দুই বাণিজ্য শিক্ষার পার্থক্যটা স্পষ্ট - দৈনিকশিক্ষা

দুই বাণিজ্য শিক্ষার পার্থক্যটা স্পষ্ট

মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার |

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক সময় কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ দেখা দেয়। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু হলে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার বিজ্ঞানকে একাডেমিক কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে আগ্রহ দেখান, তেমনি বাণিজ্যের শিক্ষার্থীরা ঝুঁকে পড়েন বিবিএ-এমবিএ’র ওপর। তবে এক দশক আগে থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহে কিছুটা ঘাটতি লক্ষিত হলেও বিবিএ-এমবিএ পড়ার ওপর বাণিজ্যের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে ৯০টির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কার্যক্রম বিবিএ-এমবিএ পড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাত্র ২-৩টি এ বিষয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের চেষ্টা করছে।

বাকিরা মান বজায় রাখতে না পারলেও বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রি প্রদান করে যাচ্ছে। ফলে বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রিধারীর সংখ্যা বাড়লেও ওইসব গ্রাজুয়েট চাকরির বাজারে ভালো করতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন। উল্লেখ্য, একমাত্র আইবিএ’র এমবিএ বাদে অন্যরা প্রত্যাশিত মাত্রায় মান অর্জন করতে পারছেন না। বাংলাদেশি এমবিএ ডিগ্রিধারীদের অনেকেই আকর্ষণীয় টাইটেলের কোর্স এবং পরীক্ষার ফলাফলে সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়েও পাশ্চাত্যের এমবিএ ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছেন। পাশ্চাত্যের এমবিএ ডিগ্রিধারীরা কেন এবং কীভাবে বাংলাদেশি এমবিএ ডিগ্রিধারীদের চেয়ে অধিক যোগ্যতা অর্জন করছেন- এ প্রবন্ধে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।

বাংলাদেশের কমার্স গ্রাজুয়েটরা কেন প্রত্যাশিত মানসম্পন্ন হচ্ছেন না সে বিষয়ে প্রথমে কিছু বলা দরকার। এখানে বাণিজ্য শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকরা সবাই একই রকম মানসম্পন্ন নন। শিক্ষক নিয়োগে সব ক্ষেত্রে মেধাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে না। দলীয় রাজনীতি ও লেনদেনের অভিযোগ বাদ দিলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যেভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেধাবী প্রার্থীরা শিক্ষকতায় আসতে পারছেন না। তবে যারা আসছেন, তাদের অনেকেই শ্রেণীকক্ষে পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষকদের বাণিজ্যে মনোযোগ অবহেলা করার মতো নয়। এদের অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। তা তারা করতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে যে নিয়মকানুন আছে তা শিক্ষকদের দু’একজন মানলেও অধিকাংশই মানেন না। ফলে অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সান্ধ্যকালীন প্রোগামে মনোযোগী হওয়ায় মূল কর্মস্থলের শ্রেণীকক্ষের দায়িত্বপালনে প্রত্যাশিত মাত্রায় যত্নবান হতে পারেন না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুনাফার লক্ষ্যে পরিচালিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা সহজে বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করছেন। মেধাভিত্তিক ছাত্রভর্তির জায়গাটিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুর্বলতা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফেলের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদান এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জায়গায়ও দুর্বলতা বিদ্যমান। এসব ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শেখার আছে। এ প্রবন্ধে বাণিজ্য শিক্ষার আইকন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ প্রোগ্রামের পেশাদারিত্বের কারণ উপস্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশের মতো আমেরিকায় সবাই বিবিএ করার পর এমবিএ ডিগ্রি করেন না। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের গ্রাজুয়েটদের বছর পাঁচেক চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জনের পর এ প্রোগ্রামে আবেদনে উৎসাহিত করে। তবে অতিরিক্ত যোগ্যদের ক্ষেত্রে এ যোগ্যতা শিথিল করা হয়। ফলে চাকরি করাকালীন শিক্ষার্থীরা সরেজমিন যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, শ্রেণীকক্ষে তারা ওই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে পেতে প্রয়াস পান। শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির জায়গাটিতে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল অত্যন্ত পেশাদার। এ জায়গায় যোগ্যতা ও মেধা যাচাইয়ের ব্যাপারে আপস করা হয় না। শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র এবং একাডেমিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পেশাদারিত্বের সঙ্গে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

তারপর নেয়া হয় তাদের মৌখিক পরীক্ষা। ২০১৮ সালে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করবেন- এমন একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে ভর্তি প্রক্রিয়া খুবই প্রতিযোগিতামূলক। কারণ যারা আবেদন করেন, তাদের সবাই ভালো এবং যোগ্য। কাজেই কর্তৃপক্ষের কাজ হল আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও যোগ্যদের বেছে বের করা। এ কাজটি এরা খুবই পেশাদারিত্বের সঙ্গে করতে পারে।

আপনি কীভাবে সুযোগ পেলেন? আপনার যোগ্যতা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এ শিক্ষার্থী বলেন, আমি এমআইটি থেকে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করেছি। তারপর একটি বড় কোম্পানিতে রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিন বছর চাকরি করেছি। চাকরিক্ষেত্রে আমার পারফরম্যান্স ভালো ছিল। এরপরও আমার আবেদনপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয় যা আমি আমার ৪০ মিনিটের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় বুঝতে পারি। আমার একাডেমিক প্রোফাইল, চাকরি অভিজ্ঞতা এবং মৌখিক পরীক্ষার পারফরম্যান্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে যোগ্য মনে হওয়ায় এরা আমাকে এ বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ার সুযোগ দিয়েছে। আমি আরেকটি স্বনামখ্যাত আমেরিকান বিশ্ববিদালয়ে (এমআইটি) পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে পারি, হার্ভার্ডে পড়ার সুযোগ না পেলে বুঝতে পারতাম না যে এরা কত বেশি পেশাদার।

শিক্ষক নিয়োগে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল খুবই পেশাদার। শিক্ষক পদে আবেদনকারীর যোগ্যতা ও মেধা এরা বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আবেদনকারীকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে কোনো বিশেষ বিষয়ে ‘টক’ (জব টক) দিতে বলা হয়; যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তার একাডেমিক যোগ্যতা বাজিয়ে দেখেন। আবেদনকারীকে বিভাগীয় ফ্যাকাল্টিগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়। এরা আবেদনকারীর একাডেমিক যোগ্যতা এবং কাজের অবদান ও গভীরতা যাচাই করেন। এর আগে আবেদনকারীর একাডেমিক প্রোফাইল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফলে কম যোগ্যতা নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কারও পক্ষে শিক্ষক হওয়া একেবারেই অসম্ভব। আবার শিক্ষক হলেই তার পক্ষে শিক্ষকতায় টিকে থাকার নিশ্চয়তা থাকে না। ছাত্রদের ইতিবাচক মূল্যায়ন এবং অবদানমূলক প্রকাশনায় ঘাটতি হলে শিক্ষকতায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অনেকে আবার দু’চার বছর টিকে থাকলেও পরবর্তী সময়ে পারফরম্যান্সে ঘাটতি থাকায় টেনিওরশিপ না পেয়ে শিক্ষকতা থেকে সরে আসেন।

হার্ভার্ড এমবিএ প্রোগ্রামের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষাটা হয় অসাধারণ। এক বছরে যে ৯০০ শিক্ষার্থী এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হন তাদের ৯০ জনের একেকটি সেকশনে ভাগ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সাধারণত দুই বছরে ২২টি কোর্সে ৬৬ ক্রেডিট করতে হয়। অধিকাংশ ক্লাস হয় দেড় ঘণ্টা করে। শ্রেণীকক্ষে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য সুনির্দিষ্ট নেমপ্লেটযুক্ত আসনে বসার ব্যবস্থা থাকে। ছোট গ্যালারি সাইজের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ক্লাসরুমগুলো দেখার মতো। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে রয়েছে একেক রোতে তিনটি করে মোট নয়টি ব্ল্যাকবোর্ড, প্রজেক্টর, তিনটি ডিসপ্লেস্ক্রিন ও একটি টিভিস্ক্রিন। ক্লাসে কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণের প্রয়োজন হলে প্রতি আসনের টবিলে ডিজিটাল ভোটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে শ্রেণীকক্ষে আসেন। সে জন্য শ্রেণীকক্ষের আলোচনা হয় সমৃদ্ধ। ক্লাসের আলোচনায় শিক্ষার্থীরাই অংশগ্রহণ করেন বেশি। তবে শিক্ষক আলোচনা শুরু করেন এবং মাঝে-মধ্যে হাল ধরে এবং প্রশ্ন করে আলোচনাকে সুনির্দিষ্ট ট্র্যাকে রাখতে সহায়তা করেন।

শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীরা কে কী আলোচনা করেন তার সবই শিক্ষকের সহযোগী (স্ক্রাইব) ক্লাসে বসে নোট নেন এবং ক্লাসের পর সে তথ্য শিক্ষককে সরবরাহ করেন। কোনো কারণে স্ক্রাইব অনুপস্থিত থাকলে পুরো ক্লাসের আলোচনা ভিডিও করা হয় এবং শিক্ষক ক্লাস শেষে ওই ভিডিও দেখে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করেন। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওয়ার্কশপ করা হয়। একজন কর্মকর্তা বা ম্যানেজার কীভাবে ফিডব্যাক দেবেন, অথবা একজন ব্যবসায়ী কীভাবে অন্যের সঙ্গে সমঝোতা (নেগোসিয়েশন) করবেন, শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট গ্রুপ করে ওইসব বিষয়ে ওয়ার্কশপ করা হয়। এ সব ওয়ার্কশপ ভিডিও করে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শারীরিক ভাষা ও বাচন ভঙ্গিমাসহ সার্বিক পারফরম্যান্স অবলোকন করে মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষক হিসেবে কেবল পেশাদার একাডেমিক নন, কর্পোরেট বিশ্বের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সিইও বা সুশিক্ষিত সফল কোম্পানি মালিকদেরও প্রফেসর অব ম্যানেজমেন্ট হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল শিক্ষকতার সুযোগ দেয়। সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষকের ক্লাসে বসে তাদের পারফরম্যান্স পছন্দ হলে ওই কোর্স নেবেন কিনা তা নির্ধারণ করেন। নিয়মিত ক্লাস শুরু হলে শিক্ষার্থীর ক্লাস পার্টিসিপেশন এবং তার মান বিষয়ে শিক্ষক লক্ষ্য রাখেন এবং কম অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসের আলোচনায় অংশগ্রহণে সুকৌশলে উদ্বুদ্ধ করেন। ক্লাসের আলোচনাকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় যে, শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মানের ওপরই থাকে ৫০% নম্বর এবং বাকি নম্বর থাকে পরীক্ষার পারফরম্যান্সের ওপর।

বিজনেস স্কুলের ক্লাসগুলো হয় কেস স্টাডিভিত্তিক। এই কেসগুলো শিক্ষকরা তৈরি করেন এবং সেগুলো ক্লাসে উপস্থাপন করে ওইসব কেসে উপস্থাপিত সমস্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করিয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে সমস্যার সমাধান করান। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের শিক্ষকদের তৈরি করা অনেক কেস গুণগত শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর জন্য ক্রয় করে। অনেক সময় কোনো বড় কোম্পানির কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনাকালে ওই কোম্পানির সিইওকে ক্লাসে আনা হয়। শিক্ষার্থীদের আলোচনার পর তিনি বাস্তবে কিভাবে ওই সমস্যার সমাধান করেছেন তা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। ফলে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট সমস্যা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পান। বিজনেস স্কুলের পরীক্ষাগুলো হয় অন্যরকম। এখানে পরীক্ষার হলে ইনভেজিলেটর থাকেন না। শিক্ষার্থীরা বইখাতা এমনকি ল্যাপটপও সঙ্গে রাখতে পারেন। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে কেবল ইন্টারনেট ব্যবহার না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। পরীক্ষার ফলাফলে কেবল দুটি গ্রেড থাকে। পাস এবং ফেল। পরীক্ষায় নকল বা কোনোরকম অনিয়ম হয় না। চাকরির বাজারে হার্ভার্ড এমবিএদের চাহিদা ব্যাপক। শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের লেখাপড়া শেষ করে তাদের এক পৃষ্ঠার বায়োডাটা অফিসে জমা দেন। কর্তৃপক্ষ এই ৯০০ জনের তথ্য কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় প্রেরণ করে। সেখান থেকে বড় বড় কোম্পানি তাদের চাহিদমতো প্রার্থীদের চাকরির অফার দিয়ে থাকে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেরা আবেদন করলেও হার্ভার্ড ডিগ্রিধারী হিসেবে চাকরি বাজারে অগ্রাধিকার পান।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের শ্রেষ্ঠত্ব ধরা পড়ে এদের উন্নত ব্যবস্থাপনায়। এদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড এমনই পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালিত হয় যে, এদের কাজ-কর্মে ভুল ধরা যায় না। ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, একেকটি ক্লাস শেষ হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে একজন স্টাফ এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ক্লাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাকবোর্ড পরিষ্কার করে দিয়ে যান। ক্লাস শুরুর পূর্বমুহূর্তে আরেক জন স্টাফ এসে প্রফেসরের কাছে খোঁজ নেন যে, ক্লাসে প্রযুক্তিগত বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা। এরা একাডেমিক লেখাপড়ার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর কাজ যেমন সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তেমনি অনিবার্য কারণে কোনো ক্লাস সিডিউলের পরিবর্তন হলে সেসব বিষয়ও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে থাকেন। আসলে এখানকার শিক্ষার্থী না হলে এ স্কুলের পেশাদারিত্ব ও মুনশিয়ানা অনুধাবন করা কঠিন। বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে বাণিজ্য শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে তাতে পেশাদারিত্বের ঘাটতি রয়ে গেছে, যা এ প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি, পরীক্ষা পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম রচনা, ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের কার্যক্রম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেসব ক্ষেত্রে উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। কেবল সুযোগ্য শিক্ষকরা আন্তরিকতা নিয়ে চেষ্টা করলে রাতারাতি না হলেও ক্রমান্বয়ে উন্নতি করা সম্ভব।

হার্ভার্ড এমবিএ প্রোগ্রামের ক্লাস কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও কেস স্টাডি মেথডের শিক্ষাপদ্ধতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়ায় প্রফেসরস জেফরি জোনস ও ডেভিড বি. ইওফিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

(হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বস্টন, ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে)

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036849975585938