সাতক্ষীরার কলারোয়া সরকারি কলেজের মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও ভবন সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। এমন পরিস্থিতিতে ঘটতে পারে যে কোনো ধরণের দূর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানাভাবে এখনো ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা ব্যবহার করা হচ্ছে। কেবলমাত্র ব্যবহার করা বন্ধ রাখা হয়েছে ত্রিতল ভবনের সুবিশাল হলরুমটি। প্রাচীন এই মূল ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি উঠেছে কলেজ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।
জরুরি ভিত্তিতে সেটি করা না গেলে আর এক ‘জগন্নাথ হল’ ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে অনেকেই বলছেন।
কলারোয়া সরকারি কলেজের মূল ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভগ্নদশা গোটা ভবনটিতে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ভবনটি যে কোনো ধরনের ভার বহনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন স্থানে এর পলেস্তরা খসে পড়েছে। মরিচাধরা লোহার রড বেরিয়ে গেছে।
বারান্দা ও কক্ষগুলোর ছাদে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। কলেজের সুবিশাল হলরুমটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। এটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে এই বিভাগটি এখানে চলছে।
প্রথম তলায় রয়েছে ভাইস প্রিন্সিপ্যালের কক্ষ, ছাত্রীদের সাধারণ কক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও শিক্ষমণ্ডলীর সাধারণ কক্ষ। যে ভবনটি কাগজে-কলমে পরিত্যক্ত বলে স্বীকৃত, সেই ভবনে কেবলমাত্র স্থান সংকুলানের অভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
যা রীতিমতো ভয়ানক একটি বিষয়। এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর (২০১৫) ১৮ নভেম্বর এই কলেজে তিনি যোগদান করেন।
যোগদানের পর পরই মূল ভবনের এই ভগ্ন অবস্থা তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর তিনি ত্রিতল ভবন বন্ধ করে দিয়ে সকলকে সতর্কতার সাথে দ্বিতীয় ও প্রথম তলা ব্যবহারের কথা বলেন।
১৯৬৯ সালে স্থাপিত এই ত্রিতল ভবনটি কিছুটা অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় আজ এমন ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু।
তিনি বলেন, গত বছর পুরানো এই মূল ভবনটি ভাঙার অনুমতি চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। এর উত্তরে জানানো হয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা পত্র, জেলা কনেডেমনেশন কমিটির সুুপারিশ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, গত ২২ আগস্ট কনেডেমনেশন কমিটির সভায় পুরানো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা যায় বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরও ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা যায় বলে জানায়।
একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তও হয় অনুরূপ। এরপরেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি আজও ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ব্যবহার করায় সকলকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
বিষয়টি সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে জানানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।
অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু আরও বলেন, কলেজে বর্তমানে ২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে।নতুন ভবন নির্মাণ না করায় স্থানাভাবে এই পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনে পাঠদান করানো হচ্ছে। ফ
লে প্রতিদিনই উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কায়। এছাড়া বর্তমান সময়ে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে কয়েক দফা ভূমিকম্প বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় এ এলাকায়ও অনুভূত হয়েছে। সুতরাং উদ্বেগ-উৎকন্ঠা যে কতো প্রবল হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কলেজ অধ্যক্ষ।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলা যায় না। এর একটা অবসান দরকার। এই ভবন আর একদিনও ব্যবহার করা উচিত নয়। ‘জগন্নাথ হল ট্রাজেডি’র সেই বিয়োগান্তক মর্মস্পর্শী ঘটনার কথা মানুষ আজও বিস্মৃত হয় নি। সে রকম কোনো ঘটনা ফের ঘটুক-তা চাইবেন না কেউই বলছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ।
কলেজ অধ্যক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সকলেই চাইছেন পুরানো ত্রিতল ভবনটি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন প্রতিস্থাপন করা হোক জরুরিভিত্তিতে। এই অতি জরুরি কাজটি সম্পন্ন করতে সময় ক্ষেপণের কোনো অবকাশ নেই।
বিলম্বজনিত কারণে যদি অনাকাঙ্খিকত কোনো ঘটনা ঘটে-তার দায়ভার কে নেবেন-এমন প্রশ্নও উঠেছে।
তাই দ্রুততার ভিত্তিতে পুরানো ভবনের স্থলে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন কলেজ সংশ্লিষ্ট সকলেই।