নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী হিরণ্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয় - Dainikshiksha

নালিতাবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী হিরণ্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়

শেরপুর প্রতিনিধি |

শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরের আড়াইআনি বাজারে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ ‘হিরণ্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়’ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মাথা উঁচু করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হিরন্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫১ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন মাত্র ১০ জন শিক্ষক। স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় গারো অধ্যুষিত বিদ্যালয়টির মূলত গোড়াপত্তন হয় ১৯০৫ সালে।

নালিতাবাড়ীতে প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে খালভাঙ্গা গ্রামের স্বর্গীয় শ্রী মঙ্গল সরকার মহাশয়ের বর্হিরবাটিতে হিরন্ময়ী বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয় আটচালা একটি টিনশেট ঘরে ১৯০৫ সালে। শ্রী মঙ্গল সরকারের জেষ্ঠ্যপুত্র মহিমচন্দ্র পাল শেরপুর জেলাশহরের ভিক্টোরিয়া একাডেমি থেকে এন্ট্রান্স পাস করে প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিদ্যালয়ের হাল ধরেন ১৯০৬ সালে।

জানা যায়, ১৯০৬ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত এই ৩ বছর বিদ্যালয়টি খালভাঙ্গা গ্রামের ওই আটচালা ঘরে পরিচালিত হয়। এরপর আড়াইআনির কাচারী ম্যানেজার মোহিনী বাবুর মাধ্যমে জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টিকে খালভাঙ্গা গ্রাম থেকে স্থানান্তরিত করে আড়াইআনির মেহগনী সড়কের পাশে (বর্তমান খাদ্যগুদামের স্থানে) এনে স্থাপন করা হয়। এলাকার জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর পত্নী হিরনবালার নামে বিদ্যালয়টির প্রথমে নামকরণ করা হয় ‘হিরন্ময়ী স্কুল’। প্রতিষ্ঠাতা জমিদারের উদ্যোগে ১৯১৯ সালে হিরন্ময়ী বিদ্যালয়কে ১ম মিডল ইংলিশ স্কুলে উন্নীত (এম,ই স্কুল) করা হয়। ওই সময় প্রাথমিক সেকশন জুনিয়রের সাথে যুক্তছিলো। প্রতিবছর ৪ জুলাই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। ১৯৩৪ সালে বিদ্যালয়টিকে পুনরায় স্থানান্তরিত করে আড়াইআনি বাজার এবং ভোগাই নদীর পাশে সুন্দর পরিবেশে (বর্তমান স্থানে) স্থাপন করা হয়। আর আগের স্থানটি এখন হিরন্ময়ী খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহূত হচ্ছে।

১৯৪১ সালে হিরন্ময়ী এম,ই স্কুলকে-উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করা জন্য অর্থাত্ সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত খোলার জন্য এলাকায় পঞ্চায়েত, প্রেসিডেন্ট, গ্রামের মোড়ল ও মাতাবরগণ আড়াইআনি জমিদারের কাচারী ম্যানেজার মোহিনী রায় মহাশয়ের দেখা করে বৈঠক করেন এবং একপর্যায়ে হাই সেকশন খোলার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তখন ১৯৫৬ সালে টাঙ্গাইল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে আনা হয় শশীভূষণ চন্দ মহাশয়কে। তিনি ছিলেন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট। ওই সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন মহিমচন্দ্র পাল আর মৌলভী শিক্ষক ছিলেন ইদ্রিস আলী মৌলভী। ৪ বছর শশীভূষণ চন্দ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি চলে গেলে শ্রীযুক্ত ক্ষিতিশ চন্দ্র ঘোষকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯১৯ সালে ২৩ জুলাই তদানীন্তন শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন সিও শংকর সুকুল বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘৭২ সালে হিরন্ময়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৯৭৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পান বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

প্রাচীনতম শতবর্ষী পুরানো হিরন্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন অনেকে। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলেন, গুজাকুড়া গ্রামের নন্দ কিশোর মজুমদারের পুত্র অ্যাডভোকেট দ্বীজেন্দ্র কিশোর মজুমদার। খালভাঙ্গা গ্রামের শ্রীযুক্ত নগেন্দ্র চন্দ্র পাল। বরুয়াজানী গ্রামের সেকান্দর আলী তালুকদার, নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট জসীম উদ্দিনসহ অনেকে এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের ও বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন হিরন্ময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্ররা। আর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, শশীভূষণ চন্দ, ক্ষিতিশ চন্দ্র ঘোষ, এলাকায় শিক্ষাগুরু খ্যাত নগেন্দ্র চন্দ্র পাল, প্রফেসর এনায়েত আলী, মোহাম্মদ আলী বি,কম, (ভারপ্রাপ্ত) হিসাবে আব্দুল খালেক, শামছুল হক। সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মো. আবুল হোসেন মাষ্টার। তিনি ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে ছিলেন। হিরন্ময়ী উচ্চ বিদ্যালটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভালো। কালের সাক্ষী অবহেলিত এই বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসি ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003809928894043