রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যেসব শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত শনিবার বিকেলে দুদকের একটি তদন্তকারী দল কোচিংবাজ শিক্ষকদের ধরতে এ অভিযান পরিচালনা করে। প্রথম দফায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের কোচিং সেন্টারে অভিযান চালায় তারা।
অভিযানে দুদকের টিম সেখানে গিয়ে দেখেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ ভঙ্গ করে নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোচিং করাচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। দুদকের টিম প্রাথমিকভাবে তাঁদেরকে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ভঙ্গ করায় সতর্ক করে দেয়। এ সময় দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা জানান, সতর্ক করার পরও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে যাঁরা কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত থাকবেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনের প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা দুদকের উপপরিচালক মো. ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব শিক্ষক অবৈধভাবে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছেন তাঁদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই তালিকার পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমরা প্রাথমিকভাবে শাহজাহানপুর এবং সিদ্ধেশ্বরীসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করি। এর মাধ্যমে আমরা শাহজাহানপুরে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষককে কোচিং করাতে দেখি। ’
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, দুদকের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক।
সরকার কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে একজন শিক্ষককে তাঁর প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষার্থী পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্রোপলিটন শহরে মাসিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ে ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজ বিবেচনায় এ হার কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন। একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাস হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।