নির্ধারিত সময়ে এবারও স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে না - Dainikshiksha

নির্ধারিত সময়ে এবারও স্থায়ী ক্যাম্পাস হচ্ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য চার দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। চতুর্থ দফার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৯ জানুয়ারি।

এই সময়ের মধ্যে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে। নির্ধারিত সময়ে বাকি ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না বলে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। তবে ১১ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে দু-একটি বিভাগ চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর সর্বপ্রথম ২০১২ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এবং চতুর্থ দফায় চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য কমপক্ষে এক একর, অন্যান্য স্থানের জন্য দুই একর অখণ্ড জমি থাকার বাধ্যবাধতকা নির্ধারণ করা হয়।

সূত্র জানায়, চতুর্থ দফায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা খুব শিগগির শেষ হচ্ছে। তাই ইউজিসির কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫১ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তারিত তথ্য চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠায়। আর এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চতুর্থ দফায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময়সীমাও শেষ হচ্ছে আর কিছুদিন পরই। তাই আমরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী অবস্থা সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখন পরবর্তী করণীয় ঠিক করা বা ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। আমরা শুধু সুপারিশ বা বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে পারি। তবে যদি ইউজিসিকে উচ্চ শিক্ষা কমিশনে রূপান্তর করা হয় তাহলে সমস্যা তুলে ধরার সঙ্গে সমাধান বা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। ’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

যদিও তাদের মধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরেও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে পৃথক ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করলেও তাদের ৩৯টি প্রোগ্রামের মধ্যে ১৫টি প্রোগ্রাম সেখানে চালাচ্ছে। বাকি প্রোগ্রামগুলো রাজধানীতে আরো দুটি ক্যাম্পাসের মাধ্যমে পরিচালনা করছে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জমিতে নির্মাণাধীন স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়। এই ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই একটি ভবন নির্মাণ করেছে, আরেকটি নির্মাণাধীন। আবার যারা একটি ভবনই নির্মাণ করছে তাদেরও অনেকের এক-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের, যাদের ভবন নির্মাণাধীন হলেও তারা এখনো আংশিক শিক্ষা কার্যক্রমও স্থানান্তর করতে পারেনি। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জমি কিনেছে কিন্তু এখনো নির্মাণকাজ শুরু করেনি। আর নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তিনটি।

একাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দুটি। ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও দুটি। তবে আইন অনুযায়ী এখনো জমিই ক্রয় করেনি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়া মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তিনটি। সেগুলো হলো চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং রাজধানীর ইবাইস ইউনিভার্সিটি। সংশ্লিষ্টরা জানায়, যারা এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি তাদের বেশির ভাগই রাজধানীর বাইরে বা একেবারে শেষ সীমানায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে। তাদের অনেকেই ইচ্ছা করে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে কালক্ষেপণ করছে। কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানে, তারা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করলেও তাদের পুরোপুরিভাবে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ ঢাকার এক কোনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গেলে সেখানে শিক্ষার্থী পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আছে যারা স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করলেও শাখা ক্যাম্পাস হিসেবে বর্তমান ঠিকানা ধরে রাখতে চায়।

এ জন্যই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে কালক্ষেপণ করছে। এমনকি ইউজিসি একই সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত অডিট রিপোর্টেরও তালিকা জমা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে ৮৬টির। তবে এর মধ্যে মাত্র আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট রিপোর্ট হালনাগাদ আছে। চারটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা গত ২২ বছরেও তাদের অডিট রিপোর্ট ইউজিসির কাছে জমা দেয়নি। ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অডিট রিপোর্ট জমা দিচ্ছে না। ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর ধরে অডিট রিপোর্ট দেয় না ইউজিসিকে। বাকি ৪৮ বিশ্ববিদ্যালয় এক থেকে চার বছর ধরে অডিট রিপোর্ট জমা দেয় না। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘প্রথমে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে তাদের শিক্ষার্থী অনেক।

তাদের জন্য টিউশন ফির ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না। ফলে তাদের পক্ষে সহজেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। সবার মধ্যেই প্রতিযোগিতা চলছে। তাই টিউশন ফি ভেবেচিন্তে নির্ধারণ করতে হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে পাঁচ-সাত বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়াটা কষ্টকর। তবে সরকার যদি ন্যায্য মূল্যে জমির ব্যবস্থা করত তাহলে যাওয়াটা সহজ হতো। এমনকি ব্যাংক থেকেও ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেই তাদের। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। তবে এখন ইউজিসিরই উচিত পথ বের করে দেওয়া। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। ’

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089149475097656