অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সাবিনাকে সাথে করে শেষ বয়সে জীবনের প্রথম অর্জন “সাক্ষরজ্ঞান” সম্পন্ন করার সার্টিফিকেট নিতে এসেছেন দুই সন্তানের জননী লিলি বেগম। দীর্ঘ নয় মাস কষ্টের পর সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে আনন্দে তাঁর দু’চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। জীবনের শেষলগ্নে স্বাক্ষর ও বর্নমালা শিখে সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে তার মতো আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন “স্বাক্ষর মা” স্কুলের ২৫৩ মা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া-তালতলী সীমান্তের তালতলীর প্রত্যন্তপল্লী সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া ও বড়বগী ইউনিয়নের এই ২৫৩ অক্ষরজ্ঞানহীন মা দীর্ঘ নয় মাস পর আজ স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা আজ শুধু বাংলা বর্ণমালা পড়তে না, লিখতে পারে বাংলা ও ইংরেজি। স্টুওয়ার্ড শিপ ফাউন্ডেশন ইউকে’র অর্থায়নে এফএইচ এ্যাসোসিয়েশন’র (বয়ষ্ক স্বাক্ষরতা কার্যক্রম) সহায়তায় অক্ষরজ্ঞানহীন এই বয়স্ক মায়েরা এখন বর্ণমালায় আলো ছড়িয়েছে।
বুধবার সকালে তাঁতীপাড়া কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে জীবন সায়াহ্নে এসে শিক্ষার আলোয় আলোয় ছড়ানো ১২৭ জন স্বাক্ষর মা স্কুলের বয়স্ক মাকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। এফএইচ’র এরিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর গৌতম চন্দ্র দাস’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তালতলী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. মাসুদা বেগম।[insise-ad]
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ার চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। বক্তব্য রাখেন এফ এইচ’র ইএম রমজান আলী রুবেল, শিক্ষক জালাল উদ্দিন, ইউপি সদস্য জলিল ফকির, কবিরুল ইসলাম, সাংবাদিক এসএম মোশারফ হোসেন মিন্টু প্রমুখ। এরআগে মঙ্গলবার ১২৬ জন মাকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
ষাটোর্ধ পিয়ারা বেগমের ছোট মেয়ে এখন এইচএসসি’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মেয়ের বড় বড় বই দেখে পড়ার ইচ্ছা থেকে ভর্তি হন “স্বাক্ষর মা” স্কুলে। সেখানে নয় মাস ধরে শিখেছেন বর্ণমালা। গল্প ও কবিতাও পড়তে পারেন। যোগ-বিয়োগ,পূরন-ভাগও পারেন। শুধু পারেন না ইংরেজি পড়তে। কিন্তু বুধবার উপজেলার সাক্ষর মা স্কুলের কার্যক্রম শেষ হওয়ায় তাঁর ইংরেজী লেখা ও পড়া আর শেখা হয়নি। তিনি বলেন, ইংরেজি শেখতে পারি নাই তাতে কি, নাতি-নাতনীগোতো এখন বাংলা পড়াইতে পারমু। কেউতো আর মোরে ব-কলম কইবে না।
মা লিলি বেগমের সাথে আসা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা বলেন,“মায় এই পড়াডা আরও আগে শেখলে আমরা ল্যাহাপড়ায় আরও ভালো করতাম। আমাগো মাষ্টার দিয়া পড়া লাগতো না। এই বয়সে মায় যে এ্যাহন বই পড়তে পারে হ্যাতেই খুশি।”
এফএইচ’র এরিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর গৌতম দাস জানান, গত নয় মাসে ২৫৩ মাকে তারা শিখাতে পেরেছেন বর্নমালা। তারা এখন লিখতে ও পড়তে পারছে। এটাই তাদের সফলতা। তিনি উপস্থিত মায়েদের বলেন বলেন, স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে আপনারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন দেখা বন্ধ করবেন না। এখন স্বপ্ন দেখবেন নিজ পরিবার ও সমাজের উন্নয়নের জন্য।