এমপিওভুক্তির দাবিতে ৫ম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন মাধ্যমিক পর্যায়ের আইসিটি শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় দু’শতাধিক এমপিওবঞ্চিত আইসিটি শিক্ষক ধর্মঘটে অংশ নেন। দিন-রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন তাঁরা।
ধর্মঘটে শিক্ষকরা বলেন, আইসিটি শিক্ষকরা প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করান। অথচ তারা এখনও এমপিওভুক্ত নন। আমাদের দাবি মেনে না নিলে ধমর্ঘট চলতে থাকবে।
বাংলাদেশ এমপিওবঞ্চিত আইসিটি শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি আশিকুজ্জামান বলেন, সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ ধমর্ঘট চলবে। কমর্সূচি পালন করতে এসে ছয় শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। বতর্মানে তারা বিভিন্ন মেডিক্যালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আশিকুজ্জামান আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাদের বলেছেন, ‘তার কাছে কোনো ফাইল আটকে থাকে না। আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও-সংক্রান্ত কোনো ফাইল এখনও তিনি হাতে পাননি। তা ছাড়া সরকারের টাকায় শিক্ষকদের বেতন দিতে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।’
আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, আইসিটি শিক্ষকদের যারা এখনও এমপিওবঞ্চিত, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংশ্লেষবিষয়ক তথ্য তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন বাকি বিষয় মন্ত্রণালয় দেখবে।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া রাজবাড়ীর শিক্ষক আবদুল আওয়াল বলেন, ইসলামের ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের পর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা নিয়ে পাঁচ বছর ধরে স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তিনি। বাসায় তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। সবার মায়া ছেড়ে রুটি-রুজির জন্য তিনি ধর্মঘটে এসেছেন। তার মতো শতাধিক শিক্ষক একইভাবে দিনাতিপাত করছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন করে কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্যাটার্নভুক্ত বিষয় আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত করা হয়।
তারা বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আমরা পাঠদান করছি। দুঃখের বিষয়, আমরা প্যাটার্নভুক্ত শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ও বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। তাই অবিলম্বে আইসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিয়োগকৃত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা; যোগদানের তারিখ হতে এমপিওভুক্ত করা; তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ে যাদের কাগজ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা আছে তাদের এমপিওভুক্ত করা এবং মে মাসের মধ্যে এমপিও বিলে অন্তর্ভুক্ত করা।
এ সময় এ সংক্রান্ত সঙ্কট নিরসনে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানান আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
এদিকে, একই দবিতে দুই বছর এমপিও না দেয়ার শর্তে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত মাধ্যমিকের শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরাও গত রোববার (১৫ মে) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সৃষ্টপদে নিয়োগ প্রাপ্ত নন এমপিও একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের সামনে আর কোন রাস্তা নেই। আমরা আর কত দিন এভাবে বেতন বাদে শিক্ষকতা করে যাবো। বিনা বেতনে পরিবার নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।