নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চলাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বসতভিটা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলিন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিস্তার বন্যায় ভাঙনে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের আবাদি জমি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও বিদ্যালয় বিলীন হয়ে গেছে। উক্ত এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিস্তার বাঁধসহ উঁচুস্থানে টেপাখড়িবাড়ীর ১ হাজার ৩৫২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে মর্মে শুক্রবার উপজেলা পরিষদের বন্যা পুনর্বাসন তথ্য কেন্দ্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি উচ্চবিদ্যালয়, ১টি কিন্ডারগার্টেন বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাস্তাঘাট পুল কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। উক্ত ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী, মধ্য খড়িবাড়ী, একতার চর, টাবুর চর, জিঞ্জিরপাড়াসহ ১০টি গ্রামের তিস্তার ভাঙনে ১ হাজার ৩৫২টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
চরখড়িবাড়ী মধ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরখড়িবাড়ী বাবুপাড়া, টাবুর চর, টেপাখড়িবাড়ী ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব খড়িবাড়ী ও টাবুর চর হায়দার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একতার বাজার কিন্ডারগার্টেন (কেজি স্কুল) ও টেপাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে এবং ভাঙনের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন জানান, বন্যায় ও ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব বিলীন হতে বসেছে। বিদ্যালয়টির অধিকাংশ ক্লাসরুম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয়টিতে ৪৭২ শিক্ষার্থী থাকলেও একমাস থেকে তাদের পাঠদান দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
টাবুর চর প্রাথমিক দ্যিালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বাছেদ জানান, তার বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে বিদ্যালয়টি কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। গত এক মাস থেকে ৩১৮ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। চরখড়িবাড়ী মধ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদৎ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি তিস্তার বন্যার শুরুতেই বন্যার পানি ও ভাঙনে বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৪৪৩ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। চরখড়িবাড়ী বাবুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টি বেশিভাগ অংশ বিলীন হওয়ায় ৪৪০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যা ও ভাঙনের কারণে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাঁটু পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়া এসব এলাকায় অধিকাংশ পরিবার তিস্তার বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধসহ উঁচু স্থানে পাশে বিদ্যালয়গুলোকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনার জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ৬টি বিদ্যালয়ের ২ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, বন্যায় টেপাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন যুগান্তরকে বলেন, চরাঞ্চলের ২ হাজার ২৪০টি পরিবার বসবাস করলেও এদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫২টি পরিবারের বসতভিটা তিস্তায় বিলীন হওয়ার কারণে তিস্তার বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।