তাবলিগে নিজামউদ্দিন দ্বীন শিক্ষায় দেওবন্দ - দৈনিকশিক্ষা

তাবলিগে নিজামউদ্দিন দ্বীন শিক্ষায় দেওবন্দ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েই আবেদন করেন ভারতের ভিসার জন্য আমিরুল ইসলাম। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তার সিয়াহ সিত্তার কিতাবগুলো পড়বেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। নানাভাবে চেষ্টা করেও তিনি স্টুডেন্ট ভিসা জোগাড় করতে পারেননি। শেষে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তিন মাসের জন্য গেলেন দেওবন্দে। মাদ্রাসায় যখন পড়াশোনার প্রচুর চাপ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফিরে আসতে হল দেশে। দুই সপ্তাহ পর আবার তিন মাসের ভিসা নিয়ে ফিরে গিয়ে দেখেন পড়াশোনায় অন্যদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। এভাবেই পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন দেওবন্দ মাদ্রাসায়। তার কাছেই জানলাম, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এমন অনেকেই আছেন যারা তিন মাসের ভিসায় গিয়ে আর ফিরে আসেননি। পড়া শেষ করেই তবে আসবেন। অনেক ছাত্র এমনও আছেন যারা কোনো ভিসাই নেননি। দালাল ধরে বর্ডার পার হয়ে ভারতেরই কোনো একটা ঠিকানা ব্যবহার করে দিব্যি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ছাত্র একটা অজানা আতঙ্কে থাকেন। ধরা পড়লে নিশ্চিত জেল।

দুই

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা মরণোত্তর সম্মাননা পদক পেয়েছেন তাদের মধ্যে ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাবেক সভাপতি মাওলানা সৈয়দ আসআদ মাদানি (রহ.) অন্যতম। তার বাবা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর সিপাহসালার, মাল্টাবন্দি সৈনিক মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) দেওবন্দের পাশেই গড়ে তোলেন মাদানি মঞ্জিল ও খানকায়ে মাদানিয়া। গেল বছর রমজানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত আলেম ও ব্যবসায়ী খানকায়ে মাদানিয়ায় রমজান ও ইতেকাফ করার ইচ্ছায় ভিসার আবেদন করেন। দূতাবাস থেকে মাত্র চারজনকে ভিসা দেয়া হয়।

তিন

হালের দুটি বিষয় খুবই আলোচিত। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর। অন্যটি প্রধানমন্ত্রীর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সম্মান ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা।

এ স্বীকৃতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে কওমি ছাত্র-শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে। এ স্বপ্ন পূরণের সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণেই তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন কওমি ছাত্র-শিক্ষদের হৃদয়রাজ্যে।

আরেকটি বিষয় যদি প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেন তাহলে বাংলাদেশের আলেম-উলামা তাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে। সেটি হল আলেম-উলামাদের জন্য ভারতের ভিসাপ্রাপ্তি সহজকরণ। আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী চার দিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনেই আজমীর শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) দরগাহ জিয়ারত করেছেন। এ জিয়ারত কোনো লৌকিকতার নয়; এটা পীর-মাশায়েখ ও আলেম-উলামার প্রতি তার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া অন্তরের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। প্রধানমন্ত্রীর বাবা বঙ্গবন্ধুও পীরপ্রেমিক ছিলেন। তিনিও কোনো জেলায় গেলে আগে ওখানকার কোনো বুজর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন বা কোনো মাজার জিয়ারত করতেন।

একই আবেগ ও অনুভূতি এ দেশের সাধারণ মুসলমান ও আলেম-উলামাদের। বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল ভারত। সেখানে আছে মুসলমান শাসকদের শতশত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষর। ভারত থেকেই মানুষের অন্তরে দ্বীনের দরদ ঢেলে দিয়েছিলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.), হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.), মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) ও মাওলানা থানবীর (রহ.) মতো আধ্যাত্মিক রাহবাররা। তাদেরই রূহানি সন্তান বাংলাদেশের মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের মতো সাধকরা।

স্মরণ করতে হয়, ভারতকে যখন মুসলমানদের সাড়ে আটশ বছরের রাজত্বকে পদানত করে ইংরেজ দখলদাররা গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে রাখে, তখন ইংরেজবিরোধী ফতোয়া ভারতকে ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করে রাজনীতির ময়দানে নামেন মাওলানা শাহ্ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.)। তার দেখানো পথেই হাঁটেন শাহ্ ইসমাইল শহীদ (রহ.)। শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (রহ.), মাওলানা সৈদয় হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.), মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো ব্যক্তিত্বরা। বর্তমান বাংলাদেশে যারা ধর্মীয় রাজনীতি করেন তাদেরই ফসল তারা। একইভাবে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা হল উপ-মহাদেশের দ্বীন চর্চার প্রধান কেন্দ্র। দেওবন্দকে অনুসরণ-অনুকরণ করেই আমাদের দেশের হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ গণজমায়েত হয় টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমায়। তারও মূল কেন্দ্র হল দিল্লির নিজামুদ্দিনে। মূল কথা ভারত অনেক কারণেই আমাদের সবচেয়ে কাছের মুরব্বি। আমাদের আধ্যাত্মিকতা, দ্বীনি জ্ঞানের ভাণ্ডার, রাজনীতি এবং দাওয়াত ও তাবলিগের মার্কাজ, এসব কিছুতেই আমাদের মুরব্বি ভারত।

এত আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্কের পরও কেন আমাদের মেধাবী ছাত্রদের নিজ দেশের পরিচয় গোপন করে পড়াশোনা করতে হয় ভারতে! খানকাহ মাজার জিয়ারতকারীরা ভিসা পান না সময়মতো। ভিসার অভাবে তাবলিগে যখন তখন সময় লাগাতে পারেন না মুসল্লিরা।

প্রধানমন্ত্রী যদি এ বিষয়গুলো সুরাহা করতেন বড়ই উপকৃত হতো মুসলমান। তার জন্য আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করত জীবন ভর।

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053911209106445