গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়া ময়মনসিংহের ৫১১ জন শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। মামলার কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত এই কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা দুই বছর ধরে হচ্ছে না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরের ইনস্টিটিউট অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোনো না কোনো বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিক হিসেবে কর্মরত। তাঁরা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু ওই সনদ বাতিল ঘোষণা করে সরকার। এ কারণে নতুন বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি তাঁরা। গ্রন্থাগারিকদের অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠানের সনদ জমা দিতে তিন বছর সময় দেওয়া হয়। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁরা যথাসময়ে সনদ জমা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. এজাহার আলী বলেন, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে চাকরি শুরু করেন। নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তনের সময় স্কুল থেকে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ছাড়া তিনি নতুন কাঠামোতে বেতন পাবেন না। এরপর তিনি ময়মনসিংহ শহরের ইনস্টিটিউট অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় সনদ পাননি। এর ফলে আজও তিনি পুরোনো কাঠামোতেই বেতন পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ না পাওয়ায় তাঁদের চাকরিই এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
ইনস্টিটিউট অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ২০০৩ সাল থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান কোর্সে চালু হয়। তবে নিজস্ব ভবন না থাকায় মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠদান চলে। প্রতিবছর জুলাই থেকে এক বছর মেয়াদি এ কোর্স শুরু হয়। এক বছর পর চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রতিবছরই কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে আসছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে তারা আর পরীক্ষা নিচ্ছে না। এ কারণে কোর্স সমাপ্ত করেও কোনো লাভ হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।
ইনস্টিটিউট অব লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স, ময়মনসিংহের অধ্যক্ষ মো. আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমরা নিয়মিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করছি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তি করে কবে পরীক্ষা হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, বগুড়ার একটি কলেজে পরিচালিত এই কোর্সের কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই কলেজের কোর্সটি বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদে ওই কলেজের পক্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও ওই কলেজের বিরুদ্ধেও পাল্টা মামলা করা হয়েছে। এ অবস্থায় সারা দেশে এই কোর্সের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদিউজ্জামান বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউটগুলোর প্রধানদের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৃহস্পতিবার (আজ) বৈঠক হবে। এতে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা আটকে থাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’