ধর্ষকেরা যখন দেহরক্ষীধারী! - Dainikshiksha

ধর্ষকেরা যখন দেহরক্ষীধারী!

এ কে এম জাকারিয়া |

আমরা এখন সেই দশায় গিয়ে পৌঁছেছি, যখন চার তারকা হোটেলে দেহরক্ষীর পাহারায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে! এ ঘটনা থেকে দেহরক্ষীধারী ধর্ষকদের অর্থবিত্ত সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া গেল। তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তিও যে যথেষ্ট, তা অনুমান করা কঠিন নয়। অভিযোগ আছে, মামলা না নিতে নাকি অভিযুক্তরা ২৫ লাখ টাকার টোপও ফেলেছিলেন। সেই টোপ গেলা হয়েছে কি হয়নি, তা জানা না গেলেও মামলা নিতে থানা-পুলিশের গড়িমসি কিছু একটার ইঙ্গিত দেয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা চেষ্টার পর ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী যে শেষ পর্যন্ত বনানী থানায় মামলা করতে পেরেছেন, এটাই তো মনে হয় বড় সান্ত্বনা!

দুই বিশ্ববিদ্যায়ছাত্রীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে অনেকেই জেনে গেছেন। যাঁরা এখনো অন্ধকারে, তাঁদের জন্য ঘটনার একটু বিবরণ দেওয়া দরকার। ঘটনাটি এ রকম: দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর অভিযোগ, গত ২৮ মার্চ তাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যিনি, তাঁর সঙ্গে এই দুই ছাত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের পুরোনো এক বন্ধু। এরপর বনানীর একটি চার তারকা হোটেলে নিজের জন্মদিনের পার্টিতে ওই দুজনকে অনেক অনুরোধ করে নিয়ে আসা হয়। সেই হোটেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কক্ষ ভাড়া করা ছিল। পার্টি শেষে ওই দুই ছাত্রীকে মূল অভিযুক্ত ও তাঁর সঙ্গীরা কক্ষ দুটিতে আটকে ফেলেন। প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধু দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন। তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন মূল অভিযুক্তের দেহরক্ষী ও গাড়িচালক। অভিযোগকারী এক ছাত্রীর দাবি, তাঁদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।

এই ঘটনা ঘটেছে মাস খানেকেরও বেশি আগে। আর এ নিয়ে মামলা হয়েছে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায়। এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ধর্ষণের শিকার এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেছেন, লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আসামির তরফে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, আসামির দেহরক্ষী তাঁকে নিয়মিত অনুসরণ করতে থাকেন এবং দুজনের বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নেন। এমনকি ধর্ষণের ভিডিও আপলোড কারার হুমকিও দেওয়া হয়।

দেশের বাস্তবতায় ‘লোকলজ্জার’ গুরুত্ব বোধগম্য। একই সঙ্গে টের পাই মেয়ে দুটির চরম অসহায়ত্বও। আইন নাকি সবার জন্যই সমান। বনানী থানার যে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা না নিতে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তিনিও তা-ই মনে করেন! ‘বিনা দোষে’ তিনি নাকি কাউকে হয়রানি করতে চান না। এবং সে কারণেই সম্ভবত ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সারা রাত থানায় থাকতে বলা হয়! মামলা নিতে থানাকে রাজি করাতে টানা ৪৮ ঘণ্টা ‘যুদ্ধ’ করতে হয়েছে ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীকে। আর যে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ‘তদন্তের স্বার্থে’ তাঁদের নামধামও প্রকাশ করতে চান না ওই কর্মকর্তা!

যাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে, তাঁরা সত্যিই ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না, তা আদালতে প্রমাণ হতে হবে। এর আগ পর্যন্ত তাঁরা ‘অভিযুক্ত’ হিসেবেই থেকে যাবেন। কিন্তু ধর্ষণের দায়ে ‘অভিযুক্ত’দের ব্যাপারে এত সংবেদনশীলতা কে কবে দেখিয়েছে? বনানী থানার এই আচরণের পেছনে আসলে কী কাজ করেছে? ‘আইন সবার জন্য সমান’ ও ‘বিনা দোষে কাউকে হয়রানি’ না করার নীতি, নাকি বিত্তশালী প্রভাব!

তবে পুলিশ যতই ‘বিনা দোষে’ কাউকে হয়রানি না করার নীতি নিক বা ‘তদন্তের স্বার্থে’ নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকুক, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামগুলো কিন্তু এখন আর অজানা নয়। একটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজপোর্টালে তাঁদের নাম ছাপা হয়েছে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পাতায় তাঁদের নাম তুলে দিয়ে তাঁদের সম্পর্কে বনানী থানায় বিস্তারিত জানাতে ও তাঁদের ছবি প্রকাশ করারও অনুরোধ করেছেন। আমরা কি খুব শিগগির অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি দেখতে পাব? নাকি তাঁদের গ্রেপ্তারের ‘চেষ্টা’ চলতেই থাকবে?

ধর্ষণ যখন চার তারকা হোটেল ঘটে এবং অভিযুক্ত ধর্ষকেরা যখন দেহরক্ষীধারী হন, তখন তাঁদের ‘রক্ষা’ করার নানা পথও বের হয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ও সংশয় তাই কাটে না। অর্থ ও বিত্ত কী না করতে পারে। আমিন হুদা জেল খাটছেন হাসপাতালের বিছানায়’। ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে তাঁর ৭৯ বছর জেল হয়েছে। তিনি ১৮ মাস ধরে বারডেম হাসপাতালে আছেন দুটি রুম নিয়ে। এসি কক্ষে থাকেন। সেখানে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন সবই আছে। পাশের কক্ষে পুলিশ ও কারারক্ষীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকেন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর ব্যক্তিগত সহকারী ও গাড়িচালক। যাঁর জেলে থাকার কথা, তিনি মাঝেমধ্যে গাড়ি নিয়ে বাইরে ঘুরতেও যান!

মিলটা লক্ষণীয়, আমিন হুদার সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ও গাড়িচালক। বনানীর ধর্ষণের ঘটনায়ও প্রধান অভিযুক্ত চলাফেরা করেন দেহরক্ষী নিয়ে। আগের দুজনের বিষয়ে আইন কী বলে জানা নেই, তবে পরের দুজন অপকর্মের সঙ্গী। কী অদ্ভুত মিল, কত সঙ্গীসাথি লাগে তাঁদের। আইন তো তাঁদের জন্য সমান নয়। শাস্তি হলেও তাঁরা আরাম-আয়েশই থাকেন!

৪৮ ঘণ্টা ‘যুদ্ধ’ করে মামলা করে ওই দুই শিক্ষার্থী তাঁদের কাজটি করেছেন। কিন্তু দেহরক্ষীধারী ধর্ষকদের বিচারের মুখোমুখি করার কঠিন লড়াইয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁদের পাশে থাকবে তো?

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052800178527832