দুই গাছের বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছে ৪০০ অতিথিকে। তা্ও যেনতেন ভাবে নয়। রীতিমত আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে দা্ওয়াত। ঘটনাটি বগুড়ার পোদ্দার বাড়িতে। সার্থক কণ্ডু পোদ্দার ওরফে পল্লব ও লাবণ্য পোদ্দারের বিয়ে। শহরের কাটনারপাড়া বেণীকুণ্ড লেনের ‘স্বপ্নের নীড়’ নামের বাড়িটি রঙিন বাতিতে সেজেছে দুই গাছের বিয়ে উপলক্ষে। সমানতালে বাজছে ঢাক-ঢোল আর সানাই। আত্মীয়স্বজন আর অতিথিদের সরগরমে পুরো বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ।
একটি পাকুর (পল্লব) ও একটি বটগাছকে (লাবণ্য) মানুষের নাম দিয়ে, মানুষের বিয়ের নিয়ম মেনেই সম্পন্ন হয়েছে এই বিয়ে। বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার ওই বাসার ছাদে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা এই গাছ দুটির বিয়ে দিতে গিয়েই এত আয়োজন।
বাসার গৃহকর্ত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সবিতা পোদ্দার বলেন, ১৪ বছর ধরে বাসার ছাদের বাগানে পাকুর গাছের সঙ্গে অঙ্গ জড়িয়ে বট গাছটি বেড়ে উঠেছে। দুটোই ধর্ম বৃক্ষ। মন্দিরের ঠাকুরের পরামর্শে ধুমধাম করে তাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোববার বর-কনেকে নিয়ে যাওয়া হবে করতোয়া নদীর তীরে কদমতলী মন্দিরে। সেখানেই গাছ দুটিকে প্রতিস্থাপন করা হবে। ১৬ বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে ধুমধাম পড়ে গিয়েছিল। আজ বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে একই উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।
বাড়ির ছোট ছেলে ও ব্যবসায়ী লিটন পোদ্দার বলেন, পাঁচতলা বাসার ছাদের একপাশে পারিবারিক রাধাগোবিন্দ মন্দির। অন্যপাশে ফুল ও ফল বাগান। বাগানটা দেখভাল করেন মা সবিতা পোদ্দার। দেড় বছর আগে পাকুরগাছের সঙ্গে জড়ানো বটগাছটি মায়ের নজরে আসে। দুটোই দেবতা বৃক্ষ হওয়ায় বিষয়টি জানানো হয় ঠাকুর শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী ও দেব ভট্টাচার্যকে। তাঁরা দুজনই বট-পাকুরের বিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। পুণ্যের আশায় এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
১৫ দিন ধরে চলছে বিয়ের আয়োজন। বিয়ে অনুষ্ঠান ধারণ করার জন্য ভাড়া করা হয় ভিডিও ক্যামেরা। শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সব লোক উপস্থিত।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন ঠাকুর শিবপ্রাসাদ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বরের বয়স ১৪। কনের ১২। তারা এক সঙ্গে বড় হয়েছে।
আলোচিত এই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ধারাবর্ষা গ্রাম থেকে এসেছেন মাছ ব্যবসায়ী বিষ্ণুপদ দাস।
তিনি বলেন, বট-পাকুরের বিয়ের কথা এত দিন শুনেছি। পরিচিত একজনের কাছে বিয়ের নিমন্ত্রণের কার্ড দেখে কৌতূহলী হয়েই বিয়েবাড়িতে আসা। এত সব আয়োজন দেখে হতবাক!