নির্বাসিত বচন আজ-‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপ:’ - দৈনিকশিক্ষা

নির্বাসিত বচন আজ-‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপ:’

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

সময়ের বিবর্তনে কতই না পরিবর্তন! হেরে যাচ্ছে অনেক কিছু। আচার আচরণে কত সংযোজন আর বিয়োজন। অনেক রীতি-নীতি ও বদলে যাচ্ছে। কতেক ইতিবাচক আর কতেক নেতিবাচক। তবু সময় বসে নেই। আমাদের পৃথিবীর কেবলি এগিয়ে চলা।

লেখাপড়ার সময়ে অধ্যয়নই আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব ছিল। দিন রাতে মিলে প্রতিদিন কত ঘন্টা পড়াশুনা করেছি, সে আজ কড়ায় গন্ডায় হিসেব করে বলতে পারবো না। তখনকার দিনে গ্রামাঞ্চলে সব বাড়িতে ঘড়ি ছিলো না। সময়ের এতো হিসাব রাখার সুযোগ ও ছিল না। তবে আজকালের হিসেবে রাতের বেলা নিয়মিত দশ-এগারটা পর্যন্ত কিংবা কখনো কখনো তার চেয়ে বেশী রাত জেগে পড়াশুনা করেছি। আগেকার দিনে লেখাপড়া যারাই করেছেন, তাদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। কেউ কেউ আরো বেশী রাত পর্যন্ত জেগে পড়াশুনা করেছেন। সে সময়কার কেউ পড়াশুনা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারতেন না। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই পড়াশুনা করতেন, তারা কেবল বই-পুস্তকে পড়াশুনায় লেগে থাকতেন।

আমাদের সময় পাঠ্যপুস্তকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল। আজকালের পাঠ্যপুস্তক গুলো শিক্ষার্থীদের যেন টানতেই পারে না। নীতি-নৈতিকতার কথা পাঠ্যপুস্তকে তেমন একটা নেই। সহজ থেকে কঠিন আর জানা থেকে অজানায় নিয়ে যাবার প্রয়াস খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। মূর্ত থেকে বিমূর্তের সেতু বন্ধন নেই।

আমাদের সময়ে পড়াশুনা পরিমাপের জন্য পরীক্ষা ছিল। আজকাল হয়েছে এর উল্টো। এখন যেন পরীক্ষা পরিমাপের জন্য পড়াশুনা। পরীক্ষা পাসের জন্য যেটুকু পড়াশুনা দরকার, তা হলেই হলো। এর চেয়ে বেশী পড়াশুনা করে যেন কোন লাভ নেই। পড়াশুনা করে চাকরী না পেলে আজকাল জ্ঞান দিয়ে কী হবে (!) ? লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জন করার মহৎ উদ্দেশ্য এখন আর কারো নেই বলে মনে হয়।

সে সময় অভিভাবকেরা সন্তানের চাকরি-বাকরি অপেক্ষা মানুষ হবার উপর বেশী গুরুত্ব দিতেন। শিক্ষকের কাছে সন্তানকে নিয়ে গিয়ে বলতেন, ‘স্যার,আমার সন্তানকে মানুষ করে দেবেন।’ আজকাল এমন কথা কদাচিত শোনা যায়।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের এখন চরম অবনতি। নানা স্থানে ছাত্রের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত হবার সংবাদ হর হামেশা শোনা যায়। শিক্ষককে ছাত্রের এতটুকু ভয় নেই। ভালোর জন্য এক আধটু ধমক দেবার ও অধিকার নেই শিক্ষকের। অভিভাবকদের ও মন মানসিকতায় পরিবর্তন। এক সময় শিক্ষকের হাতে সন্তান সঁপে দিয়ে বাবা বলতেন, ‘কেবল হাড্ডি গুলো আমার আর বাকি সব আপনার।’

এখন অভিভাবকের কাছ থেকে এমন কথা খুব একটা শোনা যায় না। বর্তমান সময়ে অভিভাবকের অতিশয় স্নেহ-মমতায় অনেক সন্তান গোল্লায় যাবার পথে। আমরা শিক্ষকদের বাবা-মা অপেক্ষা ভয় ও সম্মান দু’টোই বেশী করেছি। তাঁরা ও আমাদের নিজের সন্তানের চেয়ে বেশী ভালবেসেছেন।

পরীক্ষায় আজকাল তেমন একটা ফেল নেই। পরীক্ষা দিলেই পাস। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির সুযোগে পাসের হার এত বেশী বাড়িয়ে দেয়া সঙ্গত হয় নাই। পরীক্ষা দিলেই যদি পাস হওয়া যায়, তবে পরীক্ষার জন্য এতো বেশী পড়াশুনার কী প্রয়োজন? ফেলের আতংক না থাকলে পড়াশুনার গরজ একেবারে থাকে না। জিপিএ ফাইভ পেয়ে ও যদি মেডিক্যাল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারা না যায়, তাহলে জিপিও ফাইভ দিয়ে কী লাভ? পরীক্ষার খাতায় যা-তা লিখে ও যদি পাস করে ফেলে, তাহলে তো লেখাপড়ার দরকার পড়ে না। নোট-গাইড উঠিয়ে দিয়ে এ বিষয়ে আমরা একটু কঠোর হতে পারলে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির সুফল ঠিকই এতদিনে আমাদের ঘরে উঠতো।

বর্তমান সময়ের ছাত্রদের কাছে অধ্যয়ন যেন তেমন জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নয়। তারা পাঠ্য বই পর্যন্ত ঠিকমত পড়ে না,পাঠ্য বইয়ের বাইরে গিয়ে কিছু পড়া দূরে থাক। অধ্যয়ন বা পড়াশুনায় ছাত্রদের আজকাল খুব অনীহা। তাদের অনেককে পরীক্ষার আগের রাতে ও লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইল হাতে বেপরোয়া ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়।পরীক্ষার জন্য তাদের ‘নো টেনশন’।

আমরা ‘ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক প্রবন্ধ-রচনায় ‘ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ'(অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান তপস্যা) প্রবচনটি পড়ে সেটি হৃদয়ে ধারণ করে পড়াশুনায় হরদম লেগে থেকেছি।

আজকাল মোবাইল ও কম্পিউটারে আমাদের ছেলে মেয়েদের মাথা খেয়ে ফেলছে। তারা পড়াশুনা করার পরিবর্তে ঘন্টার পর ঘন্টা এ সবে লেগে থাকে। গোগল কিংবা ইউটিউবে একবার ঢুকে পড়লে আর বেরুবার নাম গন্ধ নেই। তারা এ সবের নেতিবাচক দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে বেশী। এর আশু প্রতিকার করতে না পারলে আমাদের প্রজন্মের ভবিষ্যত একেবারে অন্ধকার।

লেখক: অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032398700714111