পরিবর্তনশীল শিক্ষা: আইসিটি ও বিজ্ঞান - Dainikshiksha

পরিবর্তনশীল শিক্ষা: আইসিটি ও বিজ্ঞান

মো. সাজেদুর রহমান |

শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞানকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজে লাগাতে অথবা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান সংঘ (Science Club)থাকা বাঞ্ছনীয়। আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের অথবা জাতীয়ভাবে শিক্ষার ব্যবহার পর্যালোচনা করলে সহজেই আনুমান করতে পারি যে আমাদের অর্জিত শিক্ষার সিংহভাগ অব্যবহৃত থেকে যায় অথবা জীবনের সাথে তথা রাষ্ট্রের উন্নয়নের সাথে অনিবার্য নয় এমন সব কাজে ব্যয় হয়। এর জন্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হল শিক্ষার সৃজনশীল, অনুসন্ধাণমূলক ও গবেষণামূলক ব্যবহারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে ব্যক্তি যেমন দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় সর্বত্রভাবে দায়ী রাষ্ট্র। কারণ রাষ্ট্র আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষাকে পরোক্ষভাবে শতভাগ নিরুৎসাহিত করে রেখেছে।

আমি মনেকরি উপাত্তের জন্য উপাত্ত পরিবেশন, পরিচালন, পরিসেবন সঠিক কোন কাজ নয়। এতে করে উপাত্ত ও তথ্যের সংক্রমণ (Transmission) হবে মাত্র পরিবর্তন (Transformation) হবে না মোটেও। শিক্ষার সংক্রমণ রোগ সংক্রমণের চেয়ে ভয়ানক। কারণ রোগ সংক্রমণ অস্থায়ী, আরোগ্যযোগ্য। কিন্তু শিক্ষা সংক্রমণ মানুষের তথা শিক্ষার্থীর শিক্ষাসত্তাকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে দেয়। আর শিক্ষাসত্তার স্থায়ী পরিবর্তন যদি ধনাত্মক না হয় তবে শিক্ষার্থীরা তথা জাতি গঠনের কোষগুলো (Cells) একটি সুস্থ জাতীয় কোষকেন্দ্র (Nucleus) গঠন করতে ব্যর্থ হবে। উদাহরণ হিসেবে মুখস্থ বিদ্যার বর্তমান চালচিত্রের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই বিদ্যায় যারপরনাই পারঙ্গম আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সৈনিকদের প্রায় শতভাগ যখন স্কুল-কলেজ পাশ করে যায়, ঠিক তখনই উল্টো চিত্র দেখা যায় এই বিদ্যার পরিবর্তিত (Transmitted) প্রয়োগের ক্ষেত্রে। উদাহরণ, দেশের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন শিক্ষার পরিবর্তিত প্রয়োগে কে কতটা পারঙ্গম সেই পরীক্ষা নিতে যায়, তখনই প্রায় শতভাগ পাশ করা শিক্ষার্থীদের পাশের হার ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করে। অর্থাৎ পাশের হার প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে।

উল্লিখিত সমস্যার মূলে রয়েছে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার চর্চা না থাকা। বিজ্ঞান শিক্ষা কখনই সংক্রমিত হয় না অর্থাৎ শিক্ষক জানলেই শিক্ষার্থী জানে না বা জানতে পারে না বা শিক্ষক জানাতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষক থেকে তথ্য ট্রান্সমিট হওয়া। আর এই ট্রান্সমিশনের কাজ করে বিজ্ঞান। সংক্রমণমূলক শিক্ষার জন্য যেমন শিক্ষক-শিক্ষার্থীই যথেষ্ট, পরিবর্তনশীল শিক্ষার জন্য কিন্তু তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষক-বিজ্ঞান-শিক্ষার্থী। তাই আজ আমাদের অব্যাহত অস্তিত্বের জন্যই বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পদার্থ, রসায়ন, গণিত, শারীরবৃত্তীয়, পরিবেশ প্রভৃতি বিজ্ঞানের দিকে রাষ্ট্র, সমাজ, কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ প্রত্যেক মহল থেকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রচলিত অন্যান্য সকল বিষয় আমাদের দেশে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন দরকার সেগুলোকে যুগোপযোগী করে ব্যবহার করা। কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষায় আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষার মান বাড়াতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সর্বাগ্রে আনতে হবে তেমনি অন্যান্য শিক্ষার মধ্যেও প্রয়োগমূলক দিকটার দক্ষতা কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে আশু নজর দিতে হবে। বিজ্ঞান ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আর যদি ইতোমধ্যেই থেকে থাকে তবে তার বাস্তবভিত্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা শতভাগ পাশের কৃতিত্ব হয়ত অর্জন করেছি অনেকবার, আরও বহুবার করব- কিন্তু আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উন্নতির প্রকৃত সিঁড়ি বেয়ে লক্ষ্যে পৌছাবার জন্য কতটুকু প্রস্তুত করে দিতে পারবো সেটি হয়ত হবে একটি প্রশ্ন চিহ্ন।

আধুনিক যুগ তথ্যযুগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রচার ও প্রসার যত বেশি হবে, শিক্ষার্থীরা তত তথ্যবহুল হবে। আজকাল বালা, ইংরেজি, গণিতসহ শিক্ষার সকল শাখাই সৃজনশীল ও গবেষণামূলক শিক্ষার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। ইন্টারনেট হল একটি মুক্ত তথ্য জগৎ। একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তার প্রতিষ্ঠানের বাইরে অধিকতর তথ্যের জন্য অন্য কোথাও কাউকে না পেলেও ইন্টারনেট থেকে তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে। এর জন্য সকাল-বিকাল-রাত, ঝড়-বৃষ্টি-বিজলি, বন্যা-খরা-শীত এমনকি কোন দ্বিতীয় মহাশক্তিই প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াতে পারে না। তথ্যের এ্রই অফুরন্ত এবং ক্রমসমৃদ্ধ আধারকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য প্রতিষ্ঠানকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে। প্রয়োজনে আইসিটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। করা যেতে পারে না শুধু, আইসিটি ক্লাব এখন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সময়ের দাবি। কারণ আইসিটি ক্লাবই হতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রকৃত সুফল অর্জনের অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুফল যেখানে যত বেশি অর্জিত হবে, সেখানে যে অন্যান্য ক্ষেত্রে সুফল অর্জন হবেই একথা আর না বোঝার মত কোন  মানুষ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারনাটির সাথে যুক্ত বাংলাদেশে নেই।

তাই তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানসম্মত, সৃজনশীল ও গবেষণামুলক শিক্ষার প্রচার, প্রসার ও পরিসেবার লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষূদ্রায়তনে বিজ্ঞান ক্লাব এবং আইসিটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা বিশেষ প্রয়োজন। আর এগুলোর সুষ্ঠু ও গতিশীল সুপরিচালনা এবং জাতীয়ভাবে পরিচিতিদানের লক্ষ্যে প্রয়োজন উদ্যমী ও অভিজ্ঞ ইউনিট গঠনের দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ।

লেখক: মো. সাজেদুর রহমান, সিনিয় শিক্ষক (আইসিটি) বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ, বনানী, ঢাকা।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।]

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012168884277344