সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা। বিরতিহীন পাঠদানের ব্যবস্থা। এরমধ্যে রয়েছে স্কুলের ক্লাস, প্রাইভেট ও কোচিং। একটি কেজি স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি। তবে মাঝপথে খাওয়ার জন্য সামান্য বিরতি রয়েছে। এ ধরণের চটকদার বিজ্ঞাপনে অভিভাবকরাও আকৃষ্ট। তাই তাঁদের কোমলমতি শিশুদেরকে ভর্তি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিভিন্ন মডেল ও কিন্টার গার্ডেন স্কুলগুলোতে। তবে লাগামহীন পাঠদানের চটকদারি বিজ্ঞাপন দেয়া হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের তেমন কোন অনুমতিপত্রও নেই। এমনকি ক্লাসে মানসম্মত পাঠদানও দেয়া হয় না। কোচিং বাণিজ্যই এদের মূল টার্গেট। নেই কোন খেলার মাঠ। ইট কাঠে আবদ্ধ বন্দি পাঠশালায় শৈশব কাটছে কোমলমতি শিশুদের। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মত নামসর্বস্ব এমন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোর বিনাবেতনে মানসম্মত পাঠদান হয়না এমন ধারণা থেকেই ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য এসব স্কুলগুলোকে বেছে নিচ্ছেন। সেই সুযোগে গেল এক দশকে এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক কিন্টারগার্ডেন স্কুল। স্কুলগুলোতে সরকারি-নিয়মকানুনের কোন বালাই নেই। এরমধ্যে কোন কোন স্কুল আবার দেশ পেরিয়ে ইন্টারন্যাশনাল খেতাবও লাগিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠা ইট পাথরের খুপড়ি আবদ্ধ ঘর বেছে নেয়া হয়েছে পাঠশালা হিসেবে। স্কুলের খোলা মাঠ বলতে কিছুই নেই। খেলাধূলা ও বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এরপরও প্রতিনিয়তই এসব স্কুলে শিক্ষা নিতে আসছেন শিশু শিক্ষার্থীরা। ফলে তাদের সকালের মুক্ত পরিবেশ কাটছে আবদ্ধ পাঠশালায়। এছাড়া লাগামহীন পাঠদান নিয়েও রয়েছে নানা কথা। সকাল ৮টা থেকে এসব কেজি স্কুলে ক্লাস শুরু হয়। এরপর বাধ্যতামূলক কোচিং করা হয়। এভাবে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলে।
আইয়ুব আলী, আব্দুল কাদের মজনু, শফিউল ইসলাম শামীম, শরীফ আহমেদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকই পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই কেজি স্কুলগুলোর কার্যক্রম ওপরে ভাল মনে হলেও আড়ালে বাণিজ্যই তাদের প্রধান টার্গেট। নানা অজুহাতে টাকা আদায় করাই লক্ষ্য। এছাড়া বছরের শুরুতে সিলেবাসে প্রয়োজনীয় বই লিখে পুস্তক প্রকাশনীর কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তারা আরও বলেন, প্রতিবছর ছাত্র সংগ্রহে নামসর্বস্ব শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে অভিনব কৌশল গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করার জন্য বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসজুরে শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের দেয়ালে দেয়ালে রংবেরংয়ের পোস্টার-লিফলেট সাটানোর পাশাপাশি ঝুলানো হয় ডিজিটাল প্যানা ও ব্যানার। এছাড়া মাইকযোগে প্রচারের অসম প্রতিযোগিতা তো রয়েছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কিন্টার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আমাদেরও কাম্য। কিন্তু সরকারি কোন নীতিমালা না থাকায় ব্যাঙের ছাড়ার মত যত্রযত্র কেজি স্কুলের নামে নামসর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তাই কেজি স্কুলগুলোকে সহজশর্তে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া প্রয়োজন। তাহলেই কেবল এসব রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম জানান, স্কুলের ক্লাস শেষ হলে বাধ্যতামূলক কোচিং করানোর সুযোগ নেই। লাগামহীন পাঠদান শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্যও হুমকি। তাই কোন কিন্টারগার্ডের স্কুলে নিয়ম বর্হিভূত পাঠদান দেয়ার অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।