জালিয়াতি করে এমপিওভুক্তি ও ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন শুরু হয়েছে। এ্যাকশন চলবে, যতই বাঁধা আসুক না কেন। এমনই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো: মাহাবুবুর রহমান। দৈনিকশিক্ষার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে মহাপরিচালক বলেন, “বিকেন্দ্রীকৃত এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতে জড়িতদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় মামলা, কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অপেক্ষাকৃত দূর্গম অঞ্চলে বদলি করা হবে। বৃহস্পতিবার ১৪ জন জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাকে বদলি করার মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বদলির আদেশপ্রাপ্ত ডিইওদের আজকের মধ্যে এবং ইউএসইওদের কালকের মধ্যে আগের পদ ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।
মহাপরিচালক বলেন, নতুন সপ্তাহে শুরু হবে অন্যান্য ্এ্যাকশন।”
উল্লেখ্য, ৭ই জানুয়ারি মহাপরিচালক পদে যোগদান করেই বিদায়ী মহাপরিচালকের শেষ সাত কর্মদিবসের যাবতীয় বিতর্কিত বদলির আদেশসহ নানা সিদ্ধান্ত বাতিল ও স্থগিত করে শিক্ষা প্রশাসনে একটি নজির সৃষ্টি করেছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দেয়া অধ্যাপক মাহাবুব।
তিনি বলেন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে কঠোর হস্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি শিক্ষা অধিদপ্তরেও একইভাবে চালাতে পারবো। আমি এখানে যোগদান করার আগেই শুনেছি এমপিওভু্ক্তি নিয়ে দুর্নীতির খবর।
উল্লেখ্য, ঘুষ-দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এমপিওভুক্তি বিকেন্দ্রীকরণ ও অনলাইনে প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে সরকার। কিন্তু সুফল মেলেনি। ঘুষের হার ও স্তর বেড়েছে। এসব অভিযোগ নিয়ে সর্বাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষায়। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুটি প্রতিবেদনে এমপিওভুক্তিতে কীভাবে দুর্নীতি হয়, কারা জড়িত, কারা ঘুষ দেয়, কারা ঘুষ দিয়েও স্বীকার করে না এসব তথ্য উঠে আসে। ঘুষ-দুর্নীতিরোধে কিছু মন্তব্য ও সুপারিশ করা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদন দুটিতে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার পাঁচজন জেলা ও ৯ জন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ জারি ও বাদবাকী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের খবর দৈনিকশিক্ষায় প্রকাশ হওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন সৎ কর্মকর্তারা। তারা দৈনিকশিক্ষাকে টেলিফোনে বলেছেন, গুটিকয় কর্মকর্তার দুর্নীতি দায় বহন করতে হয় সবাইকে। তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হলে সৎ কর্মকর্তারা মাথা উঁচু করে চলতে পারেন।
নতুন মহাপরিচালকের পদক্ষেপের প্রশংসা করছেন তারা।
তবে, অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র দৈনিকশিক্ষাকে জানিয়েছে, মাউশি অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার একজন উপ-পরিচালকের সিন্ডিকেট এরই মধ্যে বাণিজ্য করে ফেলেছে। সাতক্ষীরার জেলা শিক্ষা অফিসার পদে একজন প্রধান শিক্ষককে বসিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বদলিকৃত চার ডিইওর মধ্যে একজনকে স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এ পদটি সমপর্যায়ের হলেও ডিইও থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বদলিকে শাস্তিমূলক হিসেবে ধরা হয়। বাস্তবে ওই শিক্ষকের অবসরে যাওয়ার বাকী মাত্র একমাস। উপ-পরিচালকের সিন্ডিকেট মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক শাখার পরিচালককে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে ফেলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘আমরা অ্যাকশনে নেমেছি। গোয়েন্দাদের তালিকায় অনেকের নাম থাকলেও কয়েকজন হয়েছে মানে বাকিরা পার পাবে- এমন নয়। বড় ধরনের প্রশাসনিক বদলিতে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর। কেউ যদি আগুনে আলু পুড়ে খেতে চায় তাহলে তাকেও আগুনে পুড়তে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সজাগ আছি।’