দেশ ত্যাগ করবে বহিষ্কৃত ক্ষুদে বিজ্ঞানী - দৈনিকশিক্ষা

দেশ ত্যাগ করবে বহিষ্কৃত ক্ষুদে বিজ্ঞানী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিএমসি সুপার স্মার্ট বাল্ব আবিষ্কার করে পত্রিকার শিরোনামও হয়েছিল তারিক। কিন্তু সামান্য ভুলে তারিকের এতসব অর্জনকে ম্লান হয়ে গেছে। মাত্র দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল তার। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় রসায়নের প্রশ্নপত্রে দাগ দেয়ার কারণে বহিষ্কৃত তিন শিক্ষার্থীর একজন এই তারিক। পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নে পেন্সিলের দাগ দেয়ার অপরাধে তাদের বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেন। তবুও কাজ হয়নি কর্তৃপক্ষ তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।

চট্টগ্রামের ক্ষুদে বিজ্ঞানীর তারিক আমিন চৌধুরী। ৯ বার রোবোটিকসে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। তার স্বপ্ন ছিল ন্যাশনাল এ্যরোনটিকস এন্ড স্পেস এডমিনিস্ট্রেশনে (নাসা) কাজ করার। মাইন্ড ওয়েব ডিভাইস আবিষ্কার করে আলোচনায় এসেছিল সে স্বপ্ন ছিলো এসএসসি পরীক্ষার পর বিজ্ঞানে দেশকে আরো ভালো কিছু উপহার দেবে। সামান্য অপরাধে সে আর দেশে থাকবে না বলে জানিয়েছে।

 

তিনজনকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করার সাথে সাথেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। সবগুলো গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। অনেক উঁচু পদবীর কর্মকর্তাও সুপারিশ করেছেন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিতে। কিন্তু কিছুই হলো না। এত কিছুর পরও যেখানে কিছু হয়নি, সেই দেশে থাকতেও ইচ্ছে করছে না। আগামী মাসেই সে আমেরিকা অথবা কানাডায় চলে যাবে সে।

জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের জন্য অন্যরকম একটা টান তারিকের। গত বছর বিএমসি’র স্মার্ট বাল্ব নিয়ে গবেষণা করে এর বহুবিধ ব্যবহার উদ্ভাবন করে তারিক। তাকে সহায়তা করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র শান্তনু ভট্টাচার্য। ব্লুটুথ ও ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এই বাল্বকে।

বাল্বটি যে ঘরে লাগানো হবে তার ১০ মিটার এলাকার মধ্যে কি ঘটছে সেই তথ্য আহরণ করতে পারবে। মোবাইলের স্ক্রিনে এসব যেকোন জায়গা থেকে দেখা যাবে। হোম সিকিউরিটি অর্থাৎ বাল্বে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঘরে অপিরিচিত কেউ ঢুকেছে কিনা তাও দেখা যাবে। আবার সেন্সরের মাধ্যমে আগুন ধরেছে কিনা কিংবা গ্যাস ছড়াচ্ছে কিনা দেখা যাবে। সঙ্গে অনেককিছু নিয়ন্ত্রণও করা যাবে।

তারিক ও শান্তনুর এই উদ্ভাবনে খুশি হয়ে তাদের প্রযুক্তিটি লুফে নেয় ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান বিএমসি। তাদের দুজনের সঙ্গে চুক্তি হয়, এই বাল্বটি উন্নত করতে সব ধরনের সহায়তা করবে বিএমসি।

এর আগে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তারিক উদ্ভাবন করে মাইন্ড ওয়েব ডিভাইস। যা মনের চিন্তাকে কাজে রূপান্তর করে। তারিকের এই উদ্ভাবনটি চট্টগ্রাম বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা’২০১৫-এ প্রথম পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও যন্ত্রটি প্রদর্শন করা হয় ঢাকা বিসিএসআইআর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে। সেখানে তৃতীয় স্থান লাভ করে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি।

হেড ফোনের মত দেখতে ডিভাইসটি মাথায় পড়ে নিলে ব্যক্তি যে চিন্তা করবেন, মস্তিষ্ক থেকে সে চিন্তার তথ্য সংগ্রহ করবে যন্ত্রটি। এরপর নিয়ন্ত্রক যন্ত্রে ব্লু-টুথ কিংবা ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে মাইন্ড ওয়েব ডিভাইসে সংগৃহীত তথ্য যাবে। এর ফলে মনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অনেক কিছু। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ঘরের বৈদ্যুতিক বাতি, সিলিং ফ্যান, টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আরো পরিপূর্ণ রূপ দেয়া গেলে এ যন্ত্রের সাহায্যে মনের মাধ্যমে যেকোন যন্ত্রে পাসওয়ার্ড দেয়া সম্ভব। যা ব্যাংকিং বা ঘরের লকারের জন্য খুব কাজে আসবে। এ যন্ত্রটি তৈরির আগে ২০১৫ সালের শুরুতেই দুই বন্ধুকে নিয়ে তারিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রোবট উদ্ভাবন করেছিল। সে সময় রোবটটি নিয়ে বেশ হৈ চৈ হয়।

রোবোট নিয়ে কাজ করায় বেশ আগ্রহ তারিকের। ২০১৫ থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রোবোটিকসে ৯ বার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় বুয়েট ও চুয়েটের কয়েকজন প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে। রোবোটিকসে তার আগ্রহ ও কাজ দেখে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে রোবো ল্যাব বিডি তে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দেরর শেষের দিকে একই পদে আলফা বাইটে যোগ দেয় সে। রোবোটিকসের বিভিন্ন প্রজেক্ট, ডেভেলপিং নিয়ে কাজ করে এসব সংগঠন।

ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেলও আছে তারিকের। যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে তার বেশ কিছু ভিডিও আছে। শুধু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে থাকে যে ছেলে, ডিবেটিংয়েও রয়েছে তার দক্ষতা। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুইবারের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এই তারিক।

জানা গেছে, তারিক চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী রোকনের সন্তান। নানা আজিম আলী ডায়মন্ড সিমেন্টের পরিচালক। তারিকের মামা চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এমন একটি পরিবারের ওই স্বপ্নবাজ তরুণের জীবন ওলট পালট করে দেয়া হয়েছে একটি সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন রসায়নের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রে পেন্সিলের কালি দিয়ে দাগ দেয়ায় তিন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন ম্যাজিস্ট্রেট। বহিষ্কৃতরা হলেন- সেন্ট প্লাসিড স্কুলের ইমাম হোসেন, তারিক আমিন চৌধুরী ও স্কলাসটিকা স্কুলের সায়মা আক্তার।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার নগরীর সরকারি মুসলিম কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালীন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রমিজ আলম তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বহিষ্কার করতে কেন্দ্র সচিবকে নির্দেশ দেন।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003662109375