দিকনির্দেশনা মানছে ২৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান - দৈনিকশিক্ষা

দিকনির্দেশনা মানছে ২৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রাকিব উদ্দিন |

edu-2শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন নির্দেশনা ও সুপারিশ আমলেই নিচ্ছে না ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ৪৭ দশমিক ০৭ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক নির্দেশনা অনুসরণ করছে। মাত্র ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করছে। এতে শিক্ষার মানের আশানুরূপ উন্নয়ন হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অক্টোবরের ‘একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্টে’ এ তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের একটি প্রকল্পের অর্থায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগ এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’র আলোকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিণ্ডিতকরণের লক্ষ্যে এই কার্যক্রম অর্থাৎ পারফরমেন্স বেইজড ম্যানেজমেন্ট (পিবিএম) বা কৃতীভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি করা হয়।

এছাড়া কার্যকরী শিখন-শেখানো পদ্ধতির ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য পূর্ব নির্ধারিত মানদণ্ডের নিরিখে তুলনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব উন্নয়নের কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বপ্নের স্কুল প্রতিষ্ঠা করাও এই কার্যক্রমের লক্ষ্য।

একাডেমিক সুপারভিশন প্রতিবেদন প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা মাউশির উপ-পরিচালক ওসমান ভূইঞা  বলেন, ‘শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসছেন কি না, ক্লাস নিচ্ছেন কি না, প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারকি করছেন কি না, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ, শিক্ষার্থীদের স্যানিটেশন সুবিধা নিণ্ডিতসহ বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিষয় সম্পর্কে পিবিএম প্রতিবেদন করা হয়।’

এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঝরে পড়া রোধ হচ্ছে জানিয়ে উপ-পরিচালক বলেন, ‘জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা হলো প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শ্রেণীকক্ষ, খেলার মাঠ, প্রতিকূল আবহাওয়া, শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় আচ্ছাদিত জায়গা, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিণ্ডিত করা।’

মাউশি নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে। পিবিএম কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ ও নির্দেশনা দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। মাঠ পর্যায়ে এসব সুপারিশ ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম তদারকি করছেন উপজেলা মাধ্যমিক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা।

পিবিএম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা অঞ্চলে সুপারিশকৃত এক হাজার ৩৩৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে ৬০৫টি প্রতিষ্ঠানে, যার শতকরা হার ৪৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন করেছে ৭৯২টি বিদ্যালয়, যার শতকরা হার ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং সুপারিশ একেবারেই বাস্তবায়ন হচ্ছে না ২৮৮টি বিদ্যালয়ে, যার শতকরা হার ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৫৬৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ৩৫টি প্রতিষ্ঠান, যার শতকরা হার ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। ময়মনসিংহ অঞ্চলে সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়নের হার ৬৩ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ৩১ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যালয়ে সরকারের সুপারিশ একেবারেই বাস্তবায়ন হয়নি।

সিলেট অঞ্চলে ৪৫৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৫টি স্কুলে, যার শতকরা হার ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ অঞ্চলে ৫০ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আংশিক এবং ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যালয় কোন সুপারিশই বাস্তবায়ন করছে না।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে সুপারিশকৃত ৫৪৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৭টি বিদ্যালয় সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে, যার শতকরা হার ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। চট্টগ্রামের আংশিক সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছে ৫৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোন সুপারিশ ও নির্দেশনা আমলে নেয়নি।

রংপুর অঞ্চলে এক হাজার ১৪৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠান, যার শতকরা হার ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রংপুরে সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়ন করেছেন ৪০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং বাস্তবায়ন করেনি ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বিদ্যালয়।

রাজশাহী অঞ্চলে সুপারিশকৃত এক হাজার ৫২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কোন বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ, আংশিক ও কিছু প্রতিষ্ঠানে একেবারেই বাস্তবায়ন হয়নি।

খুলনা অঞ্চলে সুপারিশকৃত এক হাজার ২৬৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২১৮টি প্রতিষ্ঠান সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করেছে, যার শতকরা হার ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এ অঞ্চলের বিদ্যালয়ে আংশিক সুপারিশ বাস্তবায়নের ৭১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বিদ্যালয় কোন সুপারিশই বাস্তবায়ন করেনি।

বরিশাল অঞ্চলে সুপারিশকৃত ৬৯৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে ১৮৪টি প্রতিষ্ঠান, যার শতকরা হার ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বরিশালে আংশিক সুপারিশ বাস্তবায়নের হার ৫১ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি ১৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ বিদ্যালয়।

আর কুমিল্লা অঞ্চলে সুপারিশকৃত ৬১৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে ১৬৭টি, যার শতকরা হার ২৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এ অঞ্চলে সুপারিশ আংশিক বাস্তবায়নের ৩৩ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং সুপারিশ একেবারেই বাস্তবায়ন হয়নি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যালয়ে।

সরকারের নির্দেশনা ও সুপারিশ বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে ওসমান ভূইঞা বলেন, ‘সুপারিশ বাস্তবায়ন করে বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে সম্মানি ভাতা। এরপরও কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তবে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়র মানোন্নয়ন হচ্ছে।’


অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033180713653564