ্যা। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় এবার আরও ৭ হাজার শিক্ষার্থী ১৭ হাজারের বেশি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছে। গত কয়েক বছর ধরেই খাতা চ্যালেঞ্জের হার বাড়ছিল।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এবার শিক্ষার্থীদের জিপিএ সঙ্গে নম্বরপত্র বা কোনো বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে তা দেখার সুযোগ রয়েছে। এ কারণেই খাতা চ্যালেঞ্জের সংখ্যার বাড়ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, এই বোর্ডের কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ফল চ্যালেঞ্জ করেছে ৪২ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরা ১ লাখ ২৬ হাজার খাতার পুনরায় দেখার আবেদন করেছে। বোডে খাতা চ্যালেঞ্জকারীর এ সংখ্যা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে, ১৭ হাজার ১৯১টি। ইংরেজিতে ১৪ হাজার ৮৯১টি, বাংলায় ৯ হাজার ৫৬৮টি, হিসাব বিজ্ঞানে ৬ হাজার ৬৮৬টি, জীব বিজ্ঞানে ৫ হাজার ২০৭টি আবেদন পড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার আবেদন বেশি প্রায় ৮৬ হাজার। গত বছর আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার। পুনঃনিরীক্ষণের ফল আগামী ১৭ই সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হবে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বেশি আবেদন পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, আইসিটি বিষয়টি নতুন যুক্ত হওয়ায় এখনও অনেক শিক্ষার্থীর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক কলেজে ভালো মানের আইসিটি শিক্ষক না থাকায় ভালো ফল পাচ্ছে না। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের আইসিটি বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন বেশি এসেছে। পাশাপাশি এ বছর জিপিএ’র ভিত্তিতে ফল ও নাম্বার প্রকাশ করায় তুলনামূলকভাবে আবেদন বেড়ে গেছে। পুনরায় আবেদনকারীদের খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। নির্ধারিত সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি জানান।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, ফেল থেকে পাস নয়, বরং পাস করেছে কিন্তু কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পায়নি এমন আবেদনের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া, শিক্ষার্থীরা ফল চ্যালেঞ্জ করছেন এটি উদ্বেগের কারণে। ২০১৪ সালে পরীক্ষার খাতা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার খাতায় সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করার অভিযোগে ৪৭ পরীক্ষককে কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তি দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তাদের আগামী ৫ বছর বোর্ডের কোন খাতা দেখার সুযোগ দেয়া হবে না বলে জানানো হয়। এছাড়া খাতায় ফল পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বোর্ড কর্মকর্তা ও পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দিন দিন খাতার চ্যালেঞ্জ করা প্রবণতা বাড়ছে। এতে আস্থা কমছে বোর্ডের পদ্ধতির ওপর।
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয় বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানান। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। তাতেই এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়ে থাকে। এটি রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ড আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্ন পদ্ধতি ও খাতার দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর জনগণের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।