ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ ছাত্রকে একটি কক্ষে দরজা আটকে রড ও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে বাঘমারা ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
আহত পাঁচজনকে গতকাল রবিবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাদের সম্মতি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করায় কর্মীদের ওপর এ নির্যাতন করা হয়েছে।
নির্যাতিতরা হলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র কুদরতে খোদা স্বপন, সুমন হোসেন, হাফিজুর রহমান, মোহিদুল ইসলাম ও ওয়াকিল হাসান। আহতরা জানান, কেন্দ্রের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় তাঁরা দলীয়ভাবে গত শুক্রবার কলেজ ছাত্রাবাসে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করার উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে তাঁরা কলেজে (প্রায় এক মাস আগে গঠিত) কলেজ কমিটির সভাপতি আতিকুর রহমান তুষারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এ সময় সভাপতি জানান, তিনি বাইরে আছেন।
এখন এ অনুষ্ঠানের দরকার নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাদ মাগরিব ছাত্রাবাসের মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। তা ভালোভাবেই শেষ হয়। তাঁরা চারজন ছাত্রাবাসের ২০২ নম্বর কক্ষে থাকেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সহপাঠী মোমিন, আবু বকর ও এম এ জলিল তাঁদের কক্ষে আসেন। চারজনকে ২০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ছাত্রলীগ সভাপতি, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মেহেদী হাসান কবীর, সহসভাপতি শংকর দত্ত, যুগ্ম সম্পাদক নৃপেন্দ্র দীপু প্রমুখ অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পর অন্য কক্ষ থেকে ওয়াকিলকে আনা হয়।
আহতরা অভিযোগ করেন, নেতারা চারজনের হাত বাঁধেন। শুরুতে তাঁদের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এরপর রড ও স্টাম্প দিয়ে তাঁদের পেটান। আঘাত যাতে সহজে বোঝা না যায়, এ জন্য তাদের মাসলে (পেশি) আঘাত করা হয়। ছাত্রলীগ সভাপতি ও ডা. কবীর সবচেয়ে বেশি মারধর করেন। মারধরের সময় তাঁরা কেন অনুমতি ছাড়া মিলাদের আয়োজন করল তা জানতে চান নেতারা। নেতারা বলেন, ‘তোদের চুরির মামলায় জেলে ঢুকাব। ’
এদিকে ঘটনা পুরো ছাত্রাবাসে জানাজানি হলে রাত ৩টার দিকে ওই কক্ষে আসেন হল সুপার ডা. আবুল হোসেন। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের ওই কক্ষ থেকে উদ্ধার করতে পারেননি। ডা. কবীর হল সুপারকে নানান কথা বলে বিদায় করে দেন। এরপর ভোর ৪টার দিকে হল সুপারের কাছ থেকে এ খবর পান কলেজ অধ্যক্ষ। তিনি এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন। আহত কুদরতে খোদা স্বপনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নির্যাতনের শিকার অন্য চারজনও হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।
কুদরতে খোদা স্বপন বলেন, ‘নবগঠিত কমিটির নেতাদের সম্মতি ছাড়া মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করায় আমাদের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা হয়েছে। আমাদের হাত বেঁধে রড ও স্টাম্প দিয়ে মারা হয়েছে। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করব। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব। ’
গতকাল রোববার বিকেলে হাসপাতালের চারতলায় স্টুডেন্ট কেবিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্যাতিত পাঁচজন ভর্তি আছেন। সহপাঠীরা তাঁদের দেখতে আসছেন। এ সময় অনেকে ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মেহেদী হাসান কবীর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। সিনিয়র হিসেবে ছেলেদের বিরোধ মেটানোর জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। ’
ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান তুষার বলেন, ‘ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত না মেনে কেউ কেউ আলাদাভাবে কর্মসূচি করেন। এতে আবার বাইরের লোকজনও আসে। এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছুটা ক্লেশ ও বিবাদ হয়েছে। তবে সেটি বড় কিছু না। ’
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শংকর নারায়ণ বলেন, ‘ঘটনা কিছু একটা ঘটেছে। আমিই ছাত্রাবাসে গিয়ে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করাই। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। ’