তিন রঙের শিক্ষক রাজনীতি - দৈনিকশিক্ষা

তিন রঙের শিক্ষক রাজনীতি

আলী রেজা |

দেশে ছাত্র রাজনীতির একটি উজ্জ্বল ঐতিহ্য থাকলেও বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে পরিণত হয়েছে। নব্বই-পরবর্তী কোনো গণতান্ত্রিক সরকারই ছাত্র রাজনীতিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক, সাধারণ ছাত্রদের অধিকারকেন্দ্রিক হতে দেয়নি। সব সরকারই চেয়েছে ছাত্র রাজনীতি চলবে দলীয় ছত্রছায়ায়। মূল দলের শক্তি জোগাবে ছাত্র সংগঠনগুলো। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে নব্বই-পরবর্তী দুই যুগের বেশি সময় ধরে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শুধু কমিটি গঠন করে চলছে ছাত্র রাজনীতি। ফলে লেজুড়বৃত্তি ছাড়া সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছে না কোনো ছাত্র সংগঠন। এই মেরুদণ্ডহীন ছাত্র রাজনীতির কারণেই গড়ে উঠছে না যোগ্য নেতৃত্ব।

তবে ছাত্র রাজনীতির বেহাল দশা চললেও শিক্ষক রাজনীতি চলছে রমরমা। দেশে বর্তমানে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে রাজনীতি চর্চা এতটাই জোরালো যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন রাজনীতি চর্চার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা এখন দলীয় রাজনীতি করেন নানা কারণে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য হতে, প্রাধ্যক্ষ-ডিন-প্রক্টর ও উপাচার্য হতে লাগে দলীয় পরিচয়। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বড় বড় পদ পেতে লাগে দলীয় পরিচয়। তাই শিক্ষকদের নিয়োগ থেকে শুরু করে অবসর পর্যন্ত পুরো শিক্ষকতা জীবনেই যুক্ত থাকতে হয় দলীয় রাজনীতির সঙ্গে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে চাকরি শেষে অনেকে আবার পেয়ে যেতে পারেন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন।

সুতরাং রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সুবিধা অনেক। তবে বিরোধীদলীয় রাজনীতি যারা করেন, সুযোগের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় দল ক্ষমতাসীন হওয়া পর্যন্ত। তবে রাজনীতি থেমে থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির হাওয়া-বাতাস লেগে থাকে প্রায় সারা বছর। সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচন, ডিন ও উপাচার্য নির্বাচন, শিক্ষক সমিতি নির্বাচন- এসব নির্বাচনই শিক্ষকদের রাজনীতি চর্চায় নিয়োজিত রাখতে বা থাকতে সাহায্য করে। এসব নির্বাচনে শিক্ষকদের বিভাজনটাও চমৎকার। রাজনীতির রঙ লাগানোর ফলে শিক্ষকদের রয়েছে তিন রঙ- বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক শিক্ষকরা সাদা, আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকরা নীল ও বাম মোর্চার সমর্থক শিক্ষকরা গোলাপি রঙ নিয়ে নামেন নির্বাচনের মাঠে। এ রঙ শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে সরাসরি ব্যবহার করা হয়। তবে শিক্ষকদের অন্যান্য নির্বাচনেও এ রঙ কাজে লাগে। এ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার ফলে অনেক শিক্ষক শিক্ষা ও গবেষণা কাজে সময় দিতে পারেন না। রাজনীতি মুখ্য হয়ে ওঠে বলে শিক্ষা ও গবেষণা গৌণ বিষয়ে পরিণত হয়। এভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

নব্বইয়ের দশকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। বিভাগের অনেক শিক্ষককে দেখেছি, তারা দিনের পর দিন ক্লাস নিতে পারেননি। রাজনীতি ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন বেশিরভাগ সময়। আমরা অপেক্ষায় থেকেছি। অবশেষে পরীক্ষার আগে একটানা ক্লাস নিয়ে শেষ করেছেন সিলেবাস। হালে কলেজগুলোর অবস্থাও হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন আর শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে বিচরণ করছেন কলেজ শিক্ষকরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক এখন হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর সম্পর্কের মতো।

দলীয় রাজনীতি শিক্ষককে মেরুদণ্ডহীন করে তোলে। জাতি গঠনের নিয়ামক শক্তি শিক্ষকসমাজ মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়লে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে কীভাবে? তাই রাজনীতি নয়, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করার দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষককে।

আলী রেজা : সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল

সৌজন্যে: যুগান্তর

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070550441741943