মানিকছড়ির দুর্গম জনপদ দক্ষিণ হাফছড়ির ‘শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে’ প্রতিকূল পরিবেশে পাঠদান চলছে! শিক্ষা কেন্দ্রের পুরনো জরাজীর্ণ টিনসেট ভবনের ইট ও প্লাস্টার খসে পড়ছে। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ এ গ্রামের ৩/৪ কিলোমিটার লোকালয়ে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই!
জানা গেছে, মানিকছড়ি সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাফছড়ি গ্রামে বর্তমানে অবহেলিত এ জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া নেই বললেই চলে। রাস্তা, কালভার্ট নেই, সরকারি, আধা-সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ক্যায়াং ঘরে উন্নয়নের নমুনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে উপজেলা স্থানীয় সরকারের অর্থায়নে একটি টিনসেট ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে কমিউনিটি গ্রামীণ স্কুল নামে পাঠদান পরিচালিত হয়ে আসছে। কমিউনিটি স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার পর এলাকাবাসীর ধারণা ছিল উক্ত জনপদের ৬টি গ্রামের দেড়-দু’শতাধিক কোমলমতি শিশুর লেখাপড়া শেখার অন্তত একটি সুযোগ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, অবৈতনিকভাবে দূর থেকে এসে কয়েকজন শিক্ষক বছরখানেক থেমে থেমে পাঠদান চালালেও স্থানীয় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকায় স্থায়ীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম এক সময় বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন গ্রামীণ স্কুলটি বন্ধ থাকার পর পুনরায় ২০০৭ সালে এলাকাবাসী, অভিভাবকরা নিজেদের অনুদানে শিক্ষকদের বেতন ও প্রশাসনিক খরচ নির্বাহ করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত পাঠদান চালু রাখেন। পরবর্তীতে অনুদানের সংকটে পড়ে এবং ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের কারণে তা আবার বন্ধ হয়ে যায় ! ৩ বছর এ জনপদ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল !
পরে ২০১২ সালে কারিতাস আলোঘর প্রকল্প উক্ত স্কুলটিকে দক্ষিণ হাফছড়ি পাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্র নামে পরিচালনা শুরু করে। বর্তমানে এ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ইসিই থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২ জন নিয়মিত ও ২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক পাঠদান চালাচ্ছেন। এ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটিতে ৩টি শ্রেণিকক্ষ, ১টি অফিসকক্ষ রয়েছে। নিয়মিত দুজন শিক্ষকের বেতন, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা কাগজ-কলমসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ ও টেকনিক্যাল সহায়তা এবং শিক্ষা অফিসের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের কাজটিও নিয়মিত ‘কারিতাস আলোঘর’ প্রকল্প থেকে প্রদান করা হয়।
মানিকছড়ি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, দক্ষিণ হাফছড়ির নির্জন পল্লীতে কারিতাস আলোঘর প্রকল্প কর্তৃক শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। আগামী নভেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে! অথচ এ জনপদের ৬ কিলোমিটার আশেপাশে কোনো বিদ্যালয় নেই! তাই কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত্ চিন্তা করে বিদ্যালয়টি চালু রাখা প্রয়োজন ।
উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা বলেন, অফিসিয়াল যোগাযোগের অভাবে শিক্ষা কেন্দ্রটি জাতীয়করণের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে । যেহেতু বিষয়টি এখন আমার নজরে এসেছে তাই আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।