কওমি মাদ্রাসার অধীনে আগামীকাল সোমবার মাস্টার্স সমমানের দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় বসছেন ২০ হাজার ২০৪ জন শিক্ষার্থী। দাওরায়ে হাদিসের সনদকে ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্যে মাস্টার্স সমমান দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এটিই প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। কওমি মাদ্রাসার ছয়টি শিক্ষা বোর্ডই অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমন্বিত এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
কওমির পরীক্ষা আহ্বায়ক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে প্রশ্নপত্র। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে খাতাপত্র। মাস্টার্স সমমানের এ পরীক্ষা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১১ সদস্যবিশিষ্ট পরীক্ষা আয়োজন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য ১১ সদস্যবিশিষ্ট এনতেহাম কমিটি (পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি) গঠন করেছে। ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে কমিটি পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এক হাজার নম্বরের এ পরীক্ষায় বুখারি শরিফ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, মুসলিম শরিফ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, তিরমিজি শরিফ প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, আবু দাউদ শরিফ, ইবনে মাজা ও নাসাঈ শরিফের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবদুর রশীদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্র পরীক্ষার খাতা সরবরাহ করা হয়েছে। পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাবে। ’
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রামের তালিমুন নিসা মহিলা মাদ্রাসার সভাপতি আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষা নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। প্রশ্ন ফাঁসেরও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আমাদের পরীক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কারণ এখানে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতাসম্পন্ন জ্ঞান দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবাই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্নের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। ’
প্রসঙ্গত, এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণা করেন। সনদ বাস্তবায়নের জন্য বেফাক সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আহ্বায়ক করে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠনা করা হয়।
কমিটি ১৬ এপ্রিল হাটহাজারীতে বৈঠক করে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কওমিপন্থি শীর্ষ আলেম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ বিষয়ে ২৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবির সমমান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।