অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশের বিচারবিভাগের কতিপয় সাম্প্রতিক সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে শিক্ষা বিষয়ক একটি চমৎকার তথ্য দিয়েছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের পরে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি একজন আইনজীবীর মেয়ে, যিনি ভুল প্রশ্নের ভিত্তিতে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে কিভাবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিকার পেয়েছেন, তারও একটি বিবরণ দেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় সভাপতির ভাষণে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, আমাদের একজন আইনজীবীর মেয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। ওই ছাত্রী যে নম্বর পেয়েছেন, তার যথার্থতা হাইকোর্ট বিভাগে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এরপর একজন বিচারপতি, যিনি আজকের এই সভাতেও উপস্থিত আছেন, তিনি অতি কষ্ট করে একটি রায় লিখেছেন। রায় পড়ে আমি আশ্চর্য হয়েছি। কারণ তাতে সায়েন্সের প্রশ্ন , বায়োলজির প্রশ্ন, মেডিকেলের প্রশ্ন একটির পর একটি পর্যালোচনা করে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রশ্নপত্রেই ভুল ছিল। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে চারটি ভুল প্রশ্ন ছিল। সেই ভুলের পাস মার্ক সেই ছাত্রী পাবে। দেখা গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হওয়ার উপযুক্ততা তার ছিল।
সুতরাং হাইকোর্ট ছাত্রীর পক্ষে রায় দেন। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলাম। আমাদের আপিল বিভাগ তখন শুধু যে হাইকোর্টের রায় সমুন্নত রাখলেন তাই নয়, হাইকোর্ট সরকারকে জরিমানা করেছিল ৩০ লাখ টাকা। সেটা তারা কমিয়ে ১৪ লাখ টাকা নির্দিষ্ট করে দিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল এটাও জানান যে, ‘ সেই টাকা অতিশীঘ্র তাকে দিতে হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষার পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টের আলোচিত ওই রায়ের কপি সংগ্রহ করা হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে আগস্ট দেয়া ওই রায়ের কপিতে দেখা যায়, এমবিবিএস ১ম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতির ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে রিটকারী আইনজীবীর মেয়ে ৮১টির উত্তর দেন। রিটাকারীর দাবী অনুযায়ী বাদবাকী ১৯টি প্রশ্ন ও উত্তর সঠিক ছিলো না। তাই ছাত্রীটি ওই প্রশ্নগুলোর উত্তরদানে বিরত থাকেন। কিন্তু তাকে মাত্র ৫৭ দশমিক ২৫ নম্বর দেয়া হয়।
সুপ্রিমকোর্টের আদেশে বলা হয়, সরকার নিশ্চিত করবেন যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সরকারি মেডিকেলে ভর্তিবঞ্চিত ওই ছাত্রীকে ১৪ লাখ টাকা অতিশীঘ্র পরিশোধের উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে যারা ওই ভুল প্রশ্নপত্র তৈরি ও খাতা মূল্যায়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলো তাদের কাছ থেকে জরিমানার টাকা সরকার আদায় করতে পারে।
আদেশে বলা হয়, ভবিষ্যতে যেন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিতে কর্তৃপক্ষ যেন সতর্ক থাকেন।
২০১২-২০১৩ সেশনে ভর্তির জন্য ওই পরীক্ষাটি ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।