মাদারীপুরে তিন স্কুলছাত্রকে পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রেখে ৪০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। বন্ধুত্বের সূত্র ধরে এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ইজিবাইকে পাশাপাশি বসে মোবাইলে ছবি তোলার জন্য তাদের আটক করা হয়।
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে একই উপজেলার আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক স্কুলছাত্র ঘুরতে যায়। সঙ্গে ছিল ছাত্রের দুই বন্ধু। তারা সবাই মিলে ইজিবাইকে ঘোরাফেরা শেষে ছাত্রীকে স্কুলের কাছে নামিয়ে দেওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন তরুণ তাদের আটক করে। এ সময় মোবাইলে আপত্তিকর ভিডিও করা হয়েছে অভিযোগ তুলে ওই তিন স্কুলছাত্রকে মারধর করে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যায় তরুণেরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বিকেলে তিন ছাত্রকে আটক করে চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। রাতে ছাত্রীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এবং ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই মর্মে লিখিত দেওয়া হয় ফাঁড়িতে। কিন্তু পুলিশের দাবি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় তিন স্কুলছাত্রকে হাজতখানায় আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
এক স্কুলছাত্রের অভিভাবক অভিযোগ করেন, তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যান। চেয়ারম্যান পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ৪০ হাজার টাকায় সমঝোতা করে দেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হাওলাদার অভিযোগ করেন, স্কুলছাত্রের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। রাতে তারা অল্প কিছু টাকা জোগাড় করে ফাঁড়িতে গেলেও তাদের ছাড়া হয়নি। পুলিশের এক কর্মকর্তা ৪০ হাজার টাকা আদায়ের পর আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আজমগীর হোসেন বলেন, ওই ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়নি, শুধু ইজিবাইকে পাশাপাশি বসে তোলা ছবি পাওয়া গেছে। তাদের পরিবারের কাছ থেকে পুলিশ কোনো টাকা নেয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তবে কোনো অভিযোগ না থাকার পরও রাতে তাদের ছেড়ে না দিয়ে হাজতখানায় আটকে রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘একটু দেরি হয়ে গেছে আর কি!’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কুমার দেব বলেন, ‘ছাত্রীর পরিবার অভিযোগ দিয়েও লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারা যদি আইনগত সহযোগিতা চায়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া, টাকার বিনিময়ে আটক ছাত্রদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ কেউ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।