শিক্ষা সময়কে জয় হাতিয়ার। এই হাতিয়ার অধিক কার্যকর হয় দেশের বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী ও নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম এসএসসি ২০১৮ সালের পরীক্ষা থেকে চারটি বিষয় বাদ দেয়া হচ্ছে এবং এই চারটি বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করবে। একজন অভিভাবক হিসেবে খুবই দুঃখের সাথে মাননীয় কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন রাখছি তাদের এই পরামর্শ কতটুকু যুক্তিযুক্ত? তারা আামাদের মতো মানুষের কথা কখনো ভাবেন বলে মনে হয় না। তারা সব সময় এক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় রাখেন।
মাননীয় কর্তৃপক্ষের নিকট আমার চারটি জিজ্ঞাসা- ১) এই বিশেষজ্ঞদের কোন সন্তান এই দেশে পড়াশোনা করে কিনা? ২) তাদের সন্তানদের সার্বজনীন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কতটুকু? ৩) বিশেষজ্ঞরা এবং তাদের সন্তানরা ভিআইপি লাউঞ্জে বসে খেলা দেখেন, হাত তালি দেন, বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনী দেখেন, মন্তব্য লিখে রাখেন কিন্তু তাদের সন্তানদের কখনো এই কজে উৎসাহিত করেন কিনা? ৪) কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পৃথক বিষয়। ছাত্রছাত্রীরা আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে। অথচ শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান একটি সমন্বিত বিষয় এবং ছাত্রছাত্রীরা একসাথে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাহলে শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়কে কেন বাদ দেয়া হবে? ক্ষমতা বা পদ থাকলে সবাই জি স্যার, ইয়েস স্যার বলে কিন্তু ক্ষমতা বা পদ না থাকলে কেউ জিজ্ঞাসাও করে না। এমনিতেই দিন দিন ছাত্ররা শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা অবজ্ঞা দেখাচ্ছে তার উপরে যদি বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়টি না থাকে, এই বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষা না হয়, তাহলে তো ছাত্ররা শিক্ষকে চিনবেই না। এখনো আমাদের সমাজে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যদা নেই।
শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। যে সব গুণ থাকলে দেশের প্রতিটি নাগরিক সুস্থ, সবল, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠে এবং নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়, শারীরিক শিক্ষা সেইসব গুণাবলি অর্জনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখে। নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও শারীরিক শিক্ষার অবদান অসামান্য। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা যায় না। এক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সুস্থ দেহে সুন্দর মন গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জানা মতে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানকে ভিন্ন ভিন্ন নামে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়। শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সমাজ উন্নয়নে সার্বিক ভূমিকা রাখে। বিষয়টি আজকের দিনে চাহিদা পূরণে সক্ষম। ‘ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই দেহ মন, ক্রীড়াতে বিশ্ব জয়। সুস্থ দেহে সুন্দর মন।’ এছাড়া শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীর নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, চেতনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিবোধ, দেশপ্রেমবোধ, প্রকৃতি-চেতনা এবং ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার প্রতি সমমর্যাদাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করে। শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়টি মূলত সুস্থ দেহে সুন্দর মন এই জীবন দর্শনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। দেশ-বিদেশের বিচিত্র খেলাধুলার চর্চার ভিতর দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নিজেকে কর্মক্ষম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়।
মাননীয় মন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের নিকট বিনীত অনুরোধ আপনরা দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে এবং সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে সবসময়ই এসএসসি (পাবলিক পরীক্ষায়) পর্যন্ত চালু রেখে পরবর্তীতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে চালু করে এইচএসসি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করবেন। এই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
সুধীর বরণ মাঝি, হাইমচর-চাঁদপুর।