পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে প্রক্টর ও পুলিশের এক কর্মকর্তার ওপর চড়াও হন নেতা-কর্মীরা। ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে তাঁরা সামান্য আঘাত পান। এ সময় প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাকেও হেনস্তা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলায় অর্থনীতি বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র। গতকাল অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। আহত মোহাম্মদ আরিফ ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি মনছুর আলম ও মো. একরামুল করিম চৌধুরী দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁরাও অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল সকালে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির অ্যাডভান্সড মাইক্রো ইকোনমিকস বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলার একপর্যায়ে মনছুর আলম ও একরামুল করিম চৌধুরী নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। তাঁদের কথা বলতে বারণ করেন হলের দায়িত্বরত শিক্ষিকা মল্লিকা রায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুজনে মল্লিকা রায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এরপর তাঁরা হল থেকে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পরীক্ষার হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বিক্ষোভের খবর পেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী ও অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল হোসাইন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর দুপুর সোয়া ১২টায় আবার পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে।
অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মল্লিকা রায় বলেন, ‘পরীক্ষাকেন্দ্রে দুই শিক্ষার্থী কথা বলছিল। কথা বলতে নিষেধ করলে তারা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যায়। পরে তারা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’
অবশ্য শিক্ষিকার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেননি মনছুর আলম। আর এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জ্যোতি প্রকাশ দত্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা একটার দিকে অর্থনীতি বিভাগের পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা। বেলা দুইটার দিকে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসেন মোহাম্মদ আরিফ। এ সময় ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে তাঁকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিবৃত্ত করতে প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী, হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে আরিফকে পুলিশি প্রহরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সেখানে গেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা সাইফুল ইসলামও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হেনস্তার শিকার হন। নেতা-কর্মীরা তাঁকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন এবং হুমকি দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি পুলিশকেও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিককে হুমকি প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে যারা বাধা প্রদান করেছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোহাম্মদ আরিফকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, আরিফ শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে তাঁর উপস্থিতির খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন। এ সময় শিবিরের নেতাকে যাঁরা বাঁচাতে চেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে।