রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার এক বছর হচ্ছে আজ রোববার। হত্যাকাণ্ডের সাড়ে ছয় মাস পর আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে এ ঘটনার জন্য নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবিকে দায়ী করে পুলিশ। অভিযুক্ত তিনজন বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এবং পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। অন্যতম আসামি এবং পরিকল্পনাকারী শরীফুল এখনো পলাতক।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন খাইরুল ইসলাম ওরফে বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান ও ওসমান। এ ছাড়া গ্রেপ্তার চারজন হলেন জেএমবির সদস্য মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমতুল্লাহ, খুনিদের সন্দেহভাজন আশ্রয়দাতা রাজশাহীর পবার নারকেলবাড়িয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তার ও তাঁর কলেজে পড়া ছেলে রিপন আলী। পলাতক রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র শরীফুল ইসলাম ওরফে খালিদ। তাঁর বাড়ি বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। শিক্ষক রেজাউল তাঁর স্থানীয় অভিভাবক ছিলেন।
গত বছরের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার অদূরে খুন হন রেজাউল করিম। তখন হত্যার দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। বোয়ালিয়া থানায় করা মামলা তদন্ত করে গত ৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
গতকাল শনিবার অধ্যাপক রেজাউলের স্ত্রী হোসনে আরা এবং মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন বলেন, পুলিশ সন্তোষজনক সময়ের মধ্যেই অভিযোগপত্র দিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে। কিন্তু মূল পরিকল্পনাকারী শরীফুল এখনো পলাতক। তাঁর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে কি না, তাও বলতে পারছে না পুলিশ।
হত্যা মামলাটি বর্তমানে রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালত-৩-এ বিচারাধীন। আগামী জুলাই মাসে অভিযোগপত্র গঠনের জন্য পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
অধ্যাপক রেজাউলের সহকর্মী ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশ যাকে মূল পরিকল্পনাকারী বলছে, সেই শরীফুলকেই এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারায় আমরা হতাশ। আমরা চাইব, অন্য তিন আসামির মতো সেও যেন ‘ক্রসফায়ারে’ মারা না পড়ে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি মাসউদ আখতার বলেন, ‘মামলাটি যেন দীর্ঘসূত্রতায় না পড়ে, সে জন্য আমরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছি।’
বাগমারা প্রতিনিধি জানান, অধ্যাপক রেজাউলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবেন উপজেলার দরগামাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা। আয়োজকেরা জানান, আজ বিকেলে দরগামাড়িয়া গ্রামবাসীর উদ্যোগে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রয়াত শিক্ষকের কর্মজীবন ও জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে।
অধ্যাপক রেজাউলের প্রতিষ্ঠিত গানের স্কুলের সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার শহরে থাকলেও নিয়মিত গ্রামে এসে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করতেন। এখন থেকে স্যারের স্মৃতি রক্ষায় আমরা কাজ করে যাব।’