নৌকাডুবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই জেএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত টিম বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তদন্ত টিমের প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম, সদস্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ মিত্র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজী ছাত্র-ছাত্রী, উদ্ধারকারী, প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষক, এলাকার সাধারণ মানুষ ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রাথমিক তদন্তে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্যে বীরগাঁও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিনের গাফিলতি ও বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। আক্রান্ত ছাত্রীদের অনেকে এবং তাদের অভিভাবকরা জানান, বীরগাঁও থেকে কৃষ্ণনগর আবদুল জাব্বার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসতে নৌকা ভাড়া বাবদ প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে তোলেন। ওই স্কুলের মোট ২৮৪ শিক্ষার্থী।
নৌকা ভাড়া বাবদ যে টাকা তোলা হয় তা দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫টি নৌকা ভাড়া করে নেয়া যেত। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মাত্র দুটি নৌকা ভাড়া করেন। আহত পরীক্ষার্থী রাহাতসহ কয়েকজন জানায়, নৌকাটি যখন ধাক্কা খেল তখন নৌ-মাঝিকে নৌকাটি থামাতে বলা হচ্ছিল। কিন্তু তারা নৌকা না থামিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় নৌকার তলার ফুটা দিয়ে পানি উঠতে থাকে এবং মাছের ঘেরের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নৌকাটি উল্টে যায়।
নিহত সোনিয়ার চাচাতো বোন রোমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের বীরগাঁও স্কুলের শিক্ষার্থীদের দাবি আমরা বীরগাঁও স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র চাই। আর যেন কোনো শিক্ষার্থী আমার বোনের মতো অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।’ তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার আবদুল জাব্বার উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়। সেখানে তারা দেখেন দুর্ঘটনার কারণে বুধবার যে ১৮ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তাদের মধ্যে ৭ জন বৃহস্পতিবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
এদের মধ্যে পাপিয়া আক্তার, খাদিজা, জান্নাতুল আক্তার, তানজিনা খানম নামে চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজী তাৎক্ষণিক অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠান। এ সময়ও শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দায়ী করে। তদন্ত টিমের প্রধান মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আশা করছি আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারব। সেই প্রতিবেদনের আলোকে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বুধবার এবারের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়। ওইদিন বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের তিতাস নদীতে সকাল ৯টার দিকে দেড়শ’ জেএসসি পরীক্ষার্থী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। তাতে দুই পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আহতরা আর প্রথম দিনের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে পারেনি।
আক্রান্তদের জেএসসির বাংলা পরীক্ষা নেবে সরকার : তবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে যে কোনো শুক্রবার পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মহীউদ্দীন খান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা পরীক্ষাটি নেব।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে তারা যেহেতু পরীক্ষার মধ্যে আছে, তাই বাড়তি চাপ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রেখে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।’ পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জেএসসি পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য দুটি সেট প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে ইতিমধ্যে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। বাকি সেটে দুর্ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাটি নেয়া হবে।
দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা : এদিকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার অতিবাহিত হয়। এদিন জেএসসিতে বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং জেডিসিতে আকাঈদ ও ফিকহ বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রথমদিনের চেয়ে এদিন অনুপস্থিতি এবং বহিষ্কার উভয় সংখ্যা বেড়ে যায়। এদিন অনুপস্থিত ছিলেন ৬১ হাজার ৯৮৯ জন। নয় শিক্ষা বোর্ডে মোট বহিষ্কার হয়েছে ২০ জন। বহিষ্কৃৃতদের মধ্যে ৭ জনই মাদ্রাসা বোর্ডের জেডিসি পরীক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১১ জন, বরিশালে ১ জন।